পানগাঁও বন্দর

বাংলাদেশের নদী বন্দর

পানগাঁও বন্দর হল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত এটি নদী বন্দর। এই বন্দরটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। বন্দরটি প্রায় ৪ মিটার (১৩ ফু) থেকে ৪.৫ মিটার (১৫ ফু) গভীর। এই বন্দর দ্বারা ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কন্টেইনার পরিবহন করা হয়। এটি বাংলাদেশ এর প্রথম অভ্যন্তরীণ নৌ-টার্মিনাল।

পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনাল
মানচিত্র
অবস্থান
দেশ বাংলাদেশ
অবস্থানপানগাঁও,দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ,ঢাকা , ঢাকা বিভাগ
বিস্তারিত
মালিকবাংলাদেশ সরকার
পোতাশ্রয়ের ধরনছোট নদী বন্দর (কন্টেইনার টার্মিনাল)
উপলব্ধ নোঙরের স্থান
পরিসংখ্যান
বার্ষিক কন্টেইনারের আয়তন৯২৪ টিইইউ (২০১৮-২০১৯)[১]
বার্ষিক আয়৳৫৬০ কোটি (২০১৮-১৯)

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৯৩ সালে ঢাকার পানগাঁওয়ে নদী বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। [২] সেই সময়েই প্রায় ৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে অর্থায়ন জটিলতার কারণে এই উদ্যোগ বেশি দূর এগোতে পারেনি। পরবর্তীতে পুনরায় টার্মিনালটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৫ সালের জুলাইয়ে সিপিএ এর অর্থায়নে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল যা ২০০৭ সালের জুনের মধ্যে সমাপ্ত হবে। আবার সেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার শিকার হলো নির্মাণ প্রকল্প। এভাবেই পেরিয়ে গেল কয়েক বছর। পরবর্তীতে বন্দরটি বিআইডব্লিওটিএ’র মাধ্যমে তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর মধ্যে চুক্তিও সম্পাদিত হয়। সর্বশেষ ১৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের জুন মাসে এ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রায় ৬৪ একর জমিতে পানগাঁও আইসিটি নির্মিত হয়। যেখানে ৩৫ একর জমিতে পানগাঁও আরসিসি ইয়ার্ড, জেটি ও শেড নির্মিত হয়েছে। বাকি ২৯ একরে নদী তীর রক্ষা বাধ ও সড়ক নির্মিত হয়। বন্দর নির্মাণের পর ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের কেরানীগঞ্জ এলাকায় নির্মিত এ নৌ-টার্মিনাল উদ্বোধন করেছিলেন।[৩][৪]

বন্দরটি নির্মানের কারণ সম্পাদনা

বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে দেশের প্রধান আমদানি রফতানির ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তার মধ্যে ৭০ শতাংশ পণ্য ঢাকাগামী। যা ঢাকা নারায়ণগঞ্জের আশপাশের এলাকায় বেশি অংশ চলে আসে। এই পণ্যের অধিকাংশই সড়ক ও রেল পথের মধ্যে আনা নেয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে মাত্র ১০ ভাগ কন্টেইনার আসে রেলপথের মাধ্যমে। বাকি কন্টেইনারগুলো সড়কপথে পরিবহন করতে হয়। ফলে অনেক সময় দিনের পর দিন চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আটকে থাকে। সড়ক পথে হালকা ও ভারি যানবাহনের কারণে বছরের অধিকাংশ সময়ে তীব্র যানযট ও দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। ব্রিজ ও কালভার্টগুলো অপ্রশস্ত ও ভারি যানবাহন চলাচলে অনেকটাই অনুপযুক্ত। তাছাড়া কখনও কখনও এই পথে মালামাল চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। কন্টেইনারগুলো মাত্র ৩ দিনেই চট্টগ্রামে আসলেও রেলযোগে ঢাকা পরিবহনে ২০ থেকে ২৫ দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়। যার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনার অংশ হয়ে যায়। এছাড়া রেল ও সড়ক পথে পণ্য পরিবহন বেশ ব্যয়বহুল। বিশ্বে নৌপথে পণ্য পরিবহন সবচেয়ে সাশ্রয়ী মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। তাই ঢাকা চট্টগ্রাম নৌপথে প্রয়োজনীয় অকাঠামোগত উন্নয়ন ও যথোপযুক্ত নৌযানের ব্যবস্থা করা গেলে স্বল্প সময়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পরিবহন সম্ভব। এই বিবেচনাকে পুঁজি করে নদীভিত্তিক অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। আবার চট্টগ্রাম বন্দরে বিগত ১০ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ বেড়ে যায়।

তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথের ওপর চাপ, বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেয়ার ব্যয় ও যানজট কমাতে ১৯৯৩ সালে ঢাকার পানগাঁওয়ে নদী বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সময়েই প্রায় ৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

পোতাশ্রয় সম্পাদনা

আমদানি-রপ্তানি সম্পাদনা

এই বন্দর দ্বারা প্রধানত ঢাকা ও তার পাশের এলাকার পোশাক কারখানা থেকে তৈরি পোশাক এই বন্দরের দ্বারা কন্টেইনারে করে চট্টগ্রাম বন্দর এ পাঠানো হয় বিদেশে রপ্তাানির জন্য এবং এই বন্দর দ্বারা কাঁচা তুলো ও কাপর আমদানি করা হয়। ২৪০০ টিইউএস ক্ষমতা সম্পূর্ণ বন্দরটি বছরে ১ লক্ষ ১৬ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেল করতে সক্ষম।

সমস্যা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৯ 
  2. "পূর্ণাঙ্গ বন্দরের মর্যাদা পাচ্ছে না পানগাঁও বন্দর"দৈনিক জনকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ০৪-০১-২০১৬  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. "সম্ভাবনাময় পানগাঁও বন্দর"আমাদেরসময়। ২৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৪-০১-২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. "পানগাঁও বন্দরের ব্যবহার বাড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা"www.risingbd.com। সংগ্রহের তারিখ ০৪-০১-২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা