পুপু হ্রদ
পুপু হ্রদ (স্পেনীয়: Lago Poopó স্পেনীয়: [ˈlaɣo po.oˈpo]) বলিভিয়ার আল্টিপ্লানো পর্বতের পাদদেশে অরুরো অঞ্চলে অবস্থিত একটি লোনা পানির হ্রদ। এটা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ এবং এর বেশিরভাগ পানি আসে দেদাগুয়াদেরো নদী থেকে। দেদাগুয়াদেরো নদীর পানি আসে উত্তরের টিটিকাকা হ্রদ থেকে। মৌসুম ভেদে হ্রদের পানি ওঠানামা করে।[১] ২০০২ সালে হ্রদটি রামসার কনভেনশন এর অধীনে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়।[২][৩][৪]
পুপু হ্রদ বা লেক পুপু | |
---|---|
![]() পুপু হ্রদ, ১৯৯১ | |
অবস্থান | Altiplano |
স্থানাঙ্ক | ১৮°৩৩′ দক্ষিণ ৬৭°০৫′ পশ্চিম / ১৮.৫৫০° দক্ষিণ ৬৭.০৮৩° পশ্চিম |
ধরন | Endorheic নোনা হ্রদ |
স্থানীয় নাম | লাগো পুপু {{স্থানীয় নামের পরীক্ষক}} ত্রুটি: প্যারামিটারের মান ত্রুটিপূর্ণ (সাহায্য) |
প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহ | দেদাগুয়াদেরো নদী |
প্রাথমিক বহিঃপ্রবাহ | evaporation |
অববাহিকা | ২৭,৭০০ কিমি২ (১০,৭০০ মা২) |
অববাহিকার দেশসমূহ | বলিভিয়া |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ১,০০০ কিমি২ (৩৯০ মা২) |
গড় গভীরতা | >১ মি (৩ ফু ৩ ইঞ্চি) |
পৃষ্ঠতলীয় উচ্চতা | ৩,৬৮৬ মি (১২,০৯৩ ফু) |
জনবসতি | অরুরো, বলিভিয়া ছাল্লাপাতা, হুয়ারি, পেরু |
অবৈধ উপাধি | |
অন্তর্ভুক্তির তারিখ | ১১ জুলাই ২০০২ |

অবস্থান সম্পাদনা
বলিভিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ পুপু হ্রদকে স্থানীয়রা ডাকে লাগু পুপু নামে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ হাজার ৯০ ফুট উঁচু এই হ্রদের অবস্থান বলিভিয়ার মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলে। প্রায় ৯৭৭ বর্গমাইল অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত এই হ্রদের গভীরতা গড়ে প্রায় ৮-১০ ফুট। বিখ্যাত টিটিকাকা হ্রদে থেকে উদ্ভূত দেসাগুয়াদেরো নদীর পানি ছিল এই হ্রদের প্রধান পানির উৎস। অতিরিক্ত উচ্চতার দরূণ হ্রদের পানি দ্রুত শুকিয়ে যেত, যার খেসারত হিসেবে এর পূর্বে প্রায় দুই বার শুকিয়ে গিয়েছিল এই হ্রদটি। তবে অতীতে বার বার বিপর্যয়ের মুখে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এটি।
শুকিয়ে যাওয়া সম্পাদনা
পুপু হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বলিভিয়া সরকার এক বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে ‘এল নিনো‘কে এর জন্য দায়ী করা হয়। আমেরিকা মহাদেশজুড়ে শীতকালের পর পরই জলাশয়বেষ্টিত বিষুবরেখা বরাবর অবস্থিত অঞ্চলসমূহে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। এই ঘটনাকে আবহাওয়াবিদগণ এল নিনো নামে ডাকেন। কয়েক মাস ব্যাপী খরার ফলে বিষুবরেখা বরাবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলসহ আমেরিকা মহাদেশের জলবায়ু, সমুদ্রে পানির পরিমাণ এবং সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র্যের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
পুপু হ্রদ অঞ্চলে খনি শিল্পের প্রসার ঘটলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে ধ্বংস হয়ে যায় মূল্যবান মৎস সম্পদ। প্রতিবছর গড়ে এক ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
