পশ্চিমবঙ্গের মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার মন্দির

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় একাধিক মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার মন্দির রয়েছে। প্রাচীন কাল থেকে বঙ্গদেশে মহিষাসুরমর্দিনীর উপাসনা হয়ে আসছে। শ্রী শ্রী চণ্ডী উল্লেখিত প্রথম দুর্গাপুজা স্থল, ঋষি মেধসের আশ্রম এবং প্রথম পূজারী রাজা সুরাথের আবাসস্থল পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। সমগ্র বঙ্গদেশে প্রাচীন কাল থেকেই শক্তি উপাসনার প্রচলন থাকায় একাধিক মহিষাসুরমর্দিনীর প্রাচীন উপাসনালয় রয়েছে।

কলকাতা

সম্পাদনা

যদিও কালীর উপাসনার শহর হিসেবে কলকাতা শহর প্রসিদ্ধ এবং কালীক্ষেত্র কালীঘাট থেকে কলকাতা নামের উৎপত্তি, তবুও এই জেলায় অনেক গুলি দুর্গা উপাসনার মন্দির রয়েছে।

চিত্তেশ্বরী দুর্গাবাড়ি

সম্পাদনা

চিত্তেশ্বরী দুর্গাবাড়ি কলকাতা শহরের অন্যতম প্রসিদ্ধ দুর্গা মন্দির। মন্দিরটি কলকাতার চিতপুরে অবস্থিত। উপাস্য মহিষাসুরমর্দিনী দেবী মূর্তিটি আগে চিতে ডাকাত উপাসনা করতেন। চিতে ডাকাতের নাম থেকেই দেবীর চিত্তেশ্বরী নাম হয়েছে। পরবর্তী কালে চিত্তেশ্বরী থেকে নামটি থেকে চিতপুর নাম এসেছে। এই বিগ্রহটিতে অন্যান্য বিগ্রহের থেকে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত দুর্গমুর্তি অষ্টধাতু, পিতল বা মাটির হলেও এখানে দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনীর বিগ্রহ নিমকাঠে নির্মিত। দেবীর বাহন সাবেকি ঘোড়ামুখী সিংহ। আবার দেবীর বাহন সিংহের সাথে বাঘও উপস্থিত।[১]

ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দির পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা শহরের কুমারটুলি অঞ্চলে অবস্থিত।[২] ঢাকা শহরে অবস্থিত ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূল বিগ্রহটি এই মন্দিরে পুন:প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালের সময় এই মূর্তিটি বিশেষ বিমানে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।

বীরভূম

সম্পাদনা

প্রাচীন কাল থেকেই বীরভূম জেলায় তন্ত্রচর্চা ও শক্তি উপাসনার হয়ে থাকে। বীরভূম জেলায় ৫টি শক্তিপীঠ ও একটি উপপিঠ রয়েছে। বক্রেশ্বর একটি শক্তিপিঠ। এখানে মহিষাসুরমার্দিনী দেবীর আরাধনা হয়।

বক্রেশ্বর

সম্পাদনা

বক্রেশ্বর একটি প্রাচীন শক্তিপীঠ। এই পীঠের প্রধান উপসিত দেবী হলেন মহিষাসুরমার্দিনী। দশভুজা দুর্গার বিগ্রহটি অষ্টধাতু নির্মিত। দেবীর বাহন সাবেকি ঘোড়ামুখী সিংহ।

বাঁকুড়া

সম্পাদনা

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার মন্দির রয়েছে।

মৃন্ময়ী মাতার মন্দির

সম্পাদনা
 
মৃন্ময়ী মাতার

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে মল্লরাজ জগৎ মল্ল দুর্গা উপাসক ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত দুর্গা মন্দিরই বাংলার সর্বাধিক প্রাচীন মহিষাসুরমর্দিনীর মন্দির। এই মন্দিরটি মৃন্ময়ী মাতার মন্দির নামে বিখ্যাত। মন্দির ও বিগ্রহ ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা হয়। দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনীর বিগ্রহটি সম্পূর্ণ গঙ্গার মাটিতে নির্মিত। দেবীর সাথে একই কাঠামোয় সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্ত্তিক, গণেশ ও মহাদেব এবং মহাদেবের দুই অনুচর নন্দী,ভিরিঙ্গি উপস্থিত।

বর্ধমান

সম্পাদনা

বর্ধমান জেলায় একাধিক প্রাচীন মহিষাসুরমর্দিনীর মন্দির রয়েছে। শ্রী শ্রী চণ্ডীতে বর্ণিত বিভিন্ন স্থান এই জেলাতে রয়েছে।

যোগ্যদা মন্দির

সম্পাদনা

বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার ক্ষীরগ্রামে অন্যতম শক্তিপীঠ যোগদার মন্দির রয়েছে। দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনীর বিগ্রহটি পাল যুগে নির্মিত। এই মহিষাসুরমর্দিনীর লৌকিক নাম হলো "যোগদা"।[৩][৪]

গড় জঙ্গল

সম্পাদনা

পশ্চিম বর্ধমান জেলার গড় জঙ্গলে শ্রী শ্রী চণ্ডী উল্লেখিত ঋষি মেধসের আশ্রম রয়েছে। এটি মহিষাসুরমর্দিনীর প্রথম পূজার স্থল। এই আশ্রমের কাছেই চণ্ডী মঙ্গল কাব্যে উল্লিখিত ইচ্ছাই ঘোষের দেউল। এখানে টেরাকোটার মন্দিরে মহিষাসুরমর্দিনীর উপাসনা হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. তনুজিত্‍ দাস (৮ অক্টোবর ২০১৮)। "ডাকাতের দশভুজা কালী মিশে গিয়েছেন দেবী দুর্গায়"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "কলকাতার কড়চা"আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২২ 
  3. "বৈশাখ-সংক্রান্তিতে জলঘর থেকে উঠে আসেন যোগাদ্যা"Eisamay। ২০১৬-০৫-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮ 
  4. "আনন্দবাজার পত্রিকা - বর্ধমান"archives.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৮