পাকিস্তানি রন্ধনশৈলী
পাকিস্তানি রন্ধনশৈলী (উর্দু: پاکستانی پکوان) হচ্ছে দক্ষিণ এশীয় বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী রান্নার একটি পরিশোধিত রূপ।[১] ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পাকিস্তানি রান্না দক্ষিণ এশীয় এবং মধ্য এশীয় রন্ধনশৈলীর অংশ। মোঘলদের প্রভাবে পাকিস্তান এবং ভারতে অনেক রান্না ও খাবার একই ধরনের[২]।
পাকিস্তানের ভেতরে দেশের নৃতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে অঞ্চলভেদে রন্ধনশৈলীতে পার্থক্য আছে। পূর্বাঞ্চলের পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের খাবারে প্রচুর মশলাপাতি ব্যবহৃত হয় যা দক্ষিণ এশীয় রন্ধনশৈলীর চরিত্র বহন করে। পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের বিশেষ করে বেলুচিস্তান, আজাদ কাশ্মীর, গিলজিত-বালতিস্তান, খাইবার পাখতুনখা এবং প্রশাসনিক উপজাতিক অঞ্চলসমূহে আঞ্চলিকতার প্রভাবে ভিন্ন স্বাদের খাবার প্রচলিত।
শহর সমূহে আন্তর্জাতিক রন্ধনশৈলী এবং ফাস্ট ফুড জনপ্রিয়। স্থানীয় খাবারের সংগে বিদেশী রেসিপি মিলিত হয়ে মিশ্র রন্ধনশৈলী গড়ে উঠেছে যেমন পাকিস্তানি চীনা রন্ধনশৈলী। জীবনবৈচিত্র পরিবর্তনের সাথে সাথে রেডিমেড মশলা ব্যবহারের প্রবণতা জনপ্রিয় হচ্ছে।
হালাল
সম্পাদনাপাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলমান। মুসলমানগণ ইসলামী আইনানুসারে সেইসকল খাবার ও পানীয় গ্রহণ করে যা হালাল এবং খাওয়ার অনুমতি আছে। হালাল খাদ্য হচ্ছে সেই সকল খাদ্যাদি যা ইসলামী খাদ্য আইনে খাওয়া ও পানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইসলামী আইনে বিশেষ করে বলা হয়েছে পশু জবাই, মাংস তৈরি এবং খাওয়ার রীতিনীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রভাব
সম্পাদনাইন্দো আর্য সংস্কৃতি এবং মুসলিম রন্ধন ঐতিহ্যে সজ্জিত পাকিস্তানের জাতীয় রন্ধনশৈলী। পাকিস্তানের প্রথম সভ্যতা হচ্ছে মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা সভ্যতা। ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ডাল, বেগুন এবং গরুকে সিন্ধু উপত্যকায় গৃহপালিত করা হয়। এসব অঞ্চলে হলুদ, গোলমরিচ, সরিষার চাষ হতো। কমপক্ষে হাজার বছরের মধ্যে গম এবং চাল সিন্ধু উপত্যকার প্রধান খাদ্যে পরিণত হয়। পাকিস্তান হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম প্রবেশকালে স্থানীয় রন্ধনশৈলীর উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব রাখে। যেহেতু মুসলমানদের শূকর খাওয়া এবং মদ্যপান নিষিদ্ধ তাই খাদ্যগ্রহণ রীতি শক্তভাবে মানা হয়। পাকিস্তানিরা অন্যান্য মাংস যেমন গরু, ছাগল, মুরগী এবং মাছ খেয়ে থাকে। এছাড়া শাকসবজি, ফল ও দুধ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার অংশ। খাবারের দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য রন্ধনশৈলীর প্রভাব পাকিস্তানি খাবারে স্পষ্ট।
উপাদান
সম্পাদনাপাকিস্তানি খাবার সুগন্ধি এবং মশলার স্বাদের জন্য পরিচিত। কিছু কিছু খাবারে যথেষ্ট পরিমান তেল ব্যবহারের কারণে সুবাস এবং স্বাদে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। জিরা, লবঙ্গ, দারচিনি, গোলমরিচ, তেজপাতা, মরিচ গুঁড়ো, হলুদ ইত্যাদির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন মশলা উপাদানের মিশ্রণ গরম মশলা বাংলাদেশ, ভারতের মত পাকিস্তানেও জনপ্রিয়।
আঞ্চলিক রন্ধনশৈলী
সম্পাদনাখাইবার পাখতুন
সম্পাদনাচাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার এবং কাবাব পশতু রন্ধনশৈলীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য পাকিস্তানি কুইজিনের তুলনায় পশতু রন্ধনশৈলীতে অধিক পরিমাণে ভেঁড়ার মাংস খাওয়া হয়। ভাতের হালিম, চাপলি কাবাব, টিকা ইত্যাদি জনপ্রিয় খাবার। পশতু এবং বেলুচ রন্ধনশৈলীতে প্রথাগতভাবে মশলার ব্যবহার হয় না।
পাঞ্জাব
সম্পাদনাপাঞ্জাব পরিচয়টা ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক, পাঞ্জাবি জনগোষ্ঠী রন্ধনশৈলীতে কিছু বৈচিত্র্য আনলেও সামষ্টিকভাবে অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়।
সিন্ধ
সম্পাদনাপাকিস্তানের সিন্ধু জনগোষ্ঠীর রন্ধনশৈলী হচ্ছে সিন্ধী রন্ধনশৈলী। সিন্ধী কুইজিন মশলাদার এবং মুরগীর বিভিন্ন রকম রান্নার জন্য পরিচিত।
করাচী
সম্পাদনাকরাচী রন্ধনশৈলী মোঘলাই রন্ধনশৈলীর অনুরূপ যা হায়দ্রাবাদি রন্ধনশৈলী দ্বারা অনুপ্রাণিত।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Taus-Bolstad, S (2003), Pakistan in Pictures. Lerner Publishing Group. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮২২৫-৪৬৮২-৫
- ↑ Jonathan H. X. Lee, Kathleen M. Nadeau Encyclopedia of Asian American Folklore and Folklife, Volume 1 page 973 ABC-CLIO, 2011 আইএসবিএন ০৩১৩৩৫০৬৬৩, 9780313350665