বংশগতীয় সংকেত
বংশগতীয় সংকেত (ইংরেজিতে Genetic code জেনেটিক কোড) বলতে কোষের বংশগতীয় উপাদান যেমন ডিএনএ ও আরএনএ অণুর ভেতরে নিউক্লিওটাইডের অনুক্রমকে বোঝায়, যা দেহকোষের রাইবোসোম নামক অঙ্গাণুতে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষণের সময় অ্যামিনো অ্যাসিডগুলির ক্রম নির্ধারণ করে।[১] তবে প্রোটিন সরাসরি ডিএনএ থেকে উৎপন্ন হয় না। ডিএনএ কোষকেন্দ্রে বা নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে (কিছু ডিএনএ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া নামের শক্তি উৎপাদন ও সঞ্চয়কারী অঙ্গাণুতেও থাকতে পারে)। প্রথমে ডিএনএ অণু থেকে একটি বাহক আরএনএ অণু সংশ্লেষণ করা হয়। এই বংশগতীয় সংকেতবাহক আরএনএ অণুটি কোষের সাইটোপ্লাজমে (বা অন্যত্র) অবস্থিত রাইবোসোম অঙ্গাণুতে বাহিত হয়, যেখানে প্রোটিন নির্মাণ বা সংশ্লেষণ করা হয়। আরএনএ অণুটিতে চার ধরনের নিউক্লিওটাইড থাকে, অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও ইউরাসিল। আরএনএ অণুর তিনটি পরস্পর-সংলগ্ন নিউক্লিওটাইড একটি সাঙ্কেতিক একক বা কোডন গঠন করে, যা প্রোটিন সংশ্লেষণের পরবর্তী ধাপে কোন্ অ্যামিনো অ্যাসিড যোগ করতে হবে, তা নির্ধারণ করে। যেমন GCU কোডনটি অ্যালানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য সংকেত বহন করে। সব মিলিয়ে এরকম ৬৪টি সম্ভাব্য কোডন আছে; এদের মধ্যে তিনটি কোডন কোনও অ্যামিনো অ্যাসিডের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং প্রোটিনের পরিসমাপ্তি নির্দেশ করে। বাকি ৬১টি কোডন প্রোটিন তৈরিতে ব্যবহৃত ২০ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য সংকেত বহন করে। অর্থাৎ একটি অ্যামিনো অ্যাসিড দুই বা তার অধিক কোডন দ্বারা নির্দিষ্ট হতে পারে। বিজ্ঞানীরা একে সংকেত বাহুল্য বা প্রয়োজনাতিরিক্ততা নাম দিয়েছেন।
বংশগতীয় সংকেত সমস্ত জীবের জন্যই প্রায় একই রকম হয়; অর্থাৎ একই কোডনগুলি একই ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিডকে নির্দেশ করে।
মার্কিন প্রাণরসায়নবিদ মার্শাল নিরেনবার্গ, রবার্ট হলি এবং হরগোবিন্দ খোরানা ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে বংশগতীয় সংকেত কীভাবে কাজ করে, তা উদ্ঘাটন করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Elizabeth Martin; Robert Hine, সম্পাদকগণ (২০১৫), A Dictionary of Biology (৭ম সংস্করণ), Oxford University Press, পৃষ্ঠা ২৪৬