বারাসত
বারাসাত (ইংরেজি: Barasat) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সদর শহর ও পৌরসভা এলাকা। বারাসাত থানা এবং বারাসাত পৌরসভা এই অঞ্চল পরিচালনা করে।
বারাসত | |
---|---|
শহর | |
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৪৩′ উত্তর ৮৮°২৯′ পূর্ব / ২২.৭২° উত্তর ৮৮.৪৮° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ![]() |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | উত্তর চব্বিশ পরগণা |
অঞ্চল | বৃহত্তর কলকাতা |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | বারাসত পৌরসভা[১] |
• চেয়ারম্যান | সুনীল মুখোপাধ্যায়[২] |
আয়তন | |
• মোট | ৩১.৬ বর্গকিমি (১২.২ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১১ মিটার (৩৬ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২,৭৮,২৩৫ |
• জনঘনত্ব | ৮,৮০০/বর্গকিমি (২৩,০০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৭০০১২৪, ৭০০১২৫, ৭০০১২৬, ৭০০১২৭ |
টেলিফোন কোড | +৯১ (০) ৩৩ |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লিউবি ২৫, ডব্লিউবি ২৬ |
ওয়েবসাইট | north24parganas |
ভূগোলসম্পাদনা
বারাসাত শহর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পূর্বদিকে ২২°২৩′ উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮°৪৫′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরের উচ্চতা ৪.৫ মিটার (১৫ ফু) থেকে ৫.৫ মিটার (১৮ ফু) মিটারের মধ্যে।[৩] শহরটি শিয়ালদহ-বনগাঁ রেলপথের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব পাশ বরাবর বিস্তৃত।
সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির বেশিরভাগ এলাকার মতো, বারাসতের মাটি মূলত পলিজ প্রকৃতির। শহরের মাটির তলায় কাদা, পলি, বিভিন্ন ক্রমের বালি ও নুড়ি নিয়ে গঠিত কোয়্যাটারনারি যুগের পললস্তর দেখা যায়। পললস্তরগুলি দুটির কাদার স্তরের মধ্যে বদ্ধ রয়েছে।
নগরাঞ্চলের গঠনসম্পাদনা
বারাসাতের আয়তন ৩১.৬ কিমি২ (১২.২০ মা২)। বারাসাত পৌরসংস্থা ৩৫ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। পৌর এলাকাটি আকার গোলাকৃতি। শহরটি উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে মোটামুটি ৪.৫–৫ কিলোমিটার প্রস্থ। [৬১] শহরটি পূর্ব অংশে কাজিপাড়া, উত্তর অংশে নোয়াপাড়া, পশ্চিম অংশে নবপল্লি ও হৃদয়পুর এবং দক্ষিণ অংশে সুকান্তনগর অবস্থিত।
ইতিহাসসম্পাদনা
শক্তিশালী মুঘল সাম্রাজ্যের রাজত্বকালে, রাম সুন্দর মিত্র বারাসত শহরে লামিনার পেয়েছিলেন। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের সেনাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী ১৬০০ সালে বারাসত এসে বারাসত শহরের প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম সাধু হযরত একদিল শাহ ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে বারাসাতের কাজিপাড়ায় বসবাস শুরু করেন। কাজিপাড়ায় অবস্থিত তাঁর সমাধিটি মুসলিম সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান। ব্রিটিশ রাজের সময়, কোম্পানির আধিকারিকরা বারাসতকে সপ্তাহান্তের অবসর যাপনের স্থান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁরা বারাসাত শহরের বিভিন্ন জায়গায় অনেক বাগান বাড়ি তৈরি করেছিলন। ওয়ারেন হেস্টিংস বারাসাত শহরের প্রাণকেন্দ্রে তাঁর ভিলা তৈরি করেন। খ্যাতিমান লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এই শহরের প্রথম ভারতীয় উপ-ম্যাজিস্ট্রেট। শহরের আশেপাশে নীলচাষ একটি বড় ব্যবসায় পরিণত হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, প্রথমবারের মতো ইউরোপ থেকে ভারতে আগত নতুন নিয়োগকারী ও ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের জন্য বারাসাতে বারাসত ক্যাডেট কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটি ১৮১১ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
বারাসাত ১৮৩৪ সাল থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত "বারাসত জেলা" নামে পরিচিত একটি যুগ্ম-ম্যাজিস্ট্রেটের আসন ছিল। ১৮৬১ সালে যৌথ ম্যাজিস্ট্রেটের বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং বারাসাত শহর সহ বারাসাত জেলাটি চব্বিশ পরগনা জেলার একটি মহকুমায় পরিণত হয়। বারাসত পৌরসভা ১৮৬৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে ১৮৮২ সাল পর্যন্ত স্বাধীন ভাবে এর কোনও অস্তিত্ব ছিল না।
জনসংখ্যাসম্পাদনা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বারাসাত শহরের জনসংখ্যা হল ২,৮৩,৪৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫১%, এবং নারী ৪৯%।
