পূর্ব সুমাত্রা রাষ্ট্র (নেগারা সুমাতেরা তিমুর) ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে উত্তর সুমাত্রায় ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডের আক্রমণের পর স্থাপিত হয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ইন্দোনেশীয় জাতীয় বিপ্লব সমাপ্তকারী শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে পূর্ব সুমাত্রা ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হয়। প্রজাতন্ত্রও এই যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে পূর্ব সুমাত্রা চূড়ান্তভাবে উত্তর সুমাত্রার অংশ হিসেবে প্রজাতন্ত্রের অংশ হয়।[]

নেগারা সুমাতেরা তিমুর
ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য
১৯৪৭–১৯৫০
ইন্দোনেশিয়ার প্রতীক
প্রতীক

সরকার
রাষ্ট্রপতি 
• ১৯৪৭-১৯৫০
টেনকু মনসুর
ঐতিহাসিক যুগইন্দোনেশীয় জাতীয় বিপ্লব
• প্রতিষ্ঠিত
২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৭
• বিলুপ্ত
১৫ আগস্ট ১৯৫০
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র। ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্র লাল কালিতে প্রদর্শিত। সর্ববামে সাদা অংশটি পূর্ব সুমাত্রা।

ইতিহাস

সম্পাদনা

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে ডাচরা সুমাত্রা ও এর পূর্বাঞ্চলে পুনরায় ঔপনিবেশিক শাসন স্থাপন করতে চেয়েছিল। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজে জাপানের আক্রমণের পূর্বেই এই অঞ্চল উর্বর চাষাবাদ ও তেল ক্ষেত্র ছিল। যুদ্ধপূর্ববর্তী ডাচরা স্থানীয় মালয়ী সুলতানদের সাথে শাসন পরিচালনা করত এবং তারা এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ পাশ্চাত্য পুজির জন্য সহজলভ্য করে তোলে। ১৯৩০ এর দশক নাগাদ এসব চাষাবাদ ক্ষেত্রের কর্মী এবং মেদানের শহুরে মধ্যবিত্তদের অধিকাংশ সুমাত্রা ও জাভার অন্যান্য স্থান থেকে এসেছিল। অন্যদিকে জাতিগত সংখ্যালঘু যেমন মালয়ী, সিমালুনগুন ও অভিবাসী চীনারা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় বিশেষ অবস্থান লাভ করত।

জাপানিদের আত্মসমর্পণ এবং ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে সূকর্ণমুহাম্মদ হাত্তা কর্তৃক ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার পর নবগঠিত ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্র পূর্ব সুমাত্রায় কার্যালয় স্থাপন শুরু করে। তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা স্বাধীনতাপন্থি তরুণদের (পেমুদা) উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারেননি। বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা জাপানিদের কাছ থেকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ লাভ করেছিল। প্রজাতন্ত্রের রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট হয়ে তারা ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে "সামাজিক বিপ্লব" শুরু করে। বিপ্লবের সময় মালয়ী ও সিমালুনগুন অভিজাতদের হত্যা করা হয়, প্রাক্তন সালতানাতগুলোকে উৎখাত করা হয় এবং ধনী ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামগুলো লুট করা হয়। একবছর পরে আক্রমণকারী ডাচরা দেখতে পায় যে তারা এসকল গোষ্ঠীর উপর নির্ভর করে পূর্ব সুমাত্রায় নতুন সরকার স্থাপন করতে পারে যাতে প্রজাতন্ত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করা যায়।

ডাচ অভিযানের পর পূর্ব সুমাত্রার স্বায়ত্তশাসন দাবির জন্য গঠিত কমিটির তেরজন সদস্যের মধ্যে বারোজন ছিলেন মালয়ী বা সিমালুনগুন বংশোদ্ভূত।[] পূর্ব সুমাত্রার প্রথম ও একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন ড. টেনকু মনসুর। তিনি ব্যক্তিজীবনে আশানের সাবেক সুলতান ও যুদ্ধপূর্ব মালয়ী সংগঠন পেরসাতুয়ান সুমাতেরা তিমুর (পূর্ব সুমাত্রা এসোসিয়েশন) এর প্রধানের চাচা ছিলেন। নতুন সরকার এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সালতানাতকে পুনপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেনি। এছাড়া ডাচদের চাপ সত্ত্বেও সরকার কোনো নির্বাচন বা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে প্রশাসনে গ্রহণ করার পদক্ষেপ নেয়নি।[]

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ডাচ-ইন্দোনেশীয় গোল টেবিল সম্মেলন শেষ হওয়ার পর ডাচরা পূর্ব সুমাত্রা থেকে তাদের সামরিক সমর্থন প্রত্যাহার করে। এরপর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ড. মনসুর ও মুহাম্মদ হাত্তা পূর্ব সুমাত্রাকে ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের অংশ করার জন্য আলোচনায় বসেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট পূর্ব সুমাত্রা তাপানুলির অংশ হিসেবে উত্তর সুমাত্রার অংশ হয়।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Reid, Anthony. The Blood of the People: Revolution & the End of Traditional Rule in Northern Sumatra. Singapore: NUS Press, 2014. 274–277
  2. Reid, 274.
  • Friend, Theodore (২০০৩), Indonesian Destinies, Cambridge: Harvard University Press, আইএসবিএন 0-674-01834-6. 
  • Kahin, George McTurnan (১৯৭০), Nationalism and Revolution in Indonesia, Cornell University Press, আইএসবিএন 0-8014-9108-8. 
  • Reid, Anthony (২০১৪), The Blood of the People: Revolution & the End of Traditional Rule in Northern Sumatra, Singapore: NUS Press, আইএসবিএন 978-9971-69-637-5. 
  • Ricklefs, M.C. (২০০১), A History of Modern Indonesia Since c. 1200 (3rd সংস্করণ), Stanford: Stanford University Press, আইএসবিএন 0-8047-4480-7. 
  • Frederick, William H.; Worden, Robert L ., সম্পাদকগণ (১৯৯৩), Indonesia: A Country Study, Washington: Library of Congress.