বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদ্রাসা

বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদ্রাসা সিলেট জেলার জাকিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী পূর্ণকারী একটি দ্বীনী প্রতিষ্ঠান ও আলিয়া মাদ্রাসা।[১][২] মাদ্রাসাটি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো,[৩] এবং বর্তমানে ডিগ্রি ও সন্মান শ্রেণীর জন্য আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মাদ্রাসা।[৪][৫] মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষের নাম মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম।

বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদ্রাসা, সিলেট
ধরনএমপিও ভুক্ত
স্থাপিত১ জানুয়ারি ১৯২০; ১০৪ বছর আগে (1920-01-01)
প্রতিষ্ঠাতামাওলানা ফাতির আলী
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি
অধ্যক্ষমাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম
মাধ্যমিক অন্তর্ভুক্তিবাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড
শিক্ষার্থীআনু. ৯০০ জন
ঠিকানা
বাদেদেওরাইল
, , ,
শিক্ষাঙ্গনগ্রাম্য
ইআইআইএন সংখ্যা১৩০৫২৫
এমপিও সংখ্যা১৫১১০৪২৪০২
ওয়েবসাইটhttp://130525.ebmeb.gov.bd/

অবস্থান সম্পাদনা

বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব সীমান্তে, সুরমা-কুশিয়ারার বাহুডোরে আবদ্ধ জকিগঞ্জ উপজেলার বাদেদেওরাইল গ্রামে মাদ্রাসাটি অবস্থিত।

ইতিহাস সম্পাদনা

এই মাদ্রাসাটির যাত্রা শুরু হয়েছিল বুযুর্গ শাহ আলা বখশের উত্তরসূরী মাওলানা ফাতির আলী উদ্যোগে। শুরুতে মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষাদান কর্মসূচির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মাওলানা ফাতির আলী। পরবর্তীতে মসজিদ থেকে আলাদা করে বাদেদেওরাইল নামক স্থানে মাদরাসার গৃহ নির্মাণ করা হয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায়। আসদ্দর আলী চৌধুরী, আজব আলী চৌধুরী, আকদ্দছ আলী চৌধুরী, ছাখায়ত আলী চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী এবং একই গ্রামের খুরশিদ আলী চৌধুরীর দানকৃত জমির উপর এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর মাদরাসা ক্যাম্পাস বর্ধিত করণে জমি দান করেন আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী এবং এই মাদ্রাসার অগ্রগতির পিছনের তার বিশাল প্রচেষ্টা রয়েছে।[৬]

এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ভালো বেশ সুনাম অর্জন করলেও কিছুদিন পরে মাদ্রাসার অগ্রগতি ব্যহত হয় এবং সম্ভবত মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে আল্লামা ফুলতলী বদরপুর (আসাম) থেকে গ্রামের বাড়ি ফুলতলীতে ফিরে আসেন। পুনরায় তার উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় মাদরাসা নতুন করে যাত্রা শুরু করে। মাদরাসার সভাপতি বা মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৫৯ সালে মাদরাসাটি দাখিল স্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৫ সালে কাল বৈশাখী ঝড়ে মাদরাসা গৃহ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। আল্লামা ফুলতলীর উদ্যোগে মাদ্রাসাটি পুনপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। ফুলতলীর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরী মাওলানা মো. নজমুদ্দীন চৌধুরীকে মাদরাসার মুহতামিমের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়।

১৯৭৭ সালে মাদরাসাটি আলিম স্তরে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে মাদরাসাটি ১৯৮৯ সালে ফাযিল, ১৯৯৪ সালে কামিল (হাদীস) ও ২০০১ সালে কামিল (তাফসীর) স্তরে স্বীকৃতি লাভ করে। মাদরাসার দাখিল ও আলিম যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি’র সমমান হলেও ২০০৬ এর আগে ফাযিল ও কামিল ডিগ্রি ও মাস্টার্সের সমমানের ছিল না। ২০০৫ সাল থেকে সারাদেশে মাদরাসার ফাযিল ও কামিলকে যথাক্রমে ডিগ্রি ও মাস্টার্সের মান প্রদানের দাবি জোরদার হয়। এ লক্ষে স্বতন্ত্র আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনও সক্রিয় হয়ে উঠে। আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৬ সালে আব্দুল লতিফ ফুলতলী সিলেট থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেন। বৃহত্তর আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার সে বছরই মাদরাসার ফাযিল ও কামিল স্তরকে যথাক্রমে বি.এ ও এম.এ সমমানে উন্নীত করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের অধীনে ন্যস্ত করে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সারা দেশে ফুলতলী মাদরাসায় সহ ৩১টি মাদরাসায় ৪ বছর মেয়াদি ফাযিল অনার্স কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল এম.এ মাদরাসা ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’ এর অধিভুক্ত ইসলামী শিক্ষাধারার সর্বোচ্চ স্তরের একটি মাদরাসা।[৭]

শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনা

এ প্রতিষ্ঠানে দাখিল থেকে কামিল স্তরের পাশাপাশি আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে ফাযিল বি.এ (অনার্স) ও কামিল (মাস্টার্স) কোর্স চালু রয়েছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী দ্বীনী শিক্ষা অর্জন করছে।

প্রোগ্রাম ও অনুষ্ঠান সম্পাদনা

মাদ্রাসাটিতে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষা সচেতনতা অনুষ্ঠান, বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে।

ক্রীড়া অনুষ্ঠান সম্পাদনা

এই মাদ্রাসাইয় প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের মাঝে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে এরপর বিজয়ী ছাত্রদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এইসকল অনুষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে মাদ্রাসা স্কাউট দল।

শতবর্ষী অনুষ্ঠান সম্পাদনা

ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসা ব্যপক আয়োজন করে শতবর্ষী অনুষ্ঠান আয়োজন করে এবং একটি স্মারক প্রকাশনা সম্পন্ন করা হয়েছে। স্মারকে বানী প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, একাধিক মন্ত্রী সহ আরো অনেকে। শর্তবর্ষী অনুষ্টানে অতিথির তালিকায় রয়েছেন, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সাহাব উদ্দিন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ আরও অনেকে। এছাড়াও মিশর, ভারত, পাকিস্তান থেকে উল্লেখযোগ্য শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।[৮]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ সম্পাদনা

  • মাওলানা আবদুল আলিম - মাথিউরা সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল
  • মাওলানা মোস্তাক আহমদ চৌধুরী - চান্দগ্রাম সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. আমীন, ফয়সাল। "সিলেটে বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার শতবর্ষ উদ্‌যাপন ২০ ফেব্রুয়ারি"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০ 
  2. "সিলেটের সেরা দশ, শীর্ষে শাহজালাল জামেয়া কামিল মাদ্রাসা"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০ 
  3. "Badedewrail Fultoli Kamil Madrasah - Sohopathi | সহপাঠী" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০ 
  4. "গভর্নিং বডি – সিলেট – Islamic Arabic University"iau.edu.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০ 
  5. "মাদ্রাসার গভর্নিং বডির বিজ্ঞপ্তি" (পিডিএফ)বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২১ 
  6. "সিলেটে ফুলতলীর পীরের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত"Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০ 
  7. "বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদ্রাসা, শতবর্ষের জ্ঞানের বাতিঘর"SurmaNews24.net। ২০২০-০২-১৯। ২০২১-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০ 
  8. "ফুলতলী মাদ্রাসার শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান"মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০