বড়শি হলো মাছ ধরার এক প্রকার সরাঞ্জম। এর অপর নাম মাছ ধরার ছীপ। যা মাছ বা মাছ জাতীয় প্রাণী ধরতে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার হয়। মানুষের হাতে এটি শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। মিঠা ও নোনা জলের মাছ ধরার জন্য এটি বেশি ব্যবহার হয়। ফোবস কর্তৃক ২০০৫ সালে, মাছ ধরার শীর্ষ বিশ সরঞ্জামের মধ্যে বড়শিকে প্রধান সরাঞ্জাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। [১] বড়শি সাধারণত বাঁশের ছিপ বা লৌহ দণ্ডের সাথে সুতা বরা চিকনাকৃতির রশির সাথে সংযুক্ত থাকে যা ধরা মাছকে খুব সহজে ফাঁদের মধ্যে নিয়ে আসে। মাছ ধরার জন্যে বিশ্বে প্রচুর পরিমাণে বড়শি রয়েছে। বড়শির আকার, উদ্দেশ্য, এবং উপকরণ মাছ ধরার পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। বড়শি দিয়ে সাধারণত সীমিত আকারে মাছ ধরার সম্ভব। বড়শি বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম, প্রক্রিয়াজাত, মৃত বা জীবিত মৎস্যজাতীয় প্রাথী বীট ( বেত মাছ ধরার ) ধরার জন্য তৈরি করা হয়। মাছ শিকারের কৃত্রিম যন্ত্র হিসেবে এটি কাজ করে।

গঠনপ্রকৃতিসহ মাছ ধরার বড়শি

ইতিহাসসম্পাদনা

বড়শি বা অনুরূপ যন্ত্র মানুষের দ্বারা হাজার হাজার বছর আগে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মাছ ধরার বড়শি (সমুদ্রের গোলাগুলির শেল থেকে তৈরি করা হয়েছিল) ওকিনাওয়া আইল্যান্ডের সাকিতারি গুহায় ২২,৩৮০ থেকে ২২,৭৭০ বছর আগে ডাবের সন্ধানে আবিষ্কৃত হয়েছিল। [২][৩] যা ২৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার বছর আগে পূর্ব তিমুরের জেরিমাইয়ের গুহা থেকে উদ্ধারকৃত বড়শি আকৃতি পাখি ধরার ফাঁদের চেয়ে বড় [২][৪]

মেক্সিকোতে পশ্চিম উপকূলে সিড্রোস দ্বীপ থেকে প্রায় ১১,০০০ বি.পি. তারিখের আমেরিকাগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন মাছের হুক রিপোর্ট করা হয়েছে। এই মাছ হুক সমুদ্র শেল থেকে তৈরি করা হয়। [৫] শেলগুলি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে পাওয়া মাছের হুকগুলির জন্য সাধারণ উপাদান সরবরাহ করে, যা প্রাগৈতিহাসিক শেল মাছের হুক নমুনার আকারগুলি মাঝে মাঝে তুলনা করা হয় যাতে তারা আমেরিকাগুলিতে লোকেদের অভিবাসন সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। [৬]

ব্যবহার পদ্ধতিসম্পাদনা

বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জন্যে প্রথমে প্রয়োজন ‘চার’। চার হলো মাছের খাবারকে- স্বাদ, গন্ধ ও বায়োকেমিক্যাল পদ্ধতিতে মিশ্রণ । কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছকে বা কিছু প্রজাতির মাছকে লক্ষ্য বড়শিতে যুক্ত খাবারের দিকে আকর্ষণ বড়শি ব্যবহারকারী এটি তৈরি করে। প্রতিটি চারেই মূলত এক বা একাধিক আকর্ষণীয় মাছের খাবার দিয়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো এমন পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয় যাতে তা মাছকে টোপের কাছে নিয়ে আসে। আর চারকে লক্ষ্য করে বড়শি ফেলতে হয়। [৭]

ধরনসম্পাদনা

অসংখ্য ধরনের বড়শি রয়েছে। ম্যাক্রো স্তরের, বেট হুক, উড়ন্ত বড়শি, এবং টোপ বড়শি। এই বিস্তৃত শ্রেণীর মধ্যে বিভিন্ন মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় ব্যবহার উপযোগী ডিজাইন করেও বড়শি তৈরি করা হয়। বড়শির ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী উপকরণ, কেন্দ্রবিন্দু এবং আকৃতির ভিন্নতা থাকে। কখনো কখনো মাছের আকৃতিতেও এটি তৈরি করা হয়। প্রতিটি বড়শিতে আলাদা কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্যে বিদ্যামান থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সূক্ষ্ম ও চিক উড়ন্ত বড়শি খুবই পাতলাভাবে তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে এর ওজনও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। ধরন অনুযায়ী প্রতিটি বড়শির আলাদা ও গ্রহণযোগ্য পরিমাপ রয়েছৈ। বড়শির পরিসীমা ৩২ (ছোটতম) থেকে ২০ তম (বৃহত্তম) পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আকৃতিসম্পাদনা

বড়শির জন্যে কোন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আকৃতি নেই। তবে এর নির্মাতারা কাজের সাথে কিছুটা সঙ্গতি রেখে তৈরি করে। তবে বড়শি প্রস্তুতকারকরা নির্দিষ্ট পরিসীমার বা খাপের মধ্যে রেখে তৈরি করে তাই সর্বদা এটি নির্দিষ্ট মাপে তৈরি হয়। বড়শির মাপগুলি সাধারণত একটি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যা সাইজ পরিসরের মধ্যবর্তী আকৃতির গুলো ১ নং ধরা হয়। ছোট হুকগুলি বড় বড় সংখ্যাগুলির দ্বারা উল্লেখ করা হয় (যেমন ১, ২, ৩.... )। বড় আকৃতির বড়শি ১ এর সাথে শূন্য অনুসরণ করে (উদাহরণস্বরূপ ১/০ (একমাত্র),২/০, ৩/০ ...) তাদের আকার বৃদ্ধি পায়।

চিত্রশালাসম্পাদনা

আরো দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. Ewalt, David M. (৫ আগস্ট ২০০৫)। "No. 19: The Fish Hook"। ১৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৭ 
  2. Michael Price (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "World's oldest fish hook found on Okinawa"Science। ৬ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৭ 
  3. "World's oldest fish hooks found in Japanese island cave"BBC news। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  4. O’Connor, Sue; Ono, Rintaro (২৫ নভেম্বর ২০১১)। "Pelagic Fishing at 42,000 Years Before the Present and the Maritime Skills of Modern Humans" (ইংরেজি ভাষায়): 1117–1121। আইএসএসএন 0036-8075ডিওআই:10.1126/science.1207703 
  5. Des Lauriers, Matthew R.; Davis, Loren G. (২০১৭)। "THE EARLIEST SHELL FISHHOOKS FROM THE AMERICAS REVEAL FISHING TECHNOLOGY OF PLEISTOCENE MARITIME FORAGERS": 498–516। আইএসএসএন 0002-7316ডিওআই:10.1017/aaq.2017.13 
  6. ‎Terry L Jones, ‎Jennifer E Perry, eds., Contemporary Issues in California Archaeology (2012), p. 218.
  7. "বড়শি দিয়ে মাছ ধরার টোপ"বাংলাফিশিং। ৭ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৯ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা

  •   উইকিমিডিয়া কমন্সে বড়শি সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।