ফ্যারাড

তড়িৎ আধৃতির আন্তর্জাতিক একক

ফ্যারাড (প্রতীক: F) হলো কোনো পদার্থের তড়িৎ আধান সঞ্চয় করে রাখার সামর্থ্যের অর্থাৎ তড়িৎ ধারকত্বের এসআই লব্ধ একক। ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।

ফ্যারাড
এক ফ্যারাড ধারকত্বের আধুনিক সুপার-ক্যাপাসিটর। পিছনের স্কেল ইঞ্চি (উপরে) ও সেন্টিমিটার (নিচে) এককে।
এককের তথ্য
একক পদ্ধতিএসআই লব্ধ একক
যার এককধারকত্ব
প্রতীকF
যার নামে নামকরণমাইকেল ফ্যারাডে
মৌলিক এসআই এককে:s4A2m−2kg−1

সংজ্ঞা সম্পাদনা

এক কুলম্ব আধানে আহিত করার ফলে কোনো পরিবাহীর মধ্যে এক ভোল্ট বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হলে, ঐ পরিবাহীর ধারকত্ব হবে এক ফ্যারাড।[১] অন্যভাবে বলা যায়, এক ফ্যারাড হলো সেই ধারকত্ব যা এক ভোল্ট বিভব পার্থক্যে এক কুলম্ব পরিমাণ আধান সঞ্চয় করতে পারে।[২]

ধারকত্ব (C), আধান (Q) ও বিভব পার্থক্যের (V) মধ্যে একটি সরল সম্পর্ক বিদ্যমান:

 

এখানে,

Q কে কুলম্ব এবং V কে ভোল্ট এককে প্রকাশ করলে ধারকত্ব C এর মান ফ্যারাড এককে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, ১ F = ১ C/V.

কোনো ধারকের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য অর্ধেক করে দিলে, এর সঞ্চিত আধানের পরিমাণও অর্ধেক হয়ে যাবে।

ফ্যারাড বেশ বড় একক বিধায় সচরাচর এর পূর্বে এসআই উপগুণিতক যুক্ত করে ব্যবহার করা হয়। যেমন:

  • ১ mF (মিলিফ্যারাড, ১০-৩ ফ্যারাড)
  • ১ μF (মাইক্রোফ্যারাড, ১০-৬ ফ্যারাড)
  • ১ nF (ন্যানোফ্যারাড, ১০-৯ ফ্যারাড)
  • ১ pF (পিকোফ্যারাড, ১০-১২ ফ্যারাড)

সমতা সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে যে সাতটি মৌলিক একক রয়েছে, তার মধ্যে চারটি এককের (কেজি, মিটার, সেকেন্ডঅ্যাম্পিয়ার) সমন্বয়ে গঠিত হয় ফ্যারাড। একারণে এটি একটি যৌগিক বা লব্ধ একক। এসআই মৌলিক এককসমূহের মাধ্যমে ফ্যারাডকে নিম্নোক্ত উপায়ে প্রকাশ করা যায়:

 

এখানে, F = ফ্যারাড, s = সেকেন্ড , A = অ্যাম্পিয়ার, m = মিটার , kg = কিলোগ্রাম , C = কুলম্ব , V = ভোল্ট, W = ওয়াট, J = জুল, N = নিউটন, Ω = ওহম, Hz = হার্টজ, H = হেনরি.

ইতিহাস সম্পাদনা

ল্যাটিমার ক্লার্ক ও চার্লস ব্রাইট ১৮৬১ সালে[৩] বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের সম্মানে আধানের একক হিসেবে ফ্যারাড শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। কিন্তু ১৮৭৩ সালের মধ্যে ফ্যারাডকে ধারকত্বের একক হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। ১৮৮১ সালে প্যারিসে ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ ইলেক্ট্রিশিয়ান্সে তড়িৎ ধারকত্বের একক হিসেবে "ফ্যারাড" নামটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহৃত হয়।[৪][৫]

ব্যাখ্যা সম্পাদনা

 
বিভিন্ন ধরনের ধারকের নমুনা

ধারক সাধারণত দুটি পরিবাহী পাতের সমন্বয়ে তৈরি, পাত দুটি একটি অন্তরক স্তর বা ডাইইলেকট্রিক দ্বারা পৃথক করা থাকে। ১৮ শতকের লিডেন জারও এক ধরনের ধারক। ধারকের পাতে তড়িৎ আধান সঞ্চিত হওয়ার কারণেই ধারকত্বের সৃষ্টি হয়। আধুনিক ধারক বিভিন্ন ধরনের পদার্থ ও নতুন কৌশলে প্রস্তুত করা হয়, এগুলোর ধারকত্ব ফেমটেফ্যারাড (১ fF = ১০-১৫ ফ্যারাড) থেকে ফ্যারাড এবং সর্বোচ্চ ভোল্টেজ কয়েক ভোল্ট থেকে কিলোভোল্ট পর্যন্ত হতে পারে।

