প্রণাম
প্রণাম হল একটি "সম্মান সূচক অভিবাদন" বা "শ্রদ্ধাপূর্বক ভক্তি" কোন কিছুর সামনে বা কোন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে। সাধারণত এটা করা হয় দাদা, দিদি, বাবা-মা, পিতামহ, গুরুজন, শিক্ষক বা বয়সে বড় বা সম্মানের উপযোগী এমন যে কাউকে। আবার, দেব দেবীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ থেকেও এটি করা হয়। এটি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।[১] হিন্দুধর্মাবলম্বী এবং বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এটি দেখা যায়।
উৎপত্তি
সম্পাদনাপ্রণাম শব্দটি তৎসম শব্দ, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে এটি বাংলা ভাষায় এসেছে। সংস্কৃতে প্র (प्र) উপসর্গযুক্ত নম্ (नम) ধাতু থেকে শব্দটির উৎপত্তি। শব্দটির অভিধানগত অর্থ হল — 'ভূমিতে বা পায়ের উপর আনত হইয়া অভিবাদন'।[২] 'প্র' উপসর্গটি কোনকিছুর উৎকর্ষ প্রসিদ্ধি আধিক্য ব্যাপকতা আরম্ভ প্রভৃতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।[২] আর নম্ ধাতু দিয়ে বোঝানো হয় "আনমিত বা প্রসারণ"[৩] অথবা নমিত বা নত হওয়া। দুটো শব্দ একত্রিত করে প্রণাম শব্দের উৎপত্তি যার মানে — কোন কিছুর সামনে প্রকৃষ্টরূপে আনমিত হওয়া। সংস্কৃতির দিক থেকে এটিই "সম্মান সূচক অভিবাদন" হিসেবে ধরা হয়, কোন বস্তু, ব্যক্তি, গুরুজন, দেব-দেবীর সামনে।
প্রকার
সম্পাদনাএটি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং হিন্দু ঐতিহ্যে পাওয়া যায়।[৪]
প্রণামের প্রকারভেদ
সম্পাদনাপ্রণাম ছয় প্রকার:[৫]
- অষ্টাঙ্গ - দুই হাত, দুই পা, দুই হাঁটু, বুক এবং চিবুক দেহের এই আটটি অংশ মেঝেতে স্পর্শ করে এই প্রণাম করা হয়।
- ষষ্ঠাঙ্গ – পায়ের আঙ্গুল, হাঁটু, হাত, চিবুক, নাক এবং কপাল দিয়ে মাটি স্পর্শ করা।
- পঞ্চাঙ্গ – হাঁটু, বুক, চিবুক, কপাল এবং কপাল দিয়ে মাটি স্পর্শ করা।
- দণ্ডবত – কপাল নিচু করা এবং মাটি স্পর্শ করা।
- নমস্কার – কপাল স্পর্শ করা হাত। এটি লোকেদের মধ্যে প্রকাশ করা অভিবাদন এবং অভিবাদনের আরও সাধারণ রূপ।[৫][৬]
- অভিনন্দন – বুক স্পর্শ করে হাত ভাঁজ করে সামনে বাঁকানো।
ক্ষমাপ্রার্থনা হিসেবে
সম্পাদনাএকজন ব্যক্তির পা ভুলবশত কোনো বই বা কোনো লিখিত বস্তু (যা জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয় ), অর্থ (যা বিবেচনা করা হয়) স্পর্শ করলে ডান হাত দিয়ে হাতের ইশারায় ক্ষমা চাওয়া একটি হিন্দু রীতি। সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর প্রকাশ হিসাবে ) বা অন্য ব্যক্তির পা। আপত্তিকর ব্যক্তি প্রথমে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে বস্তুটিকে এবং তারপর কপাল এবং/অথবা বুকে স্পর্শ করে।
অভিবাদন সম্পর্কিত ধরণ
সম্পাদনাপ্রনামের একটি রূপ হল চরণস্পর্শ সম্মানের চিহ্ন হিসাবে পায়ের স্পর্শের সাথে মিলিত প্রণাম। এটি দর্শনের সময় মন্দিরগুলিতে দেখা যেতে পারে। এই সম্পর্কিত প্রণাম ভারতীয় সংস্কৃতিতে সবচেয়ে সাধারণ। বাবা-মা, দাদু-দিদা, বয়স্ক আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক এবং সাধুদের মতো বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য এটি করা হয়।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Pranama Himalayan Academy, pp. 481
- ↑ ক খ সংসদ বাঙ্গালা অভিধান : শৈলেন্দ্র বিশ্বাস সংকলিত। কলকাতা : সাহিত্য সংসদ
- ↑ Apte Dictionary, See: pra, aanama
- ↑ Sivaya Subramuniyaswami। Loving Ganesha। Himalayan Academy Publications। পৃষ্ঠা 481। আইএসবিএন 978-1-934145-17-3।
- ↑ ক খ Chatterjee, Gautam (২০০১), Sacred Hindu Symbols, Google books, পৃষ্ঠা 47–48, আইএসবিএন 9788170173977 .
- ↑ Bhatia, S., & Ram, A. (2009). Theorizing identity in transnational and diaspora cultures: A critical approach to acculturation. International Journal of Intercultural Relations, 33(2), pp 140–149