বড় কাওয়া

নিমফ্যালিডি পরিবারের প্রজাপতি

বড় কাওয়া[১] (বৈজ্ঞানিক নাম: Euploea klugii(Moore)) নিমফ্যালিডি পরিবার এবং ডানায়িনি উপগোত্র এবং ইউপ্লোইয়া বর্গের অন্তর্গত বড় আকারের প্রজাতি।

বড় কাওয়া
King crow
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Nymphalidae
গণ: Euploea
প্রজাতি: E. klugii
দ্বিপদী নাম
Euploea klugii
Moore, 1858

আকার সম্পাদনা

বড় কাওয়া এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৮৫-১০০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[২]

উপপ্রজাতি সম্পাদনা

বড় কাওয়ার উপপ্রজাতিগুলো হলো-[৩]

  • Euploea klugii klugii (Moore, 1857)
  • Euploea klugii erichsonii (C. & R. Felder, 1865)
  • Euploea klugii kollari ( C. & R. Felder, 1865)
  • Euploea klugii sinhala ( Moore, 1877)
  • Euploea klugii minorata (Moore, 1878)
  • Euploea klugii burmeisteri (Moore, 1883)

ভারতে প্রাপ্ত বড় কাওয়ার উপপ্রজাতি সম্পাদনা

ভারতে সাধারণত বড় কাওয়ার যে দুইটি উপপ্রজাতি দেখা যায় তা হল-

  • Euploea klugii klugii Moore, [1858] – Blue King Crow
  • Euploea klugii kollari C. & R. Felder, [1865] – Brown King Crow

উত্তর এবং উত্তরপূর্ব ভারতের উপপ্রজাতিগুলিকে Blue King Crow এবং দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতের উপপ্রজাতিকে Brown King Crow বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গএ প্রাপ্ত উপপ্রজাতিটি Brown King Crow নামেই পরিচিত।[৪]

বিস্তার সম্পাদনা

ভারত (দক্ষিণ ভারত থেকে মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম থেকে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত),[৫] বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং ভুটান এর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।[২]

বর্ণনা সম্পাদনা

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

পুরুষ প্রকারে সামনের ডানার আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন নমুনায় ভিন্নরকম; বিশেষত টার্মেন এবং ডরসামের প্রান্তরেখার ভিন্নতায়। পুরুষ প্রকারে সামনের ডানা প্রস্থের তুলনায় দৈর্ঘ্যে বড়, ডরসাল প্রান্তরেখা কম উত্তল হওয়ার জন্য এবং টার্মেন তীর্যক এবং সামান্য উত্তল। স্ত্রী প্রকারে এইরূপ ভিন্নতা খুবই কম লক্ষনীয়।[২]

বড় কাওয়া প্রজাতি, কাওয়ার সাথে ভীষন সাদৃশ্যপূর্ন, তবে বড় কাওয়া এর ডানা আকারে সামান্য বড়। কাওয়া, দুক্কি কাওয়া এবং বড় কাওয়া এর স্ত্রী প্রকারের মধ্যে পার্থক্য করা ভীষন কঠিন। এদের আলাদা করে চেনার জন্য নিম্নলিখিত উপায়ে শনাক্ত করা যায়-

সামনের ডানার নিম্নতলের ১b শিরা মধ্যে, কাওয়াতে একটি ছোট সাদাটে দাগ; দুক্কি কাওয়াতে ২টি ছোট সাদাটে দাগ এবং বড় কাওয়ার ক্ষেত্রে; একটি খুব ছোট সাদা দাগ অথবা দাগ থাকে না।

কাওয়া এবং দুক্কি কাওয়া এর স্ত্রী প্রকারে সামনের ডানার নিম্নপৃষ্ঠে সেল এ একটি ছোপ থাকে, যা বড় কাওয়ার স্ত্রী প্রকারে অনুপস্থিত।[২]

ডানার উপরিতল : সামনের ডানা কালচে বাদামী; উত্তরভারতীয় উপপ্রজাতিতে ডানার টার্মেন পর্যন্ত বিস্তৃত উজ্জ্বল নীলচে চক্‌চকে আভা দেখা যায়; দক্ষিণ ভারতীয় এবং পূর্ব ভারতীয় উপপ্রজাতিতে যা নাও থাকতে পারে। সেল এর শীর্ষভাগে একটি ছোপ; একটি ছোট কোস্টাল ছোপ এবং সেল এর শীর্ষভাগের সামান্য দূরে দুটি ছোট লম্বা দাগ দেখা যায়। স্ত্রী প্রকারে, দুটি ডিসকাল ছোপ চোখে পড়ে। পুরুষ প্রকারে সাবটার্মিনাল এবং টার্মিনাল ছোপের সারি বর্তমান থাকলেও, স্ত্রী প্রকারে টার্মিনাল ছোপের সারিটি দেখা যায় না। স্ত্রী এবং পুরুষ উভয় প্রকারেই সাবটার্মিনাল ছোপগুলি ভিতরের দিকে সামান্য অভিক্ষিপ্ত (produced)। ডিসকাল, সাবটার্মিনাল এবং টার্মিনাল ছোপগুলি নীলচে সাদা বর্নের হয়।[৬]

