দেশ থেকে দেশের বাইরে অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ চলে যাওয়াকে অর্থনীতির ভাষায় পুঁজি পাচার বলা হয়। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশ থেকে পুঁজি পাচার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক কারণেই পুঁজি পাচার হয়, তার মধ্যে হাতাশাজনক হলেও সত্যি বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজিও পাচার হচ্ছে।[১] উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫১তম। ২০১৩ সালে দাঁড়ায় ২৬তম। ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত গড়পড়তা পাচার হয়েছে ৫৫৮.৮ কোটি ডলার। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই পরিমাণ অর্থ কোনোক্রমেই নগণ্য নয়। ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দশ বছরে মোট পাচার হয়েছে ৫,৫৮৭.৭ কোটি ডলার[২]

ব্যাংক ঋণখেলাপিদের ওপর ২০১০ সালে প্রকাশিত আ প্রোফাইল অব ব্যাংক লোন ডিফল্ট ইন দ্য প্রাইভেট সেক্টর ইন বাংলাদেশ-এ উপস্থাপিত বাংলাদেশের ১২৫টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত জরিপের সংগৃহীত তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে ওই সব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিকেরা তাদের ব্যাংকঋণের একটা বড়সড় অংশ বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।[৩]

ভয়াভহতাঃ সম্পাদনা

২০১৩ সালে যে অর্থ পাচার হয়েছে সেই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ খাতের উন্নয়নের জন্য যে ব্যয় ২০১৫-১৬ সালে ধার্য করা হয়েছে, তার সমান।[২] যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোব্যাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা দেশের মোট জাতীয় বাজেটের দেড়গুণ।[১] প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।[১]

পাচার হওয়া অর্থের পরিমানঃ সম্পাদনা

১৯৭৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে – এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০১০ সময়কালে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬০ কোটি ডলার (৫২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সময়কাল এখন পর্যন্ত মোট অর্থের পরিমান (ডলারে ) এখন পর্যন্ত মোট অর্থের পরিমান (টাকায়)
২০১০ ২১৯ কোটি ডলার ১৭ হাজার কোটি টাকা
২০১১ ২৮০ কোটি ডলার ২২ হাজার কোটি টাকা
২০১২ [২] ৭২২.৫ কোটি ডলার
২০১৩[২]  ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা

যে সব কারণে অর্থ পাচার হয়ঃ সম্পাদনা

সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণেই অর্থনীতির অনেক খাতেই ধস নামে। যে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির, যেখানে বিনিয়োগ অত্যন্ত মন্থর, সেখানেই টাকাওয়ালাদের উদ্বৃত্ত অর্থ বিদেশে পাচার হয়। যেখানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অন্যদিকে ভৌত অবকাঠামোর অনুপস্থিতি অথবা অপ্রতুল ভৌত অবকাঠামো, সেখানে অর্থ পাচার হয়। পাচারকারীদের মধ্যে রয়েছে, চোরাচালানিরা এবং দেশ থেকে বিদেশে পূঁজি পাচারকারী ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস মালিক-শিল্পপতি, দুর্নীতিবাজ আমলা ও পুঁজি-লুটেরা রাজনীতিবিদেরা।[৩]

পাচার হওয়া অর্থ যে সব দেশে যায়ঃ সম্পাদনা

পাচার হওয়া অর্থের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরে।[৪]

তথ্যসুত্রঃ সম্পাদনা

  1. "দুর্নীতির' আমানত বেড়েছে ৪শ' কোটি, বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজি পাচার হচ্ছে"todaysangbad (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "পুঁজি পাচারের আবর্তে বাংলাদেশ"www.jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-১৯ 
  3. "পুঁজি পাচারকারীদের সেকেন্ড হোম"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-১৯ 
  4. bonikbarta.com। "পুঁজি পাচার বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে"বণিক বার্তা :: Bonikbarta.com | Online Business News and Entertainment from Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]