বং (ইংরেজি: Bong) হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালিদের বোঝানোর জন্য একটি কিঞ্চিৎ নিন্দাকর শব্দ, যা ১৯৮০-এর দশকে বহুসাংস্কৃতিক ভারত থেকে উদ্ভূত। একবিংশ শতাব্দীতে বাঙালি বা বাংলা ব্লগিং সম্প্রদায় দ্বারা ব্যঙ্গ এবং সেল্ফ-রিফ্লেক্সিভ বৈপরীত্যের ব্যবহারের মাধ্যমে এই শব্দটি গর্বের স্বাভিমানে পরিণত হয়েছে, যা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিদের বোঝায়।

উৎপত্তি সম্পাদনা

১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দাদের বোঝানোর জন্য জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমি "বং" শব্দটি ব্যবহার করেছিল। "বং" শব্দের জাতিগত ঠাট্টামূলক ব্যবহার ১৯৮৯ সালে ইন্ডিয়া টুডেতে নথিভুক্ত হয়েছে।[১] সমাজবিজ্ঞানী প্রশান্ত রায় পর্যবেক্ষণ করেছেন যে ১৯৯০-এর দশকে নতুন দিল্লিতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল।[২] অভিধান রচয়িতা অশোক মুখোপাধ্যায়ের মতে "বং" শব্দটি ইংরেজি "বেঙ্গলি" (Bengali) শব্দের একটি বিকৃতি, যা প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্য থেকে উদ্ভূত।[২] লেখক নবারুণ ভট্টাচার্যের বিশ্বাস যে এই শব্দটি হয় ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান (আইআইটি) কিংবা অন্য কোনো সর্বভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে উদ্ভূত।[২] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ১৯৯৯-এর সংবাদ অনুযায়ী, কলকাতায় বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির ক্রমবিলুপ্তি এবং ক্রমবর্ধমান বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশের জন্য অবাঙালিরা বাঙালিদের "বং" বলতে শুরু করেছে।[৩] ব্লগার অর্ণব রায়ের মতে, বাঙালিরা জীবনযাপনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ ত্যাগ করতে অনিচ্ছুক ছিল। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আবহাওয়া বদলে গিয়েছিল এবং আরও ভাল কর্মসংস্থান অনুসন্ধানের জন্য বাঙালিদের নিজ রাজ্য ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এর ফলে বং পরিচয়ের বিকাশ হয়েছিল, যা পশ্চিমবঙ্গের প্রতি আবেগঘন আকর্ষণ এবং একইসঙ্গে ভারত ও বিদেশের বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে আত্তীকরণকে তুলে ধরে।[২]

ব্যবহার সম্পাদনা

"বং" শব্দের অর্থ হচ্ছে বাঙালি। অঞ্জন দত্তের মতে, বং ও বাঙালি পরিচয়ের মধ্যে কোনো সাংস্কৃতিক বা প্রজন্মগত পার্থক্য নেই। ব্লগার সন্দীপা মুখার্জি দত্ত, যিনি "বং মমস কুক বুক"-এ (Bong Mom's Cook Book) "বং মম" ছদ্মনামে ব্লগ করেন, পরিচয় হিসাবে বংকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে সীমিত বলে বর্ণনা করেছেন।[৪] দুর্গাপূজাকে এক বং উৎসব হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[২] সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়ায় নিষেধকে বং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।[৫]

উদ্ভূত শব্দসমূহ সম্পাদনা

ভারতীয় ইংরেজিতে "বং" শব্দকে একটি উল্লেখযোগ্য শব্দ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।[৬] সমসাময়িক ভারতীয় ইংরেজি "বং" শব্দ থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে। যেমন: বংডম (বাঙালি আধিপত্য), বংনেস (বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ), বংলিশ[৭] (বাংরেজি; বাংলা শব্দবিশিষ্ট ইংরেজি), হন-বং[৮] ("অনরারি বং" কথার সংক্ষিপ্ত রূপ; কোনো ব্যক্তি যিনি বং নন, কিন্তু বং ব্যক্তি ও তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর পরিচিত ও নৈকট্যের ভিত্তিতে বং হিসাবে বিবেচিত)।[৯]

ছকে ফেলা বিশ্বাস সম্পাদনা

বিশেষ করে বলিউডইন্টারনেটে বং হিসাবে বাঙালিদের নিয়ে ছকে ফেলা বিশ্বাস ফুটে ওঠে। একটি জনপ্রিয় ইন্টারনেট তামাশা অনেকটা এইরকম, "এক বাঙালি হচ্ছে একটি কবি, দুই বাঙালি হচ্ছে একটি ফিল্ম সোসাইটি, তিন বাঙালি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দল ও চার বাঙালি হচ্ছে দুটি রাজনৈতিক দল!"[১০] একটি জনপ্রিয় ছকে ফেলা বিশ্বাস অনুযায়ী, বংরা সর্বদা মাছখেকো এবং তাদের অনেকসময় "মাছের ঝোল" বলা হয়।[১১] চলচ্চিত্রকার জগ মুন্ধরার বিশ্বাস যে বাঙালি মহিলাদের চোখ বড় গোল।[১২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Rajghatta, Chidan; Tripathi, Salil (৩১ আগস্ট ১৯৮৯)। "Indiana jokes"India Today। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  2. Banerjee, Malini; Kohli, Diya (অক্টোবর ২৮, ২০০৭)। "The dinner Bong"The Telegraph। Kolkata: ABP Group। ফেব্রুয়ারি ৪, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৭ 
  3. Chakrabarti, Ashis (১ জুলাই ১৯৯৯)। "Bongs? No, we're Bengalis from Kolkata"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; sarkar2012 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. Niyogi, Agnivo (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "Saraswati Puja – The Bengali tradition"Maa Mati Manush। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  6. Miller, Neil A.। "Indian English Dictionary and Indianisms"Learning India। Madras Media Marketing। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  7. Julie Coleman, সম্পাদক (১০ জানুয়ারি ২০১৪)। Global English Slang: Methodologies and Perspectives। Routledge। পৃষ্ঠা 130। আইএসবিএন 9781317934769 
  8. Suraiya, Jug (২৬ আগস্ট ২০১১)। "Why West Bengal is becoming Paschimbanga"Times of India। Bennett Coleman & Co.। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  9. Parhi, Asima Ranjan (২০০৮)। Indian English Through Newspapers। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 161–162। আইএসবিএন 9788180695070। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  10. Chaudhuri, Diptakirti (২০১২)। Kitnay Aadmi Thay । Westland। আইএসবিএন 9789381626191। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৭ 
  11. D'Costa, Melissa (১১ জুন ২০১২)। "Stereotyping could now mean a jail term!"The Times of India। Mumbai: Benett Coleman & Co.। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৭ 
  12. Roy, Amit (১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)। "'Bengali women have nice, big eyes and luscious hair'"The Telegraph online। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২০