ধারকের মান সচরাচর ফ্যারাড (F), মাইক্রোফ্যারাড (μF), ন্যানোফ্যারাড (nF) ও পিকোফ্যারাডে (pF) প্রকাশ করা হয়।[৬] ব্যবহারিক ক্ষেত্রে মিলিফ্যারাড তেমন ব্যবহৃত হয় না (৪.৭ মিলিফ্যারাড ধারকত্বকে সাধারণত ৪,৭০০ মাইক্রোফ্যারাড হিসেবে লেখা হয়), আবার উত্তর আমেরিকায় ন্যানোফ্যারাডের ব্যবহার কম। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ধারকের ধারকত্ব ০.১ পিকোফ্যারাড থেকে সুপারক্যাপাসিটরে ৫,০০০ ফ্যারাড (৫ কিলোফ্যারাড) পর্যন্ত হতে পারে। উন্নত মানের সমন্বিত বর্তনীর (ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) প্যারাসাইটিক ধারকত্ব সাধারণত ফেমটোফ্যারাড মানের হয়ে থাকে। এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহৃত ধারকগুলো ১০ অ্যাটোফ্যারাড (১ aF = ১০-১৮ ফ্যারাড) ক্রমের ধারকত্ব পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে।

০.১ পিকোফ্যারাড মানের ধারকই মূলত সবচেয়ে ছোট মানের ধারক, কারণ এর চেয়ে ছোট মানের ধারকগুলো সমন্বিত বর্তনীতে প্যারাসাইটিক ধারকের প্রভাবের সম্মুখীন হয়। দুটি অন্তরিত ছোট দৈর্ঘ্যের তার পেঁচিয়ে ১ পিকোফ্যারাড বা আরও কম মানের ধারকত্ব পাওয়া সম্ভব।[৭][৮]

হিসাব করে দেখা গেছে, ভূমির সাপেক্ষে পৃথিবীর আয়নমণ্ডলের ধারকত্ব প্রায় ১ ফ্যারাড।[৯]

অনানুষ্ঠানিক ব্যবহৃত শব্দ সম্পাদনা

পিকোফ্যারাডকে কথ্য ভাষায় অনেক সময় "পাফ" বা "পিক" বলা হয়, যেমন- "দশ-পাফ ধারক"।[১০] একইভাবে মাইক্রোফ্যারাডকে বলা হয় "মাইক"।

সম্পর্কিত ধারণা সম্পাদনা

ধারকত্বের বিপরীত রাশিকে ইলেকট্রিক্যাল ইলাস্ট্যান্স বলা হয়, এর একক দারাফ (এটি এসআই বা স্ট্যান্ডার্ড একক নয়)।[১১]

সিজিএস একক সম্পাদনা

অ্যাবফ্যারাড (সংক্ষেপে abF) ধারকত্বের একটি পুরনো ও বর্তমানে অপ্রচলিত একক। ১ অ্যাবফ্যারাড= ১০ ফ্যারাড (১ গিগাফ্যারাড)।[১২]

স্ট্যাটফ্যারাড (সংক্ষেপে statF) আরেকটি কম প্রচলিত সিজিএস একক। ১ স্ট্যাটফ্যারাড= ১/১০-৫ c2 ফ্যারাড (প্রায় ১.১১২৬ পিকোফ্যারাড)।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. The International System of Units (SI) (8th সংস্করণ)। Bureau International des Poids et Mesures (International Committee for Weights and Measures)। ২০০৬। পৃষ্ঠা 144। 
  2. Peter M B Walker, সম্পাদক (১৯৯৫)। Dictionary of Science and Technology। Larousse। আইএসবিএন 0752300105 
  3. As names for units of various electrical quantities, Bright and Clark suggested "ohma" for voltage, "farad" for charge, "galvat" for current, and "volt" for resistance. See:
  4. (Anon.) (September 24, 1881) "The Electrical Congress," The Electrician, 7: 297. From p. 297: "7. The name farad will be given to the capacity defined by the condition that a coulomb in a farad gives a volt."
  5. Tunbridge, Paul (১৯৯২)। Lord Kelvin: his influence on electrical measurements and units। London: Peregrinus। পৃষ্ঠা 26, 39–40। আইএসবিএন 9780863412370। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৫ 
  6. Braga, Newton C. (২০০২)। Robotics, Mechatronics, and Artificial Intelligence। Newnes। পৃষ্ঠা 21। আইএসবিএন 0-7506-7389-3। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-১৭Common measurement units are the microfarad (μF), representing 0.000,001 F; the nanofarad (nF), representing 0.000,000,001 F; and the picofarad (pF), representing 0.000,000,000,001 F. 
  7. Pease, Bob (২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩)। "What's All This Femtoampere Stuff, Anyhow?"। Electronic Design। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৯ 
  8. Pease, Bob (১ ডিসেম্বর ২০০৬)। "What's All This Best Stuff, Anyhow?"। Electronic Design। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৯ 
  9. Williams, L. L. (জানুয়ারি ১৯৯৯)। "Electrical Properties of the Fair-Weather Atmosphere and the Possibility of Observable Discharge on Moving Objects" (পিডিএফ)। ২০১৬-১২-২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-১৩ 
  10. "Puff"। Wolfram Research। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-০৯ 
  11. "Daraf"। Webster's Online Dictionary। ২০১১-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৯ 
  12. Graf, Rudolf F. (১৯৯৯)। Modern Dictionary of Electronics। Newnes। পৃষ্ঠা 1। আইএসবিএন 9780080511986। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা