বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র

বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র বা বনমালী ইন্সটিটিউট পাবনা জেলায় অবস্থিত একটি সংস্কৃতি ও শিল্পকলা চর্চার প্রতিষ্ঠান।

বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র
প্রতিষ্ঠাতা(গণ)রায়বাহাদুর ক্ষিতিশ ভূষণ রায় ও রায়বাহাদুর রাধিকা ভূষণ রায
প্রতিষ্ঠিত৫ মার্চ ১৯২৪; ১০০ বছর আগে (5 March 1924)
প্রাক্তন নামবনমালী রঙ্গমঞ্চ
অবস্থান
অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরীর পাশে
,
পাবনা
,
এ হামিদ রোড
,
বাংলাদেশ

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সম্পাদনা

পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে সংস্কৃতি চর্চার ৯৭ বছরের পুরনো বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র। তাড়াশের খ্যাতনামা জমিদার রায়বাহাদুর বনমালী রায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে পাবনা শহরে ১৯২৪ সালের ৫ মার্চ এর গোড়াপত্তন হয়। রায়বাহাদুর বনমালীর দু’ছেলে - রায়বাহাদুর ক্ষিতিশ ভূষণ রায় ও রায়বাহাদুর রাধিকা ভূষণ রায়ের দানকৃত ৩৯ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা হয় বনমালী ইনস্টিটিউট। যার বর্তমান নাম বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র[১][২][৩]


ইতিহাস সম্পাদনা

তাড়াশ জমিদার-বংশের রায় বাহাদুর বনমালী রায়ের সন্তানদ্বয় রায় বাহাদুর ক্ষিতীশভূষণ রায় ও রায় বাহাদুর রাধিকাভূষণ রায় বাবার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জমি এবং অর্থ প্রদান করেন। ১৯২৪ সালের ৫ এপ্রিল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। একসময় 'সীতা নাটক' অভিনয় করতে কলকাতা থেকে এখানে এসেছিলেন ছবি বিশ্বাস, রবি রায়, মমতা ব্যানার্জী প্রমুখ অভিনয়শিল্পী। কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনও বনমালী হলে অনুষ্ঠান করেছেন। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের ডামাডোলে এ ইনস্টিউটের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ১৯৬০ সালের পর এটিকে পাবলিক ইনস্টিটিউশনে পরিণত করা হয়। ২০০৮ সালে বনমালী ইনস্টিটিউটের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিপুল টাকা ব্যয় করে এর আধুনিকায়ন করা হয়। ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর বনমালী ইনস্টিটিউটের কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভায় এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র'।[১][২][৩]

সংস্কৃতি সংগঠন সম্পাদনা

সংগীত ও নৃত্য সংগঠনের মধ্যে সক্রিয় তাল-লয় শিল্পীগোষ্ঠী, অনিন্দ্য, গণশিল্পী, উদীচী, ললিত কলা কেন্দ্র ইফা, আফা ইনস্টিটিউট, সুরের মেলা, গন্তব্য, সোনার বাংলা মা একাডেমি, নৃত্যাঞ্চল পাবনা, রবীন্দ্র ও নজরুল পারিষদ, লালন পরিষদ, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বাচন শৈলী ইত্যাদি। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের গাইয়েরা বেশ কয়েকটি ব্যান্ডও গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে বিহঙ্গ, বৈঠক, অ্যাড্রেস ও বিভব বেশ জনপ্রিয়।[২]

উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পাদনা

১৯৪৯ সালে এক সঙ্গীতানুষ্ঠানে এসেছিলেন দেশবরেণ্য গায়ক আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ। বনমালী মঞ্চে ১৯৯৬ সালে দেড় মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের অন্যতম বড় নাট্যোৎসব। দেশের ৩৬টি নাট্য সংগঠন এখানে নাটক মঞ্চস্থ করে। বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র নিজস্ব শিল্পীদের অংশ গ্রহণে এ পর্যন্ত দু’সহস্রাধিক নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এছাড়া নিজস্ব প্রযোজনায় অসংখ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রযোজিত ‘সীতা’ নাটকে অভিনয় করতে কলকাতা থেকে এসেছিলেন চলচ্চিত্র জগতের শক্তিমান অভিনেতা ছবি বিশ্বাস, রবি রায়, মমতা ব্যানার্জী প্রমুখ। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনও একাধিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে বনমালীর উদ্যোগে ৩৩টি নাট্যসংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃজেলা নাট্যোৎসব। ১৯৪৯ সালে পাবনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মাহাতাব উদ্দিন সরকারের উদ্যোগে এখানে মঞ্চস্থ হয় নাটক সিরাজদ্দৌলা। সিরাজ চরিত্রে অভিনয় করেন শিল্পী তেজেন চক্রবর্তী, আলেয়া চরিত্রে অভিনয় করেন নিশিকান্ত বকশী। দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক ডা. মাযহারুল ইসলাম, ড. আবুহেনা মোস্তফা কামাল, কবি বন্দে আলী মিয়া, সৈয়দ শামছুল হক, কবির চৌধুরী, কবি শামসুর রাহমান, বদরুদ্দিন উমর, নির্মলেন্দু গুণ, কামাল লোহানী, গীতিকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, শান্তি নিকেতনের অধ্যক্ষ ড. শৈলজারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, কবি সুফিয়া কামাল, সুপ্রিয়া বারী, মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ, হাসান আজিজুর হক, ড. আব্দুল খালেক, জুলফিকার মতিন, নাজিম মাহমুদ প্রমুখ। নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বারীণ মজুমদার, জগন্ময় মিত্র, অহীন্দ্র চৌধুরী, ফেরদৌসী রহমান, নিত্য গোপাল জোয়ার্দার, বুলবুল চৌধুরী, পিলু মমতাজ, তপন চৌধুরী, আব্দুল জব্বার, ফরিদা ইয়াসমিন, ওস্তাদ ইয়াছিন খান, আমজাদ হোসেন, আনোয়ারা, আনোয়ার হোসেন, ডলি জহুর, হুমায়ুন ফরীদী, সুবর্ণা মোস্তফা, পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাইসুল ইসলাম আসাদ, মামুনুর রশিদ, আলী যাকের, রামেন্দু মজুমদার, ড. এনামুল হক, মাসুম আজিজসহ দেশের অগণিত শিল্পী-কুশলীগণ বনমালীতে এসে এ প্রতিষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছেন।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "নবযাত্রায় 'বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র'"samakal.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৭ 
  2. "একমাত্র ভরসা বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র"প্রথম আলো। ২০১৭-০৫-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৭ 
  3. "দৈনিক জনকন্ঠ || বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র"দৈনিক জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৭