ফরিদুন্নাহার লাইলী

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

ফরিদুন্নাহার লাইলী (জন্ম: ১২ ডিসেম্বর ১৯৫৪) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য। [১]তিনি নবম জাতীয় সংসদেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত সংরক্ষিত নারী আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।[২] ফরিদুন্নাহার লাইলী বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পূর্বে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে ছিলেন।

ফরিদুন্নাহার লাইলী
বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য।
কাজের মেয়াদ
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ – অদ্যাবধি
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১২ ডিসেম্বর ১৯৫৪
নোয়াখালী
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গীমরহুম শাহ আকবর চানধন
সন্তানডা. এস. এম. আকবর জ্যাফরী
প্রাক্তন শিক্ষার্থীচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ

পারিবারিক জীবন

সম্পাদনা

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী ১২ ডিসেম্বর ১৯৫৪ সালে নোয়াখালী জেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের গোরাপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম সাইদুর রহমান এবং মাতা মরহুম মাহমুদা বেগমের তৃতীয় সন্তান। ফরিদুন্নাহার লাইলী কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (বি.এ. অনার্স) ও স্নাতকোত্তর (এম.এ) ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সফল ফরিদুন্নাহার লাইলীর স্বামী মরহুম শাহ আকবর চানধন পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ১৯৬৮-৬৯ সালে নোয়াখালী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন এবং শহর ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন সময় ছাত্র ও গণ-আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে ছিল তাঁর সক্রিয় ভূমিকা। জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি ও জনাব মাহমুদুর রহমান বেলায়েত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং জনাব আবদুল মালেক উকিল, জনাব নুরুল হক, ইস্কান্দার কচি, অধ্যাপক হানিফসহ নোয়াখালীর প্রবীণ নেতাদের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন তিনি। তাঁর একমাত্র সন্তান ডা. এস. এম. আকবর জ্যাফরী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে বর্তমানে ২৯তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে কর্মরত। তার সহধর্মিণী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা

ফরিদুন্নাহার লাইলী বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নির্দেশে এবং পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামসুন্নহার হলের নির্বাচিত ভিপি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর দলের চরম সংকটাপন্ন সময়ে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোপনে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। [৩]

শিক্ষাজীবনে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। লাইলী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কুমিল্লা উইমেন্স কলেজ শাখার সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সামছুন নাহার হল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সামছুন নাহার হল ছাত্রীসংসদের ভিপি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে ফরিদুন্নাহার লাইলী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ফরিদুন্নাহার লাইলী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্বও একাধিক মেয়াদে পালন করেছেন। তাঁর দায়িত্ব পালনকালেই দেশে অন্যতম বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানে। তিনি দুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন। জনমানব বান্ধব ফরিদুন্নাহার লাইলী বর্তমানে তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদকের দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করছেন।

২০০১-এর নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক ঘোষিত সব কর্মসূচিতে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।[৪] সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মহিলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক ওই সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতেও নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার গ্রেপ্তার মুহুর্ত থেকে তাঁর মুক্তি লাভ করা পর্যন্ত প্রতিদিনই তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে সাবজেলের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে বহুবার কারাগারে যেতে হয়েছে।

ফরিদুন্নাহার লাইলী বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পূর্বে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে ছিলেন। [৫]

কর্মজীবন

সম্পাদনা

ফরিদুন্নাহার লাইলী পেশাগতভাবে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।[৬] [৭] তাছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি, বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি ঢাকার সিনিয়র সহসভাপতি, নোয়াখালী জেলা সমিতি ঢাকা ও লক্ষ্মীপুর সমিতি ঢাকার আজীবন সদস্য হিসেবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ফরিদুন্নাহার লাইলী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল-বাংলাদেশের সাবেক সহসভাপতি ও এপেক্স ইন্টান্যাশনালের সাবেক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা