বরগুনা হানাদার মুক্ত দিবস

বরগুনা হানাদার মুক্ত দিবস ৩রা ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বরগুনা জেলা হানাদার মুক্ত হয়।[১][২][৩]

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া উপ-সেক্টরের অধীন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে বরগুনার মুক্তিকামী সহস্রাধিক তরুণ বাঁশের লাঠি, গুটি কয়েক রাইফেল, বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে। এরই মধ্যে পাকবাহিনী দুর্বল প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী জেলা দখল করে ফেলে।

ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ ও ক্ষয়-ক্ষতির ভয়ে বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা তখন এলাকা ছেড়ে চলে যান, পাক বাহিনীর মোকাবেলা করার মতো কোন অস্ত্র তাদের ছিলো না। পাক বাহিনী বিনা বাধায় বরগুনা শহর দখল করে ফেলেছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরগুনার বিভিন্ন থানা ও তৎকালীন মহাকুমা সদরে পাক বাহিনী অবস্থান করে পৈশাচিক নারী নির্যাতন ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।

সময়ের ব্যবধানে কয়েক মাসের মধ্যেই বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা শক্তি অর্জন করে মনোবল নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। বরগুনা, বামনা, বদনীখালী ও আমতলীতে যুদ্ধের পরে পাকবাহিনীর সদস্যরা বরগুনা ট্রেজারী ও গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলোয় অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা হেড কোয়ার্টারের নির্দেশ পেয়ে বুকাবুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালেরর ২ ডিসেম্বর বরগুনা বেতাগী থানার বদনীখালী বাজারে আসেন। রাত তিনটার দিকে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকা যোগে বরগুনার খাকদোন নদীর পোটকাখালীতে অবস্থান নেন। সংকেত পেয়ে ভোর রাতে তারা কিনারে উঠে আসেন। তারা দলে ছিলেন মাত্র ২১ জন। যাদের মধ্যে ১০ জন বরগুনার ও বাকী ১১ জন ঝালকাঠির।

যুদ্ধের সময় কারাগার, ওয়াপদা কলোনী, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়ারলেস স্টেশন, এসডিওর বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি উপ-বিভাগে ভাগ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা যে যার অস্ত্র নিয়ে অবস্থান অনুযায়ী শীতের সকালে ফজরের আজানকে যুদ্ধ শুরুর সংকেত হিসেবে ব্যবহার করেন। আজান শুরুর সাথে সাথে ৬টি স্থান থেকে একযোগে ফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় দফা ফায়ার করে তারা জেলখানার দিকে এগোতে থাকেন। চারজন সহযোগীসহ সত্তার খান ছিলেন, কারাগার এলাকায়। তারা এসময় জেলখানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে এসডিও অফিসের সামনে নিয়ে আসেন। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গিয়ে তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনকে আত্মসমর্পণ করান। দুপুর বারোটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনিক দায়িত্ব এসডিওকে সাময়িকভাবে বুঝিয়ে দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বুকাবুনিয়া সাব-সেন্টারে চলে যান।[১][৪][৫]

আমতলী থানাকে আঃ রব,আনছার কমান্ডার আলতাফ হোসেন, পাশা তালুকদার, আফাজ বিশ্বাস, নিজাম উদ্দিন তালুকদার ও আসমত আলী কেরানীর নেতৃত্বে মুক্ত করা হয়। সুবেদার আঃ মোতালেব, মোবারক মল্লিক এবং অন্যান্য কমান্ডাররা সম্মিলিতভাবে বামনা থানাকে মুক্ত করেন। বরগুনা থানা থেকে ২৪ শে নভেম্বর পাক-হানাদার বাহিনী সদলবলে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়।[৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বরগুনা হানাদার মুক্ত দিবস ৩ ডিসেম্বর"একুশে টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০২ 
  2. "বরগুনা হানাদার মুক্ত হয় ৩ ডিসেম্বর"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০২ 
  3. "বরগুনায় হানাদার মুক্ত দিবস উদ্‌যাপন"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০২ 
  4. "বরগুনায় ৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০২ 
  5. "আজ বরগুনা ও কোটালীপাড়া হানাদার মুক্ত দিবস"Jugantor। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০২ 
  6. "বরগুনা জেলা"। ২০১৯-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০২