বাংলাদেশের ডাকটিকিট

ডাকটিকেট

বাংলাদেশের ডাকটিকেট প্রথম প্রকাশিত হয়, ১৯৭১ সালের ২৬শে জুলাই, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন অবস্থায়।[১] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি বর্হিবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বিভিন্ন বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশে ডাকটিকিট প্রচলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অধ্যাপক-শিল্পী বিমান মল্লিক বাংলাদেশের প্রথম ৮টি ডাকটিকিটের নকশা করেন।

১৯৭১এ প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম ৮টি ডাকটিকেট

প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশের ইতিহাস সম্পাদনা

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য জন স্টোনহাউসের পরামর্শ অনুযায়ী ১৯৭১-এর এপ্রিলের শেষদিকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ডাকটিকিট প্রকাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সে অনুযায়ী স্টোনহাউস যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি গ্রাফিক শিল্পী অধ্যাপক বিমান মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক প্রস্থ ডাকটিকিটের নকশা তৈরি করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নির্দেশ মতো বিমান মল্লিক ডাকটিকিটের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা, নকশা তৈরির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে নিরাপরাধ বাঙালি জনসাধারণের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অমানুষিক অত্যাচারের কাহিনী শিল্পীর অজ্ঞাত ছিল না। তাই সেই প্রস্তাব ও দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের স্বাধিকার সংগ্রামে সাধ্যমতো সাহায্যদানের সুযোগটি গ্রহণ করেন। বিমান মল্লিক অধ্যাপনার কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে আটটি ডাকটিকিটের নকশা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এক স্মৃতিচারণে বলেছেন, 'এই ডাকটিকিট প্রকাশের ফলে মুজিবনগর সরকার যে বাংলাদেশ পরিচালনা করছে, এই ধারণা বিদেশে সমর্থন লাভ করে।'

ডাকটিকিটের একটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল, অন্য একটিতে ছিল ব্যালটবাক্স। ব্যালটবাক্স গণতন্ত্রের প্রতীক। আরেকটি ছিল শিকল ভাঙার ছবি। এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে বাংলাদেশ পাকিস্তানের পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়েছে। একটি টিকিটে ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, আরেকটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যার চিত্র[২]। ১৯৭১-এর ২৯শে জুলাই বাংলাদেশের প্রথম ৮টি ডাকটিকিট ও ফাস্ট ডে কাভার বিভিন্ন দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ উপলক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আটটি ডাকটিকিট বিশিষ্ট্য প্রতি সেটের মূল্য ছিল ২১ টাকা ৮০ পয়সা।

প্রথম আটটি ডাকটিকিটের মূল্য সম্পাদনা

  • ১০ পয়সা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান।
  • ২০ পয়সা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ড।
  • ৫০ পয়সা সাড়ে সাত কোটি মানুষ।
  • ১ টাকা বাংলাদেশের পতাকা
  • ২ টাকা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফল।
  • ৩ টাকা ১০ এপ্রিল ১৯৭১ এ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা।
  • ৫ টাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
  • ১০ টাকা বাংলাদেশকে সমর্থন করুন।

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পরবর্তী ডাকটিকেট সম্পাদনা

  • ১৯৭২ সালের বিজয় দিবসে প্রকাশিত ডাকটিকিটের ডিজাইনার ছিলেন কে. জি. মুস্তফা।
  • ১৯৭২ সালের স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত প্রতীক ছিল সংগ্রামের প্রতীক হিসাবে আগুনের ফুলকি, যার ডিজাইনার নিতুন কুন্ডু
  • সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে প্রথম ডাকটিকেট প্রকাশিত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮২; ডিজাইনার ছিলেন আহমেদ এফ করিম।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ডাকটিকিট[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], প্রথম আলো পত্রিকা, লেখক: এ টি এম আনোয়ারুল কাদির, প্রকাশিত হয়েছে: ২৬-০৩-২০১২।
  2. বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], প্রথম আলো পত্রিকা, প্রকাশিত হয়েছে: ১০-১০-২০০৯।
  3. বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকেট, techzoom24.com.