ফত্তেবাহাদুর সিংহ

নেপালি সাংবাদিক

ফত্তেবাহাদুর সিংহ (নেপালি: फत्तेबहादुर सिंह्; ১৯০২–১৯৮৩) ছিলেন একজন নেপালি কবি ও সাংবাদিক। তিনি নেপাল ভাষায় সর্বপ্রথম দৈনিক সংবাদপত্র চালু করেন। আপন মাতৃভাষার উন্নয়নের স্বার্থে জড়িত থাকার জন্য তাকে তৎকালীন শাসকদের সাজার মুখোমুখি হতে হয় এবং নেপাল ভাষার অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সাথে তিনি জেলও খাটেন।

১৯৫৬ সালে ফত্তেবাহাদুর সিংহ
নেপাল ভাষা পত্রিকা-র প্রচ্ছদ, ৫ নভেম্বর ১৯৬০

ফত্তেবাহাদুর কাঠমান্ডুতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম কুলদীপ সিংহ এবং মাতার নাম দেবলানি সিংহ। তার দাদা সিদ্ধিদাস মহাজু ছিলেন নেপাল ভাষার অন্যতম কবি এবং নেপাল ভাষার চার স্তম্ভের অন্যতম। ১৯৩০ সালে বুদ্ধধর্ম ওয়া নেপাল ভাষা পত্রিকায় ফত্তেবাহাদুরের প্রথম কবিতা “বানমলাহগু চাল” (অর্থ “বদচাল”) প্রকাশিত হয়।[১]

কারাবরণ সম্পাদনা

নেপালের স্বৈরতান্ত্রিক রানা শাসনামলে নেপাল ভাষার প্রতি অবদমনাত্মক আচরণ করা হতো এবং এই ভাষার লেখক ও প্রকাশকদের গ্রেফতার ও লাঞ্ছিত করা হতো।[২] ১৯৩৯ সালে ফত্তেবাহাদুর সিংহ নেপাল ভাষার বিভিন্ন কবিদের কবিতা ও গীতিকা সম্পাদনা ও সংকলন করে নেপালি বিহার নামে একটি বই প্রকাশের করেন। এর জন্য তাকে আজীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।[৩][৪] তিনি ভারতের বিহার রাজ্যের বেতিয়া থেকে বইটির মুদ্রণ করে নেপালে নিয়ে এসেছিলেন। মুদ্রিত বইয়ের অর্ধেক পরিমাণ বিক্রির পরপরই অবশিষ্ট বই বাজেয়াপ্ত করা হয়।[৫]

১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ফত্তেবাহাদুরকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। ১৯৪৫ সালে চিত্তধর হৃদয়, সিদ্ধিচরণ শ্রেষ্ঠ প্রমুখ নেপাল ভাষার অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সাথে তিনিও জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৫১ সালে আন্দোলনের মুখে রানা শাসনামলের অবসান ঘটে এবং নেপালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।[৬] নেপালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে নেপাল ভাষার প্রকাশনার রুদ্ধদ্বারও উন্মোচিত হয়।

নেপাল ভাষা পত্রিকা সম্পাদনা

১৯৫৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ফত্তেবাহাদুর সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে নেপাল ভাষা পত্রিকা (नेपाल भाषा पत्रिका) প্রকাশ শুরু করেন। নেপাল ভাষায় এটিই ছিল প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র। এটি কাঠমান্ডু থেকে প্রকাশিত হতো। তৎকালীন নেপালের কয়েকটিমাত্র দৈনিক পত্রিকার এটি ছিল অন্যতম।[৭]

১৯৬২ সালে ফত্তেবাহাদুর সিংহ নেপালি সাংবাদিক ফেডারেশনের (ফেডারেশন অব নেপালিজ জার্নালিস্টস) সভাপতি নির্বাচিত হন।[৮] এছাড়া, ১৯৫৫ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি নেপাল ভাষা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।[১]

নেপাল ভাষা পত্রিকা তাদের মাতৃভাষার অধিকার আদায় করে নেয় এবং তাতে নেপালের ব্যবসায়িক আগ্রহেরও প্রতিফলন ঘটায়।[৯] ফত্তেবাহাদুর সিংহ ১৯৮৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর নেপাল ভাষা পত্রিকার প্রকাশনা খুব বেশিদিন অব্যাহত থাকেনি।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bajracharya, Phanindra Ratna (2003). Who's Who in Nepal Bhasha. Kathmandu: Nepal Bhasa Academy. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৫৬০-০-X. Page 37.
  2. Lienhard, Siegfried (1992). Songs of Nepal: An Anthology of Nevar Folksongs and Hymns. New Delhi: Motilal Banarsidas. আইএসবিএন ৮১-২০৮-০৯৬৩-৭. Page 4.
  3. Shrestha, Siddhicharan (1992). Siddhicharanya Nibandha ("Siddhicharan's Essays"). Kathmandu: Phalcha Pithana. Page 73.
  4. Tumbahang, Govinda Bahadur (জানুয়ারি ২০১০)। "Marginalization of indigenous languages of Nepal"Contributions to Nepalese Studies। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১২ 
  5. Tuladhar, Prem Shanti (2000). Nepal Bhasa Sahityaya Itihas: The History of Nepalbhasa Literature. Kathmandu: Nepal Bhasa Academy. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৫৬০-০-X. Page 105.
  6. Brown, T. Louise (1996). The Challenge to Democracy in Nepal: A Political History. Routledge. আইএসবিএন ০-৪১৫-০৮৫৭৬-৪, 9780415085762. Page 21.
  7. Press Foundation of Asia (1978). Asian Press & Media Directory. Press Foundation of Asia. Page 252.
  8. "Federation of Nepali Journalists: Past and Present"। Federation of Nepali Journalists - UK। ১৯ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১২ 
  9. Rose, Leo E. (1971). Nepal: Strategy for Survival. University of California Press. আইএসবিএন ০-৫২০-০১৬৪৩-২, 9780520016439. Page 211.