পঁচতি শব্দের সাধারণ অর্থ হল - ছেলে-মেয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পাঁচ দিনের দিন করা জন্মকৃত্য। [১] পরে পঁচতি বলতে সাধারণত শিশুর জন্মের পঞ্চম দিবসের উৎসবকে না বুঝিয়ে শিশু শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর পাঁচদিনের পর উদযাপিত উৎসবটিকে বোঝায়। [২] জন্মাষ্টমীর পরবর্তী দিনটি নন্দোৎসবরূপে পরিচিত; কারণ সেইদিন নন্দের পুরীতে উৎসবের আয়ােজন করা হয়েছিল। পঁচতি নন্দোৎসবের পরবর্তী উৎসব। সাধারণত পঁচতি উৎসব জন্মাষ্টমীর পাঁচদিনে করতে হয়, কোনাে কোনাে স্থানে নন্দোৎসব অথবা তার পরদিনই এই উৎসব উদ্‌যাপন করতে দেখা যায়। পঁচতি মায়েদের উৎসব। নাট-ভাওনার উপযুক্ত লক্ষণ এখানে বিদ্যমান। এর নায়িকা যশােদা। গর্গমুনি, পুতনা, গােপ-গােপী ইত্যাদি পার্শ্বচরিত্র। যশােদার ভাও নেওয়া ব্রতে থাকা প্রয়ােজন। তিনি পুত্রের সাথে রঙ্গমঞ্চের একপাশে বসেন। ছয়জন ছোট মেয়ে হাতে ভাত, এবং নাড়ু নিয়ে রঙ্গমঞ্চে এসে যশােদার চারদিকে প্রদক্ষিণ করে তাঁর মাথার দিকে ছেটায়। নন্দজায়া একবার প্রদক্ষিণের একজন গােপীর থেকে একটি ফল গ্রহণ করে সেটি কৃষ্ণকে দেন। হাতে পুস্তক-পাঁজি নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের নামকরণ উপলক্ষে গর্গমুনি প্রবেশ করার সাথে সাথে তাড়াতাড়ি শ্রীকৃষ্ণের গায়ে হলুদ-জল ছেটাতে আরম্ভ করেন। তাড়াতাড়ি হলুদ-জলে ভিজে জুরুলি জুপুরি হয়। এভাবে শেষ হয় আগের পঁচতি উৎসব। বেলায় আরম্ভ হয় পরের পঁচতির। পুতনাবধ এই অংশের আকর্ষণ বিন্দু। [৩]

পঁচতি
পালনকারীঅসমীয়া
ধরনজন্ম সম্পর্কিত উৎসব, ভারতীয় উৎসব

পুরানো অসমীয়া সাহিত্যে পঁচতি উৎসবের উপর দুটি নাট পাওয়া যায়। তার একটির রচয়িতা হলেন কামরূপ-এর ওপরভাগ মৌজার কঁহারজার (ঝার) গাঁওয়ের দ্বিজ রমান্ত। নাটটিতে আদ্য দশমের প্রভাব এড়ানো যায় না। দ্বিতীয় পঁচতির রচয়িতা হলেন মাধব দত্ত। নাটকটির বিষয়বস্তুে আছে- শ্রীকৃষ্ণের জন্ম, দেবকী বসুদেবের স্তুতি, জন্মােৎসব এবং পুতনা বধ। ড° বিরিঞ্চি কুমার বরুয়ার মতে, পঁচতি গাওয়া দস্তুরটি প্রাক-শংকর যুগ থেকে চলে আসছে। মহাপুরুষ শংকরদেব এখানে নতুন রস চড়ান। আসামের সত্রসমূহে এই পঁচতি উৎসব মহাসমারোহে পালন করা হয়। [৪]

ভগবান শ্রীকৃষ্ণর নামকরণের সাথে জড়িত এই পঁচতি বা বোকা ভাওনা উপলক্ষে একটি গর্ত খুঁড়ে সেখানে বোকা সৃষ্টি করে ছোট ছোট ছেলেরা নারিকেল ফাটিয়ে টানা-টানি করে আনন্দ করে। সাথে ছোট ছোট ছেলেরা কৃষ্ণের ভাও নিয়ে নৃত্য প্রদর্শন করে। তদুপরি থানের ভকতরা পুরাণখ্যাত নন্দ, যশোদা ইত্যাদি বিভিন্ন চরিত্রের ভাও নেয়।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মন্টুরাম দাস,দৈনিক আসাম। "বরপেটা সত্রের পচতি" 
  2. আসামের সংস্কৃৃত কোষ, ডঃ নারায়ণ দাস, পরমানন্দ রাজবংশী, প্রাগজ্যোতিষ মহাবিদ্যালয়, দ্বিতীয় প্রকাশ, ২০১৪, পৃষ্ঠা-৩৭৫,
  3. আসামের সংস্কৃৃত কোষ, পৃষ্ঠা-৩৭৫
  4. আসামের সংস্কৃিত কোষ, পৃষ্ঠা-৩৭৫
  5. "সরভোগর গরখীয়া গোসাঁই থানত বোকা ভাওনা পালন"। ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮। ২৫ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০২০  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)