বঙ্গবন্ধু দ্বীপ

বাংলাদেশের দ্বীপ

পুটুনির দ্বীপ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার দুবলার চর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অবস্থিত একটি দ্বীপ। এটি খুলনা জেলার একটি নতুন পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান।[][][]

বঙ্গবন্ধু দ্বীপ
স্থানীয় নাম:
পুটুনির দ্বীপ
মানচিত্র
ভূগোল
অবস্থানবঙ্গোপসাগর
স্থানাঙ্ক২১°৪২′১৮″ উত্তর ৮৯°২০′১৮″ পূর্ব / ২১.৭০৫১° উত্তর ৮৯.৩৩৮২° পূর্ব / 21.7051; 89.3382
আয়তন৮ বর্গকিলোমিটার (৩.১ বর্গমাইল)
দৈর্ঘ্য৯ কিমি (৫.৬ মাইল)
প্রস্থ০.৫ কিমি (০.৩১ মাইল)
প্রশাসন
জনপরিসংখ্যান
জনসংখ্যানেই

বিবরণ ও নামকরণ

সম্পাদনা

বঙ্গবন্ধু দ্বীপ সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে পরেছে। সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার ও দুবলারচর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বুকে দ্বীপটি অবস্থিত। যা বঙ্গবন্ধু চর, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড নামেও ডাকা হয়।[][] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত নতুন এই দ্বীপ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের অনন্য উদাহরণ। ১৯৯২ সালে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রথম নতুন জেগে ওঠা একটি চরের দেখা পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ ভক্ত, মালেক ফরাজী নামের এক মৎস্য শিকারী। এ সময় তিনি জনমানবহীন এ দ্বীপের নাম দেন "বঙ্গবন্ধু দ্বীপ" এবং সেখানে একটি সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়ে আসেন।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৯৭৬ সাল থেকেই স্যাটেলাইট ইমেজে দ্বীপটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর পর দ্বীপটি মাঝেমধ্যে জেগে ওঠে আবার ডুবে যায়। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের পর থেকে দ্বীপের আকার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল অবস্থায় আসতে থাকে। এর পর থেকে না ডুবে ক্রমেই বড় হচ্ছে দ্বীপটি। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন করে জেগে ওঠা দ্বীপটিতে যায়। সেখানে তারা টানা তিনদিন অবস্থান করে দ্বীপটির অভ্যন্তরীণ মৃত্তিকা, ডিসিপি জরিপ ও ভিজিবিলিটি অ্যানালাইসিসসহ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান চালান।[]

ভৌগোলিক আয়তন ও ভূপ্রকৃতি

সম্পাদনা

শুরুতে মাত্র ২ একর আয়তন থাকলেও, বর্তমানে এই দ্বীপ ৭ দশমিক আট-চার বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রয়েছে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আর ৫শ’ মিটার প্রশস্ত বালুকাভূমি বা সমুদ্রসৈকত। বর্তমানে দ্বীপটির আয়তন ৭ দশমিক ৮৪ বর্গকিলোমিটার। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ মিটার। দ্বীপটির চারদিকে গড়ে উঠেছে প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রশস্ত সমুদ্রসৈকত।[] দ্বীপটির পেছনেই রয়েছে নয়নাভিরাম ছোট ছোট বালির ঢিবি বা বালিয়াড়ি। সর্ব পেছনে রয়েছে এক দশকেরও কম সময়ে গড়ে ওঠা সবুজ, শ্যামল বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট।[]

উদ্ভিদ ও প্রাণি বৈচিত্র

সম্পাদনা

জীববৈচিত্র্যের আঙ্গিকেও দ্বীপটির উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্ভার বেশ বৈচিত্র্যময়। অজস্র লাল কাঁকড়ার মনোরম ছোটাছুটি, স্বচ্ছ পানি, প্রশস্ত বালুকাভূমিসহ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দ্বীপটিকে নান্দনিক করে তুলেছে।[] প্রাথমিকভাবে দ্বীপটিতে চার প্রজাতির কাঁকড়া, ১৬ প্রজাতির মোলাস্কা (শামুক-ঝিনুক ইত্যাদি), আট প্রজাতির প্লাংকটন ও দুই প্রজাতির বার্ণাকল পাওয়া গেছে। এছাড়া দ্বীপটিতে এক প্রজাতির এসিডিয়ানের সন্ধান মিলেছে, যা বাংলাদেশে প্রথম। এছাড়া স্থলজ প্রাণিকুলের মধ্যে ফড়িং, প্রজাপতি, মৌমাছিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোকা-মাকড় পাওয়া যায়।[]

পর্যটন

সম্পাদনা

সুন্দরবনের কাছে নতুনরূপে আবিষ্কৃত ‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপে’ পর্যটন বিকাশে বিপুল সম্ভাবনা। আশেপাশের পরিচিত পর্যটন স্থানের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপটিকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য।[]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "'সম্ভাবনাময়' পর্যটন স্থান বঙ্গবন্ধু দ্বীপ"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০১৯-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  2. "বঙ্গবন্ধু দ্বীপে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা"দৈনিক যুগান্তর। ২০১৯-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  3. "বঙ্গবন্ধু দ্বীপ হতে পারে আকর্ষণীয় স্থান"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  4. "পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা 'বঙ্গবন্ধু চর' | banglatribune.com"Bangla Tribune। ২০১৯-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  5. "বঙ্গোপসাগরে নতুন দ্বীপ 'বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড'"Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  6. "বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  7. "বঙ্গবন্ধু দ্বীপ পর্যটন শিল্প ও ব্লু-ইকোনমির কেন্দ্র হতে পারে"একুশে টেলিভিশন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  8. "বঙ্গবন্ধু দ্বীপে সম্ভাবনার আলো"সমকাল। ২০১৯-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  9. "পর্যটনশিল্পে নতুন সম্ভাবনার 'বঙ্গবন্ধু দ্বীপ'"প্রিয়.কম। ২০১৯-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১