এখানে সাক্ষরতার হার ৭৭%, পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮১% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭৩%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে বারাসত এর সাক্ষরতার হার বেশি।
এই শহরের জনসংখ্যার ১০% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
শিক্ষাসম্পাদনা
বারাসাতের স্কুলগুলোকে সরকারী ও বেসরকারী এই দু ভাগে ভাগ করা যায়। স্কুলগুলোর শিক্ষণের ভাষা মূলত ইংরেজি কিংবা বাংলা। সব স্কুল ভারতীয় মাধ্যমিক শিক্ষা সার্টিফিকেট (ICSE), কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড(CBSE) অথবা পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড(WBBSE) ও পশ্চিমবঙ্গ ঊচচমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (WBCHSE)বোর্ডের সাথে জড়িত। সম্প্রতি বারাসাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ওয়েষ্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছেন ২০০৮ সালে। বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রায় সব মহাবিদ্যালয় গুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিনে পঠিত হয়। এছাড়া বারাসাত গভার্নমেন্ট কলেজ এর ও যথেষ্ট সুনাম আছে। এছাড়া এখানে ৪ টি প্রকৌশল শিক্ষার মহাবিদ্যালয় অাছে। বারাসাতের নিকট বড়বড়িয়াতে একটি বেসরকারি এডামাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখানে, প্রযুক্তি, ম্যানেজমেন্ট, আইন ইত্যাদির পাঠদান করা হয়।
স্বাস্থ্য পরিষেবাসম্পাদনা
বারাসাত ক্যানসার রিসার্স এন্ড ওয়েলফেয়ার নামে একটি জাতীয় ক্যানসার হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া একটি সরকারি হাসপাতাল (বারাসত জেলা সদর হাসপাতাল) ও অনেকগুলি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে।
যোগাযোগের ব্যবস্থাসম্পাদনা
সড়কপথসম্পাদনা
বারাসাত পেট্রাপোল (বাংলাদেশ সীমান্ত) থেকে ৫৭ কি মি দুরে অবস্থিত । বারাসত শহর দিয়ে দুটি জাতীয় সড়ক এর মিলনস্থানে। যার মধ্যে একটি হল যশোহর রোড় ( জাতীয় সড়ক নং-১১২)। এই রাস্তা দমদম থেকে যশোহর পর্যন্ত যায় এবং ভারত বাঙ্লাদেশ বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর একটি হল কৃষ্ণনগর রোড় (জাতীয় সড়ক নং-১২)। এই সড়ক কলকাতা ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ রখ্যা করে। এছাড়া টাকি রোড় (বেড়াচাঁপা, বসিরহাট, হাসনাবাদ হয়ে টাকি যায়) ও ব্যারাকপুর রোড়(সুভাষনগর, নীলগঞ্জ বাজার দিয়ে ব্যারাকপুর যায়) বারাসত এর সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী দুটি মূল রাস্তা। বারাসত থেকে দুটি অার্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে ঢাকা; (বাংলাদেশ) এবং থিম্পু (ভুটান) তে; বাস যাতায়াত করে। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বালুরঘাট, জঙ্গীপুর, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, দীঘা তেও বাস যায়। তিতুমীর বাস টারমিনাল বা চাপাঁডালী বাস টারমিনাল হল এখানকার এক মাত্র বাস টার্মিনাল। এখান থেকে দমদম, উল্টোডাঙা, কেষ্টপুর, বাবুঘাট, সল্টলেক, কৃষ্ণনগর, হাবড়া, বারাকপুর, নৈহাটি, অশোকনগর, বনগাঁ এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য যায়গায় বাস যায়।
রেলপথসম্পাদনা
এই শহরে তিনটি স্টেশন-বারাসাত জংশন, হৃদয়পুর (বনগাঁ লাইন), কাজীপাড়া (হাসনাবাদ লাইন)। এই স্টেশন গুলি পুর্ব রেলওয়ে শিয়ালদহ মন্ডলে অন্তর্ভুক্ত। এখান থেকে শিয়ালদাহ স্টেশন ২৩ কি মি। বারাসত জংশন স্টেশন থেকে একটি লাইন যায় বনগাঁ জংশন-এ। আর একটি লাইন হাসনাবাদ যায় চাপাঁপুকুর, বসিরহাট,টাকি হয়ে। কলকাতা মেট্রোর বারাসত পর্যন্ত সম্প্রসারণ এর কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং কয়েক বছর এর মধ্যে এই লাইন এ ট্রেন চলাচল সুরু হবে।
আকাশপথসম্পাদনা
এখান থেকে নিকটতম বিমানবন্দর হল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা দমদম বিমানবন্দর। এখান থেকে ১১ কি মি দুরে অবস্থিত।
ভগিনী শহরসম্পাদনা
ভগিনী শহর | রাষ্ট্র |
---|---|
যশোর | বাংলাদেশ |
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Barasat Municipality"। ১২ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ Official District Administration site ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে
- ↑ "Barasat"। Falling Rain Genomics, Inc (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০০৬।