বহুওয়া নৃত্য অসমের সোণোওয়াল কছারী জনজাতির এক ধৰ্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ডিব্রুগড় জেলার বৃহৎ জামিবা অঞ্চলের ধমল গ্রামে বসবাসকারী সোণোওয়াল কছারী জনজাতির মধ্যে এই নাচের প্রচলন রয়েছে। প্ৰতি দুবছর অন্তর তারা এই নৃত্যের আয়োজন করেন।

বহুৱা নৃত্য, দেওয়াল অঙ্কন যোগে প্ৰদৰ্শন করা হয়েছে

জড়িত পৌরাণিক আখ্যান সম্পাদনা

পৌরাণিক উপাখ্যান মতে দক্ষ মহারাজের কন্যা সতী তার আদেশ অমান্য করে ভগৱান শিবকে বিবাহ করলে দক্ষরাজ ক্রুদ্ধ হন। এর শোধ তোলবার জন্য দক্ষ এক মহাযজ্ঞৰ আয়োজন করেন যেখানে শিবসতী ব্যতিরেকে সকল দেবতাক নিমন্ত্ৰণ জানালে সতী সেই যজ্ঞের অনুষ্ঠানে যান। সতীকে দেখে দক্ষ শিব সম্পর্কে কুকথা উচ্চারন করেন। স্বামীর নামে নিন্দাবাক্য শুনে সতী নিজের প্ৰাণ বিসৰ্জন দেন। সতীর মৃত্যুসংবাদ কথা শুনে শিব ক্রুদ্ধ হয়ে নিজের জটার চুল ছিড়ে বীরভদ্ৰ ও রুদ্ৰকালি নামৰ দুই অসুরের সৃষ্টি করে দক্ষকে বধ করার আদেশ করেন। তার আদেশে বীরভদ্ৰ যজ্ঞস্থলে গিয়ে রাজা দক্ষের শিরোচ্ছেদ করে তার মস্তক যজ্ঞএর অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন। এই ঘটনায় যজ্ঞ মাঝপথেঅসমাপ্ত অবস্থায় শেষ হওয়ায় উপস্থিত দেবতারা চিন্তিত হয়ে দক্ষকে পুনরায় জীবন্ত করে যজ্ঞ সম্পূৰ্ণ করবার জন্য ব্ৰহ্মাকে নিবেদন করেন। ব্ৰহ্মা এই কথা শুনে দক্ষের পুণর্জীবনদানের জন্য শিবকে অনুরোধ করেন। ব্ৰহ্মার অনুরোধে শিব দক্ষকে নতুন জীবনদান দেন কিন্তু দক্ষের মস্তক যজ্ঞের আগুনে ভস্মীভূত হওয়ায় তার জায়গায় একটি ছাগলের মাথা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেন।[১]সোণোওয়াল কছারী জনজাতির উপাস্য দেবতা শিবকে সন্তুষ্ট রেখে সামাজিক অমঙ্গল দূর করতে এই পৌরাণিক কাহিনীকে বহুওয়া নৃত্যে প্ৰদৰ্শন করা হয়।

বেশ-ভূষা এবং প্ৰদৰ্শন রীতি সম্পাদনা

 
কলাগাছের পাতা দিয়ে সজ্জিত নৃত্যরত বহুওয়া নৃত্যশিল্পী

এই নৃত্য প্ৰদৰ্শন করতে শিল্পীরা মুখ ও দেহ কলাগাছের পাতায় জড়িয়ে নেয়। এই নাচের প্ৰস্তুতিপৰ্বে শিল্পীদের সাজ-সজ্জা করার সময় শুধুমাত্র বয়স্ক মানুষদের প্ৰবেশের অনুমতি থাকে। এই নৃত্য অভিনয় করা শিল্পীদের পরিচয় গোপনে রাখা হয়৷ একজন বহুওয়া সাজ-সজ্জা তৈরী করতে প্ৰায় ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে। এই নৃত্যের বাদ্যযন্ত্র হিসাবে মৃদঙ্গ এবং ব্যবহা্র করা হয়, যার তালে শিল্পীরা একেসাথে নাচ করেন। বহুওয়া নৃত্যের পরে অন্য একটি দল বিহু নৃত্য প্ৰদৰ্শন করে। নাচ শেষ হওয়ার পর সকলে শরীর ধুয়ে একসঙ্গে ভোজন করেন।[২]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. শিব পুরাণ, গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর, উত্তর প্রদেশ
  2. লোক-বৈভব, আকাশবাণী গুওয়াহাটী