বাংলাদেশ বার কাউন্সিল
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বাংলাদেশের আইন অনুশীলনকারী আইনজীবীদের জন্যে ১৯৭২ সালের 'বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল আদেশ' এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা।[১][২] এটি বাংলাদেশের আইনজীবীদের আইন পেশা অনুশীলনের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। এটি আইনজীবী তৈরির কারখানাও হিসেবেও পরিচিত।[৩]
ধরন | সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা |
---|---|
যে অঞ্চলে কাজ করে | বাংলাদেশ |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা এবং ইংরেজি মাধ্যম |
সভাপতি | বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল |
ওয়েবসাইট | barcouncil |
কার্যক্রম
সম্পাদনাআইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ তদন্ত ও বিচারের জন্য বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৯ সালে এই জাতীয় পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল ছিল। একটি ট্রাইব্যুনাল কোনও আইনজীবীকে তিরস্কার বা স্থগিত করতে বা অনুশীলন থেকে সরিয়ে দিতে পারে। এটি ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ৩৭৮টি অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেছে। এসব অভিযোগে ৯ জন আইনজীবী তাদের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে হারিয়েছেন এবং ৬ জনকে সীমিত সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। [৪]
কমিটি
সম্পাদনাবার কাউন্সিলের কয়েকটি স্থায়ী কমিটি রয়েছে। এরমধ্যে
- নির্বাহী কমিটি - প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত।
- পরীক্ষা পরিচালনা ও নিবন্ধন কমিটি - আইনজীবীদের সদস্যভুক্ত করার জন্য পরীক্ষা গ্রহণ করে।
- ফাইন্যান্স কমিটি - কাউন্সিলের তহবিল নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত।
- আইনি শিক্ষা কমিটি- আইনজীবীদের আইনগত শিক্ষার মান নির্ধারণ করে থাকে।
- অন্যান্য কমিটি - বার কাউন্সিলের সদস্য সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন সময়ে কর্মসূচি পরিচালনার জন্যে তৈরি কমিটি।[৫]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল গঠিত হয়। এর সদস্য সংখ্যা রাখা হয় ১৫ জন। প্রতিটি কমিটির মেয়াদ থাকে ৩ বছর। এরমধ্যে পদাধিকারবলে বার কাউন্সিলের সভাপতি থাকেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল। বাকি ১৪ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জন আইনজীবীদের মধ্য থেকে তাদের ভোটে নির্বাচিত, বাকি ৭ জন প্রতিটি গ্রপ থেকে একজন করে ৭টি গ্রুপে বিভক্ত স্থানীয় আইনজীবী সমিতিগুলির সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হন। বার কাউন্সিলের সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করে। বার কাউন্সিল ‘বাংলাদেশ আইনি সিদ্ধান্ত’ নামে একটি আইনি জার্নাল প্রকাশ করে। [৬]
গঠনপূর্ব পটভূমি
সম্পাদনা১৭৭৪ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োগকৃত অ্যাটর্নিদের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব লেটার্স প্যাটেন্টের ১১ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতের ওপরই ন্যস্ত হয়। ১৭৯৩ সালের ৭ নং প্রবিধান অনুযায়ী সদর দেওয়ানি আদালতে ও অধস্তন কোম্পানি আদালতগুলিতে আইনপেশায় নিয়োজিত উকিলদের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করতো সুপ্রিম কোর্ট।[৫]
১৮৬২ সালে সদর দেওয়ানি আদালত ও সদর নিজামত আদালত তুলে দিয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে জজিয়তি হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে হাইকোর্ট তার আইনজীবী, অ্যাটর্নি (রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োগকৃত সর্বোচ্চ আইনকর্মকর্তা), উকিল, কৌঁশুলি ও মোক্তারদের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পায়। তখন বেশিরভাগ আইনজীবীরা ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড থেকে ডিগ্রি অর্জন করা ব্যারিস্টার অথবা স্কটল্যান্ডের ফ্যাকাল্টি অফ অ্যাডভোকেট্স-এর সদস্য ছিলেন। [৫]
অ্যাটর্নি জেনারেলদের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দেয়াসহ ওকালতি করতে পারতেন এবং ওই আদালতের আপিল বিভাগ ও অন্যান্য অধস্তন আদালতে ওকালতি করার অনুমতি নিতেন। তবে এ পদ্ধতি বা নিয়ে দেশীয় আইনজীবীরা অধস্তন আদালত ছাড়া হাইকোর্টে মূল বিভাগে কাজ করার তেমন কোনো অধিকার পায়নি। তাই উপমহাদেশে একটি সর্বভারতীয় বার গঠন এবং অ্যাডভোকেট ও উকিলদের মধ্যে পার্থক্য করার জন্যে জোরালো দাবি ওঠে। এ দাবির প্রেক্ষিতে ১৯২৩ সালে ইন্ডিয়ান বার কমিটি গঠন করা হয়। এর সভাপতি ছিলেন স্যার এডওয়ার্ড চ্যামিয়ার। ১৯২৪ সালে ওই কমিটি প্রতিবেদন পেশ করে এবং ইন্ডিয়ান বার কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯২৬ কার্যকর করে। [৫]
ভারতের বার কাউন্সিল অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রথমবারের মতো প্রতিটি হাইকোর্টে যৌথ সংগঠন হিসেবে একটি করে বার কাউন্সিল গঠনের বিধি প্রবর্তন করা হয়। ওইসব কাউন্সিলে ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত প্রতিটি বার কাউন্সিলে অ্যাডভোকেট জেনারেল, হাইকোর্ট কর্তৃক মনোনীত ৪ জন সদস্য এবং হাইকোর্টের অ্যাডভোকেটদের নিজেদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১০ জন সদস্য থাকতেন।
তখন হাইকোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে বার কাউন্সিলকে আইনজীবীদের নিবন্ধন ও তাদের নিয়ন্ত্রণের নিয়মকানুন তৈরি করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে কোনও ব্যক্তিকে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে হাইকোর্ট আপত্তি জানালে তা খর্ব করার অধিকার বার কাউন্সিলের ছিলো না। এ আইনে হাইকোর্টের মূল বিভাগে আইন ব্যবসায়ে আগ্রহী আবেদনকারীদের যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষমতা এবং তাদের গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান এবাং কী কী শর্তে বা পরিস্থিতিতে তারা ওই আদালতের অধীনে আইনব্যবসা করতে পারবেন তার সবটাই নির্ধারণ করতো কলকাতার হাইকোর্ট। [৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Remarkable insight on admission to practice in Bangladesh Bar Council"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "Bangladesh Bar Associations"। hg.org। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "Bar Council penalises 3 lawyers"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "How does the Bar Council Tribunal function"। Daily Star। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "আইনজীবী তৈরির কারখানা 'বাংলাদেশ বার কাউন্সিল'"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Bangladesh Bar Council election held"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৭।