ফিরোজ শাহ তুগলক
সুলতান ফিরোজ শাহ তুগলক (ফার্সি: فیروز شاہ تغلق, হিন্দি: फ़िरोज़ शाह तुग़लक़; জন্ম: ১৩০৯- মৃত্যু: ২০শে সেপ্টেম্বর ১৩৮৮) তুগলক রাজবংশের একজন শাসক যিনি মোহাম্মদ বিন তুগলক মৃত্যুর পর ১৩৫১ সালে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ১৩৮৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন।[১] তার মা ছিলেন দীপালপূরের একজন হিন্দু রাজকন্যা এবং পিতার নাম ছিলো রজব যিনি গিয়াসউদ্দিন তুগলকের ছোট ভাই এবং দীপালপুরের সিপাহসাহলার ছিলেন।[২] সুলতান মুহাম্মদ বিন তুগলক অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে ১৩৫১ সালে তিনি ক্ষমতায় আসীন হন।ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তার সাম্রাজ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পরে তাই মোহাম্মদ বিন তুগলকের চেয়ে তার সাম্রাজ্য অনেকটাই ছোট ছিল। তার রাজত্বকালে তিনি বাংলাকে আপাতঃ স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হন।
ফিরোজ শাহ তুগলক | |
---|---|
দিল্লির সুলতান | |
রাজত্ব | ১৩৫১-১৩৮৮ |
পূর্বসূরি | মুহাম্মদ বিন তুগলক |
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুগলক |
জন্ম | ১৩০৯ |
মৃত্যু | ২০ সেপ্টেম্বর ১৩৮৮(বয়স ৭৯ বছর) |
সমাধি | হৌজ খা কমপ্লেক্স, দিল্লি |
রাজবংশ | তুগলক রাজবংশ |
মাতা | দীপালপূরের হিন্দু রাজকন্যা |
ধর্ম | ইসলাম |
শাসন ব্যবস্থা
সম্পাদনামোহাম্মদ বিন তুগলকের মৃত্যুর পর তার চাচাত ভাই ফিরোজ শাহ তুগলক ১৩৫১ থেকে ১৩৮৮ সাল পর্যন্ত দিল্লির সুলতান ছিলেন। সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি বাংলা, গুজরাত এবং অন্যান্য স্থান হতে বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহের শিকার হন। তার পরেও তিনি তার রাজ্যের ক্যানেল এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগ দেন। তিনি ভ্রমণকারীদের জন্য বিশ্রামাগার, হাসপাতাল ও পানির চাহিদা মেটানোর জন্য কূপ খনন করেন। তিনি জয়পুর, ফিরোজপুর এবং হিসার-ফিরোজ সহ বিভিন্ন শহরের গোড়াপত্তন করেন। ১৩৫০ সালে দিল্লির কাছে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম হয় ফিরোজাবাদ। ফিরোজ শাহ তুঘলক তার শাসনামলে ৫টি মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল রাজধানী স্থানান্তর এবং দোয়াব অঞ্চলে কর বাডানো।
অবকাঠামো ও শিক্ষা ব্যবস্থা
সম্পাদনাফিরোজ শাহ তুগলক তার রাজ্য তথা প্রজাদের প্রকৃত উন্নয়নের লক্ষে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রুপরেখা নির্ধারন করেন। তিনি জনগনের কাছে শিক্ষা পৌছে দেওয়ার জন্য অনেক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গরীব প্রজাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য অনেক হাসপাতাল স্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি ডাক্তারদের ইউনানি চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য উৎসাহ দিতেন[৩]। কন্যা দায়গ্রস্থ পরিবারগুলোকে তিনি অর্থসহযোগিতা করতেন। তার শাসন আমলেই তিনি দিল্লিতে বিভিন্ন সরকারি কাজকর্ম ও রাজ প্রশাসনের কাজ পরিচালনার জন্য বড় বড় সরকারী দালান ও অবকাঠামো নির্মাণ করান। তার আমলেই দিল্লির আশেপাশে প্রায় ৩০০ গ্রামের গড়াপত্তন করা হয় এবং পাঁচটি বড় ক্যানেল খনন করা হয়, এতে করে সেচের সুবিধা হওয়ায় আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অধিক জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটাতে যথেষ্ট ছিল। শাসন কার্য পরিচালনার জন্য সুলতান ফিরোজ শাহ তুগলক মালিক মকবুলের উপর অতিমাত্রায় ভরসা করতেন। মালিক মকবুল একসময় ওয়ারেংগেল ফোর্টের সেনাপতি ছিলেন এবং সুলতান কর্তৃক ধৃত হন এবং পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন[৪]। শোনা যায় যে সুলতান একবার সিন্ধ ও গুজরাত অভিযানে যাওয়ার ছয় মাস পরও কোন খোঁজ খবর পাওয়া না গেলে মালিক মকবুল একাই সক্ষমভাবে দিল্লির সালতানাতের সুরক্ষা করেছিলেন[৫]। ফিরোজ শাহ তুগলক মালিক মকবুলকে ভাই বলে ডাকতেন এবং তাকে খান-ই-জাহান উপাধি দেন[৬]।
আধুনিকায়ন
সম্পাদনাসুলতান ফিরোজ শাহ তুগলক তার চাচাতো ভাই মুহাম্মদ বিন তুগলকের রাজ্য পরিচালনা থেকেই অনেক কিছু শিখেছিলেন। সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি রাজ্যের হারানো অংশগুলো পূনরূদ্ধারের কোন চেষ্টাই করেন নি, বরং তার বদলে যতটুকু তার রাজ্যের অধীনে ছিল ততটুকুই ভালভাবে শাসন করার চেষ্টা করে যান। তার সম্রাজ্যের বিদ্রোহিদের বিরূদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ বন্ধ রাখেন কারণ সমস্ত বিদ্রোহীই তার চাচাতো ভাই মুহাম্মদ বিন তুগলকের আমলে জন্ম নেয় এবং তিনি নতুন করে এগুলোকে উষ্কে দিতে চান নি। তিনি তার রাজ্যে পিতার বদলে পুত্র প্রথা চালু করেন। সেনাবাহিনী কিংবা রাজকার্য যেখানেই হোক পিতা যদি উপস্থিত না হতে পারতেন তাহলে পুত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া যেত। তিনি সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করেন এবং হাত কেটে ফেলা, গর্দান নেওয়া সহ সমস্ত প্রকার কঠোর শাস্তি দেওয়া বন্ধ করেন। এছাড়াও তিনি মুহাম্মদ বিন তুগলকের আমলে আরোপিত ভূমির উপর অতিরিক্ত কর প্রত্যাহার করেন। এটা মনে করা হয় যে সুলতান ফিরোজ শাহ তুগলকের আমল ভারতের মধ্যযুগের ইতিহাসে সবচেয়ে দূর্নিতীগ্রস্থ ছিল। একটা গল্প থেকে জানা যায় যে সুলতান একবার এক সিপাহীকে একটি সোনার টংকা দেন আস্তাবলের দাড়োয়ানকে ঘুষ দিয়ে তার ঘোড়া আস্তাবল থেকে ছাড়ানোর জন্য। এছাড়াও সূলতানের সেনবাহিনীর প্রধান ছিলেন ইমাদুল-মুল্ক বাশির যে প্রথমদিকে সুলতানের কৃতদাশ ছিল। সুলতানের এই সেনাপতি অবৈধ পথে প্রায় তের কোটি টংকার সম্পদ অর্জন করেছিল যেখানে পুরো সম্রাজ্যের উত্তোলিত করের পরিমাণ ছয় কোটি সাতান্ন লাখ টংকার বেশি ছিল না।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ তুগলক শাহীস অফ দিল্লি: Chart The Imperial Gazetteer of India, 1909, v. 2, p. 369.
- ↑ Elliot, Henry Miers, Sir; Dowson, John (১৮৭১)। "Chapter XVI, Táríkh-i Fíroz Sháhí of Shams-i Siráj 'Afíf"। The history of India, as told by its own historians: The Muhammadan period। London: Trübner and Company। পৃষ্ঠা 273।
- ↑ Tibb Firoz Shahi (1990) by Hakim Syed Zillur Rahman, Department of History of Medicine and Science, Jamia Hamdard, New Delhi, 79pp
- ↑ Sultan Firoz Shah Tughlaq by M. Ahmed, 1978, Chugh Publications, New Delhi p. 46 and 95
- ↑ A History of India, H. Kulke and D. Rothermund, 1998, Routledge, p.167, আইএসবিএন ০-৪১৫-১৫৪৮২-০
- ↑ The Delhi Sultanate: A Political and Military History, P. Jackson, 1999, Cambridge University Press, p. 186, আইএসবিএন ০-৫২১-৫৪৩২৯-০
পূর্বসূরী মুহাম্মদ বিন তুগলক |
দিল্লির সুলতান ১৩৫১–১৩৮৮ |
উত্তরসূরী দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুগলক |
নতুন রাজবংশ | তুগলক রাজবংশ ১৩২০–১৩৮৮ |