পারাদ্বীপ বন্দর
পারাদ্বীপ বন্দর [২] ভারতের পূর্ব উপকূলের ওড়িশা রাজ্যের জগৎসিংহপুর জেলার একটি প্রাকৃতিক, গভীর জলের বন্দর। এটি মহানদী নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে অবস্থিত। বন্দরটি কলকাতার দক্ষিণে ২১০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে এবং বিশাখাপত্তনাম থেকে ২৬০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে অবস্থিত। এই বন্দরের জলের গভীরতা ১০ মিটার এবং কার্গো ও খনিজ তেল বা ওয়েল টার্মিনালের জলের গভীরতা যথাক্রমে ১১-১২ মিটার ও ১৪-১৫ মিটার। [৩]
পারাদ্বীপ বন্দর | |
---|---|
অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
অবস্থান | পারাদ্বীপ, ওড়িশা |
স্থানাঙ্ক | ২০°১৫′ উত্তর ৮৬°৪০′ পূর্ব / ২০.২৫০° উত্তর ৮৬.৬৬৭° পূর্ব |
বিস্তারিত | |
চালু | ১২ মার্চ ১৯৬৬ |
পরিচালনা করে | পারাদ্বীপ পোর্ট ট্রাস্ট |
মালিক | ভারত সরকার |
উপলব্ধ নোঙরের স্থান | ২০ |
কর্মচারী | ৭০০ |
পরিসংখ্যান | |
বার্ষিক কার্গো টন | ১০৯.২৭৫ মিলিয়ন টন (২০১৮-১৯)[১] |
ওয়েবসাইট paradipport |
বন্দরটি পারাদ্বীপ পোর্ট ট্রাস্ট (পিপিটি) দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি একটি স্বশাসিত সংস্থা যা সম্পূর্ণ ভাবে ভারত সরকারের মালিকানাধীন।
ইতিহাস
সম্পাদনাবন্দরটির যেখানে নির্মাণ করা হয়েছিল সেই জমিটি ছিল ম্যানগ্রোভ জলাশয়, যা স্থানীয় গ্রামবাসীদের শিকার, মাছ ধরার এবং কাঠের সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হত।[৪] ১৯৪৮ সালে ভারত সরকার কর্তৃক বন্দর (টেকনিকাল) কমিটি বিশাখাপত্তনাম এবং কলকাতার মাঝে একটি অতিরিক্ত বন্দরের প্রয়োজনের কথা বলে।
পূর্ব উপকূলে নতুন এই বন্দরের প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পায়, কারণ দেশ ভাগের ফলে ঢাকা বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর ভারত থেকে পৃথক হয়ে যায়।[৪]
১৯৫০ সালে কেন্দ্রীয় জল ও বিদ্যুৎ কমিশন কলকাতা ও বিশাখাপত্তনামের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব রাখেন, তখন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী বিজু পাটনায়েক মহানদী নদীর মহোনায় পারাদ্বীপ বন্দর নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। পারাদ্বীপ বন্দর ছিল বিজু পট্টনায়েকের মস্তিষ্কপ্রসূত। পারাদ্বীপ বন্দরটির ভিত্তি প্রস্তর ৩ জানুয়ারি, ১৯৬২ সালে স্থাপন করেন ভারতের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। কালো গ্রানাইট পাথরের ওপর লেখাটি উড়িষ্যা, ইংরেজি ও হিন্দিতে একটি সহজ বার্তা লিখেছে: "জনগণের দ্বারা আকাঙ্ক্ষিত, আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি, এটি জাতীয় রোহোশ্বঅভিজ্ঞতা হবে"। উড়িষ্যার রাজ্য সরকার ১৫ মার্চ ১৯৬৪ সালে পারাদ্বীপ বন্দর নির্মাণ শুরু করে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ১ জানুয়ারি ১৯৬৫ বন্দর নির্মাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালনার সাথে যুক্ত হয়। লৌহ আকরিক বার্থের নির্মাণ শেষ হয় এবং আইএনএস "ইনভেস্টিগেটর" নামে একটি জাহাজ বন্দরের প্রথম নোঙর করে ১২ মার্চ ১৯৬৬ সালে। বন্দরটি পিটার স্টাম্বোলিক দ্বারা চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়। বন্দরটি কয়েক হাজার টন লোহা আকরিকের রপ্তানির সাথে কার্যক্রম শুরু করে এবং পরবর্তীতে ২১ শতকের প্রথম দশকে ৫০ মিলিয়ন টন কার্গো পরিবহনের দিকে অগ্রসর হয়।
সু্যোগ-সুবিধা
সম্পাদনাপারাদ্বীপ বন্দরে ১৩ মিটারের (৪৩ ফুট) ন্যূনতম গভীরতা সহ ২০ টি বার্থ বার রয়েছে। এটি ৯০,০০০ ডিডব্লুটি পর্যন্ত ওজনের জাহাজগুলি ধারণ করতে পারে। [৫]
সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কয়লা হ্যান্ডলিং ব্যবস্থার দ্বারা বন্দরটি প্রতিবছর ২০ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে পারে। একটি পয়েন্ট মুরিং সিস্টেম রয়েছে বন্দরে, যা ইন্ডিয়ান ওয়েলের কাঁচামালের জন্য অত্যন্ত বড় জাহাজ পরিচালনা করে।
২০১৫ সালের হিসাবে, ক্যাপসাইজ জাহাজগুলি পরিচালনা করার জন্য বন্দরটিকে সক্ষম করার জন্য বন্দরের গভীরতা অন্তত ১৫.৭ মিটার (৫২ ফুট) পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ৬ টি অতিরিক্ত বার্থ সহ একটি পশ্চিম ডক সম্পূর্ণ হয়েছে। অন্যান্য বৃহৎ সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলির সঙ্গে বন্দরটির পণ্যসম্ভার পরিচালনা ক্ষমতা ২০২০ সালের মধ্যে ১৮০ মিলিয়ন টনে বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। [৬]
প্রধান পরিকল্পনা
সম্পাদনাপারাদ্বীপকে ভারতের ছয়টি প্রধান পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল বিনিয়োগ অঞ্চল (পি.সি.পি.আই.আর.) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পারাদ্বীপকে চীনে পুডং, ইউরোপের রটারডাম এবং উত্তর আমেরিকায় হিউস্টনের ত করে গড়া হবে। পারাদ্বীপ পিসিপিআইআর ৬৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা চিহ্নিত করেছে, যা ২৮৪ বর্গ কিলোমিটার (১১০ বর্গ মাইল) এলাকায় ছড়িয়েছে।
ওড়িশা সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ৩,০০,০০ কোটি টাকা পারাদ্বীপে বিনিয়োগের করার পরিকল্পনা করছে। তাই বিদ্যমান বন্দর অবকাঠামোটির উন্নয়ন করার পরিকল্পনা ছিল। একটি নতুন পরিকল্পিত রেললাইন লাইন পারাদ্বীপ-হরিদাসপুর সমাপ্তির পথে। ভুবনেশ্বর ও পারাদ্বীপের মধ্যে একটি নতুন গ্রীনফিল্ড মহাসড়কের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
উপকূলীয় মহাসড়কদ্বারা পারাদ্বীপের সাথে ধামরা বন্দর ও অষ্টারঙ্গ বন্দরকে সংযোগের পরিকল্পনা করেছিল। পরিবহন অবকাঠামো সহজতর করার জন্য একটি নতুন বিমানবন্দর গোও দ্বারা প্রস্তাবিত হয়েছে।
এশিয়ার বৃহত্তম পিসিআইপিআর অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা অনুযায়ী পারাদ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে পার্শ্ববর্তী আধা-নগর এলাকার পাশাপাশি পারাদ্বীপ শহরকে একটি শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রোতাশ্রয়
সম্পাদনাবন্দরটির প্রোতাশ্রয়টি কৃত্রিম। এটি একটি সমুদ্র বন্দর এবং এর গভীরতা ১৩.৫ মিটার। বন্দরটির ৯০,০০০ ডিডব্লুটি অবধি জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করার ধারণক্ষমতা আছে।
পণ্য নিয়ন্ত্রণ
সম্পাদনাবন্দরটি ২০০৯-২০১০ সালে ৫৭ মিলিয়ন টন পণ্য নিয়ন্ত্রত করেছে। ২০১৩-২০১৪ সালে বন্দরটি ৮৬ মিলিয়ন টন পণ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Containers handled at major ports up 8% at 9.876 million TEUs in FY19"। Business Line। ৩ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৯।
- ↑ "Indian Coast Guard stations ship at Paradip Port for surveillance"।
- ↑ "Port of Paradip, India"।
- ↑ ক খ Nanda, Prabhat (এপ্রিল ২০১১)। "The Port of Paradip : Mangrove Forest to a Major Port" (পিডিএফ)। Orissa Review: 68–78।
- ↑ "Home"। Paradip Port Trust। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Centre to pump Rs 3,141 cr into Paradip port"। Business Standard। ২০১১-০৯-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-২৭।