নৃপেন ভৌমিক
ডা.নৃপেন ভৌমিক (৪ জানুয়ারি ১৯৫০ - ২৯ মে ২০২৪)[১] ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি স্নায়ুশল্যবিদ ও লেখক। [২] কলকাতায় তিনি প্রথম 'দধিচী কমিউনিটি কলেজ' প্রতিষ্ঠা ও বাংলা ভাষায় 'চিকিৎসা পরিভাষা অভিধান' রচনা করেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার জন্য ২০০২ খ্রিস্টাব্দে সত্যেন্দ্র পুরস্কার এবং চিকিৎসা পরিভাষা অভিধান রচনার জন্য ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। [৩]
নৃপেন ভৌমিক | |
---|---|
জন্ম | কুমিল্লা অবিভক্ত বাংলা ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) | ৪ জানুয়ারি ১৯৫০
মৃত্যু | ২৯ মে ২০২৪ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত | (বয়স ৭৪)
পেশা | শল্যচিকিৎসক ও লেখক |
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | চিকিৎসা পরিভাষা অভিধান |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | রবীন্দ্র পুরস্কার (২০০৬) |
দাম্পত্যসঙ্গী | পূরবী ভৌমিক |
সন্তান | পার্থ ভৌমিক (পুত্র) সুতীর্থ ভৌমিক (পুত্র) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাডা. নৃপেন ভৌমিকের জন্ম ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লাতে। তিনি কৃষ্ণনগরের সিএমএস সেন্ট জনস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারী পড়েন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ থেকে শল্য চিকিৎসায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এস উপাধি লাভ করেন। সেখান থেকেই ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে শল্য চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি এমসিএইচ ডিগ্রি পান। এরপর তিনি ইংল্যান্ডে যান এবং এক বৎসরের প্রশিক্ষণ শেষে কলকাতায় ফিরে আসেন। [৪]
কর্মজীবন
সম্পাদনাডা নৃপেন ভৌমিক প্রথমে বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি-তে স্নায়ু শল্য চিকিৎসার লেকচারার হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন। তারপর সরকারি চাকরি ছেড়ে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস সঙ্গে যুক্ত হন রিডার হিসাবে। এছাড়াও যুক্ত ছিলেন বেসরকারি উডল্যান্ডস হাসপাতালের সঙ্গে। রোগীর চিকিৎসার গুণমানের ব্যাপারে সমঝোতা করতে না পারায় কারণে সব ছেড়ে শেষে যুক্ত হন কেপিসি মেডিকেল কলেজে স্নায়ুশল্য চিকিৎসার অধ্যাপক হিসেবে।
বাংলা ভাষা ছিল তার প্রাণ। তিনি প্রেসক্রিপশন লিখতেন বাংলায়। তার প্রতিষ্ঠিত 'দধিচী কমিউনিটি কলেজ'-এ ইংরাজীর পাশাপাশি প্রমিত বাংলায় নার্সিং পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। প্রসঙ্গত, তার দধিচী কমিউনিটি কলেজ হল বাংলার প্রথম কমিউনিটি কলেজ, যার মাধ্যমে তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের বৃত্তিমূলক কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল বাংলায় ডাক্তারি পড়ানোর। তাই তিনি নানা রোগের চিকিৎসার জন্য বাংলায় প্রায় আঠারোটি গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়াও, তিনি চিকিৎসা বিষয়ে আগরতলার 'জ্ঞানবিচিত্রা', ঢাকার 'গণস্বাস্থ্য', কলকাতার দেশ, আজকাল, 'সমতট' 'সাপ্তাহিক বর্তমান'সহ কয়েকটি মেডিক্যাল জার্নালে নিয়মিতই লেখালেখি করতেন। তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল– 'চিকিৎসা পরিভাষার অভিধান' ও 'চিকিৎসাবিজ্ঞানকোষ' রচনা।
- রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসমূহ–
- চিকিৎসা পরিভাষা অভিধান (২০০০) আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা আইএসবিএন- 978-81-7756-108-1
- স্মৃতি বিস্মৃতি (২০০০), অবসর প্রকাশনা সংস্থা আইএসবিএন-9844151074
- বিকল্প চিকিৎসা (১৯৯৭) দীপ প্রকাশন, কলকাতা
- বিজ্ঞান চর্চায় বাঙলা পরিভাষাঃ ইতিহাস, সমস্যা ও সমাধান (২০০২) নয়া উদ্যোগ, কলকাতা আইএসবিএন-81-85971-99-4
- স্নায়ুতন্ত্রের অসুখ বিসুখ (২০১৩) জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী, কলকাতা আইএসবিএন-978-81-8266-260-5
- স্নায়ুতন্ত্রের রোগ (১৯৯৭) দীপ প্রকাশন, কলকাতা আইএসবিএন-978-93-8621-945-9
- কোমরের ব্যথা (১৯৯৪) দীপ প্রকাশন, কলকাতা আইএসবিএন-978-93-8621-937-4
- চিকিৎসাবিজ্ঞানকোষ (২০১৭) আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা আইএসবিএন-978-93-5040-758-5
- ঘাড়ে ব্যথা (১৯৯৯) দীপ প্রকাশন, কলকাতা আইএসবিএন-978-93-8928-911-4
- ভাষা ও মস্তিষ্ক (২০১৯) দীপ প্রকাশন, কলকাতা
- মৃগীরোগ (১৯৯৩) দীপপ্রকাশন, কলকাতা
- স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্ক (২০২০) অবসর প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশ আইএসবিএন-978-98-4879-910-9
- বাংলার শব্দকথা (২০২২) অবসর প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশ আইএসবিএন-978-98-4880-018-8
- দুইবঙ্গের স্থাননাম (২০২৩) অবসর প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশ আইএসবিএন-978-98-4880-115-4
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যভাবনা আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
- নার্সিং-এর সহজপাঠ দীপ প্রকাশন, কলকাতা
সম্মাননা
সম্পাদনা- ২০০২ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কংগ্রেস তাকে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার জন্য সত্যেন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে;
- ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে চিকিৎসা পরিভাষা অভিধান গ্রন্থটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে।
জীবনাবসান
সম্পাদনা২০২৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে ডা নৃপেন ভৌমিকের ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে, কিন্তু হঠাৎই তিনি একদিন সেরিব্রাল হেমারেজে অচেতন হয়ে যান। তারপর আর জ্ঞান ফেরে নি। শেষে ২৯ মে বুধবার বিকালে তিনটায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ভৌমিক, নৃপেন (২০০০)। চিকিৎসা পরিভাষা অভিধান। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-7756-108-1।
- ↑ "কলকাতার কডচা-মানবদরদি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২২।
- ↑ ভৌমিক, নৃপেন (২০২০)। স্মৃতিশক্তি ও মস্ত। অবসর প্রকাশনা সংস্থা,। আইএসবিএন 978-98-4879-910-9।
- ↑ ক খ "ডা নৃপেন ভৌমিক স্মরণে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২২।