পিছনের ডানা বাদামী এবং মধ্যভাগে চকচকে নীলচে আভাযুক্ত। এপিকাল অর্দ্ধে ধূসর আঁশ এবং ফ্যাকাশে হলুদ গন্ধ রোঁয়া বর্তমান। স্ত্রী প্রকারে গন্ধ রোঁয়া থাকে না। সাবটার্মিনাল ছোপের সারিটি অসম্পূর্ণ; অ্যাপেক্সের দিকে অসংলগ্ন হয়ে গেছে। সাবটার্মিনাল ছোপগুলি ৪ নং শিরার নিচ থেকে শেষ পর্যন্ত লম্বাটে, টার্মিনাল ছোপের সারিটি নিয়ত এবং সম্পূর্ণ। স্ত্রী প্রকারে টার্মিনাল ছোপের সারিটি অনুপস্থিত; শুধুমাত্র সচ্ছতার কারনে উপরিপৃষ্ঠের টার্মিনাল ছোপগুলি অস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।[৬]

ডানার নিম্নতল : উভয় ডানার নিম্নতল অনুজ্জ্বল বাদামী এবং চক্‌চকে নীলের আভা বিহীন। সামনের ডানার মধ্যভাগ কালচে এবং ছোপগুলি আরও সুস্পষ্ট। সাবটার্মিনাল এবং টার্মিনাল ছোপের সারি কমবেশী সম্পূর্ণ।

শুঙ্গ কালো, মাথা, বক্ষদেশ এবং উদর উভয়তলে ভেলভেটের ন্যায় বাদামী। মাথা এবং বুক নীলচে সাদা বিন্দু দ্বারা চিত্রিত।[৬]

আচরণ সম্পাদনা

উত্তর পূর্ব ভারতে সুলভ এবং দক্ষিণ ভারতে দুর্লভ দর্শন এই প্রজাতির উড়ান ইউপ্লোইয়া বর্গভুক্ত অন্যান্য সদস্যদের ন্যায় ধীর এবং অলস, ডানা ভাসিয়ে ভাসিয়ে উড়ে বেড়ায়।[৫] জঙ্গল পরিবেশে, জঙ্গলের ফাঁকা জায়গায়, উন্মুক্ত গ্রামাঞ্চলে এদের বিচরন লক্ষ্য করা যায়।[২] এরা ফুলে বসে মধুপান, পাতায় অথবা গাছের ডালে বসে ডানা মেলে অথবা ডানা বন্ধ অবস্থায় রোদ পোহায় এবং ভিজে মাটি, পাথর এবং মাটির ভিজে ছোপে অবস্থান করে মাড পাডল করে। আর্দ্র বনাঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় এদের সক্রিয় দেখা যায়। এই প্রজাতিকে একমাত্র তখনই অধিক উচ্চতায় দেখা মেলে যখন এরা পরিযায়ীতা করে।[৭] দক্ষিণ ভারতেও এই প্রজাতিকে কম উচ্চতাসম্পন্ন বাসস্থানেই দেখা যায়, বিশেষত আর্দ্র জংলা পরিবেশযুক্ত গ্রামাঞ্চলে। সাধারনত এপ্রিল থেকে অক্টোবর এ এদের উড়তে লক্ষ্য করা যায়। শ্রীলঙ্কাতে এই প্রজাতি শুষ্ক এবং নিচু অঞ্চল পছন্দ করে।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ১৬৯। 
  2. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। নতুন দিল্লি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৩০৭। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  3. Varshney, R.K.; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 152–153। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  4. দাশগুপ্ত, যুধাজিৎ (২০০৬)। পশ্চিমবঙ্গের প্রজাপ্রতি (১ম সংস্করণ সংস্করণ)। কলকাতা: আনন্দ। পৃষ্ঠা ১১৫। আইএসবিএন 81-7756-558-3 
  5. Kunte, Krushnamegh (২০১৩)। Butterflies of The Garo Hills। Dehradun: Samrakshan Trust, Titli Trust and Indian Foundation of Butterflies। পৃষ্ঠা ৮২। 
  6. Wynter-Blyth, M.A. (1957) Butterflies of the Indian Region, pg .৭৩.
  7. বসু রায়, অর্জন; বৈদ্য, সারিকা; রায়, লিপিকা। সুন্দরবনের কিছু পরিচিত প্রজাপতি (মার্চ ২০১৪ সংস্করণ)। সুন্দরবন জীবপরিমণ্ডল,Department of Forest Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ৭৩। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা