ফরাসি দ্রাক্ষাসুরার ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

ফরাসি দ্রাক্ষাসুরার ইতিহাস, প্রায় ২৬০০ বছরের পুরোনো। যখন খৃ.পূ. ৬ শতাব্দিতে ফোসিয়ানসরা মার্সেই প্রতিষ্ঠা করে, দ্রাক্ষা চাষ হয়ত তারও আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। রোমানরা গল অঞ্চলের বদলে, অন্যপারে দ্রাক্ষা চাষ বাড়ানোর জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। দ্রাক্ষাসুরা এলাকার তালিকায় যে জায়গাগুলির নাম আছে, সেই জায়গাগুলি অর্থাৎ বোর্দোঁ, বার্গান্ডি, আলসাস, শ্যাম্পেন, ল্যাঙ্গুয়েডক, লোয়ার ভ্যালিরন ইত্যাদি, দ্রাক্ষাসুরার জন্য সুপরিচিত।

ফ্রান্সের মুখ্য দ্রাক্ষাসুরা অঞ্চল

দ্রাক্ষাসুরার ইতিহাসের ধারাণাতে দেখা গিয়েছিল, ফরাসি দ্রাক্ষাসুরা শিল্প, ব্যবসায়িক স্বার্থে ইংরেজ বাজার ও ডাচ ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হত। ফরাসি বিপ্লবের আগে ক্যাথলিক চার্চই ছিল ফ্রান্সের বার্গান্ডি, শ্যাম্পেনের মতো স্থা্নের সব থেকে বড় দ্রাক্ষা বাগিচার মালিক ও পরিচালক, যেখানে টেরোয়ার বিষয়টি সম্বন্ধে ধারণাটি গড়ে উঠেছে। এইভাবে নানা আভ্যন্তরীণ ও বাইরের প্রভাবে, ফরাসি দ্রাক্ষাসুরা শিল্প সারা পৃথিবীর সুরা শিল্পের মধ্যে, তার ইতিহাস ও তার রকমারি সুরার বিশেষত্বের কারণে উচ্চতার আসন লাভ করেছে। বিংশ শতাব্দির শেষভাগ ও একবিংশ শতাব্দির শুরু থেকে, বিশ্ব বাজারের পরিবর্তন আসে ও অন্যান্য ইউরোপীয় সুরা উৎপাদন এলাকার যেমন, ইতালিস্পেনের সঙ্গে, তথা নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়াইনের অন্তর্গত ক্যালিফোর্নিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। [১]

প্রাচীন ইতিহাস সম্পাদনা

পুরাতাত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, গল-এ সেল্টিক সভ্যতা সময়েই ভিটিস ভিনিফেরা জাতীয় দ্রাক্ষা ক্ষেতের প্রচলন ছিল। প্রায় ১২,০০০ হাজার বছর আগেই, গ্রীক ও রোমান সংস্কৃতির প্রভাবের পূর্বেই ফ্রান্সের সর্বত্র আঙুরের বীজ পাওয়া যেত, যার কিছু প্রমাণ লেক জেনেভার কাছে পাওয়া গেছে।[২] খৃ.পূ. ৬ঠ শতাব্দিতে গল-এর সুরা ইতিহাসে এক বড় সন্ধিক্ষণ এল, যখন গ্রীক অভিবাসীরা ফিনিশিয়া থেকে আনাতুলিয়া এসে মাসালিয়ার পত্তন করল। খৃ.পূ. ২য় শতকে, মাসালিয়া (তখন মাসিলিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেছে) একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর, যার অবস্থান রোম থেকে রোমান বসতি সাগুন্টামের (বর্তমান স্পেনের বালেনসিয়ার কাছে) মধ্যবর্তী বাণিজ্যপথে। রোমান বসতিতে যত লিগুরীয়, আলোব্রজেসআলভারনিদের আক্রমণ হতে থাকল, মাসিলিয়ায় রোমান প্রভাব তত ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। স্বভাবতই, ওই এলাকাটি রোমান প্রদেশে পরিণত হল, যা প্রভিনসিয়া নামে পরিচিত হত ও পরবর্তীকালে গালিয়া নারবোনেনসিস নামে পরিচিত হয়।[১]

 
ভিয়েনির রোমান ভগ্নাবশেষ। প্লিনির (বড়) মতে ভিয়েনির অ্যালোব্রজেসরা যে রজনযুক্ত দ্রাক্ষাসুরা বানাতো, তার প্রতি রোমান বা স্থানীয়রা অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিল।

প্রাচীন গ্রীক বসতিস্থাপনকারীরা গল-এর দ্রাক্ষাচাষে স্পষ্টত ভূমধ্যসাগরীয় দৃষ্টিভঙ্গি এনেছিল। তাদের ধারণা অনুযায়ী, আঙুর সেই আবহাওয়াতে ভাল হয়, যেখানেঅলিভডুমুর জাতীয় গাছ ভাল হয়। তাই প্রথম যুগের দ্রাক্ষা ক্ষেত ছিল অপেক্ষাকৃত গরম ভূমধ্যসাগরীয় তট সংলগ্ন এলাকায়। খৃ.পূ. ৭ম শতকে, গ্রীক ভূগোলবিদ স্ট্রাবো লিখেছেন, মাসিলিয়ার চারপাশের এলাকাতে ও নারবোতে ইতালির মতো ভাল আঙুর হয় কিন্তু আরও উত্তরে অবস্থিত গল-এর আবহাওয়া অলিভ, ডুমুর বা আঙুর ফলনের তেমন উপযুক্ত নয়। [৩] খৃ.পূ. ১৫০ শতাব্দিতে, রোমান শাষণকালে, ওই এলাকায় যে পরিমাণ দ্রাক্ষাসুরা ব্যবহারে লাগত, আইন মাফিক তার উৎস ইতালীয় হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল।[৪] খৃ.পূ. ১ম শতাব্দির পর সমগ্র গল-এ দ্রাক্ষাসুরা অ্যাম্ফোরা/অ্যাম্ফোরির খন্ড নানা জায়গায় পাওয়া গেছে, বিশেষত সমুদ্র বা নদীর তটবর্তী স্থানগুলিতে। খৃ.পূ. ২য় শতকের কিছু প্রাচীন অ্যাম্ফোরির গায়ে ইবেরীয় সিলমোহর পাওয়া যায়, যা নির্দেশ করে, এই বিতরণ যুদ্ধ বিজয়ের আগে। [৫] খৃষ্টীয় ১ম শতাব্দির আগে, গল-এর দ্রাক্ষাসুরার খ্যাতির কোনো প্রামাণ্য নথি নেই। প্লিনি (বড়) তাঁর ন্যাচারাল হিস্ট্রি (বই ১৪) তে লিখেছেন, ভিয়েনার কাছাকাছি এলাকা (বর্তমান রন দ্রাক্ষাসুরা এলাকার ভিয়েনে), অ্যালোব্রজেসরা রজন যুক্ত দ্রাক্ষাসুরা তৈরী করত যা সেই সময় প্রখ্যাত ও ব্যয়বহুল ছিল। [১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

উল্লেখ সমূহ সম্পাদনা

  1. Robinson, pp. 281–83.
  2. H. Johnson Vintage: The Story of Wine pp. 82–89. Simon and Schuster 1989 আইএসবিএন ০-৬৭১-৬৮৭০২-৬
  3. Strabo, Geography 4.2.1.
  4. Encyclopaedia Romana: Wine and Rome.
  5. ""Documentary Amphorae", Athena Review 1.4."। ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২০ 

কাজের উদ্ধৃতি সম্পাদনা