হ্রদের পানি ছাড়াও পুপুর অন্যতম প্রধান সম্পদ ছিল এর জীববৈচিত্র্য। প্রায় ৩৪ প্রজাতির পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত থাকতো পুপুর পরিবেশ। স্থানীয় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, পুপুর পানিতে চারটি বিরল প্রজাতির মাছ ছাড়াও বিভিন্ন লোনা পানির মাছ পাওয়া যেত। বিগত দশকে এর পানি কমতে থাকলে নতুন করে জরিপ চালানো হয়। ২০১৪ সালে হাজার হাজার মাছ মরে পুপুর পানিতে ভেসে উঠে। বিজ্ঞানীরা জানান, অতিরিক্ত পরিমাণে বিষাক্ত ক্যাডমিয়াম এবং সীসার উপস্থিতির কারণে পুপুর পানি মাছের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা
প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে পুপুর বুক থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ফলে পুনরায় হ্রদের বুকে পানি সঞ্চিত হয়। ২০১৫-১৬ বর্ষা মৌসুমে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। টানা কয়েক মাস ধরে অব্যাহত খরার কবলে পড়ে এ হ্রদ। জার্মানীর বিজ্ঞানীদের পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, এ হ্রদে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০১৩ সালে প্রায় ১৬১ বিলিয়ন লিটার পানি ঘাটতি রয়েছে। জেনে অবাক হবেন যে, বর্তমানে পুরো হ্রদের ধারণক্ষমতার মাত্র ২ শতাংশ পানি অবশিষ্ট রয়েছে!
হ্রদ শুকিয়ে যাওয়ায় এর উপর নির্ভরশীল শত শত পরিবার নিজেদের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে শহরমুখী হয়েছেন। ২০১৫ পরবর্তী তিন বছরে হ্রদ পার্শ্ববর্তী উন্তাবি গ্রামের প্রায় অর্ধেক মানুষ শহরের দিকে পাড়ি দিয়েছে। এর আগে ১৯৯০ সালে পুপুর বুকে বাষ্পীভবন শুরু হয়েছিল। সেবার অগভীর এ হ্রদের প্রায় ৯০ শতাংশ পানি শুকিয়ে যায়। তিনটি স্থানে জমে থাকা সামান্য পানি ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। কিন্তু পুপু পুনরায় জেগে উঠে। এর ফলে নতুন করে পুপুর বুকে মানুষের জীবিক অন্বেষণ শুরু হয়।
বলিভিয়া সরকারের প্রচেষ্টায় হ্রদ অঞ্চলের প্রায় ৩,২৫০ জন শরণার্থীকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর সামগ্রিক প্রভাব বলিভিয়ায় অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। ২০১৮ এর ডিসেম্বর মাসে অরুরোর গভর্নর ভিক্টর হুগো সানচেজ পুপু হ্রদকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। এ ঘোষণায় পুরো বিশ্বের পরিবেশবিদরা আশঙ্কিত হয়ে পড়েন। কারণ, পুপু হ্রদ বিপর্যয় কোনো চূড়ান্ত পরিণতি নয়, বরং মহাবিপর্যয়ের সূত্রপাত মাত্র।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "Lake Poopó"। Encyclopædia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-১৮।
- ↑ 11 July 2002 "Ramsar, with Bolivia's help, surpasses 200 million hectares of global coverage"। Ramsar Convention Sectretariat। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Bolivia completes Ramsar SGF project on Lake Poopó"। Ramsar Convention Sectretariat। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৩। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Climate Change Claims; a Lake, and an Identity"। NYTimes। ৭ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৬।