নীল দাঁড়িওয়ালা একটি ফরাসি লোককথা, চার্লস পেরোলের লেখা সংস্করণটিই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্যারিসে ১৬৯৭ সালে জানুয়ারিতে হিস্ট্রিস অও কন্তেস দ্যু টেম্পস প্যাসে নামক (বাংলা: হারানো সময়ের গল্পগাঁথা) বইয়ে, [১][২] বইটি পেরোলের আটটি রূপকথার সংগ্রহ। নীল দাঁড়িওয়ালা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এপর্যন্ত অনেক কিংবদন্তি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য রচিত হয়েছে।

Bluebeard
Bluebeard gives his wife the keys to his castle.
লোককাহিনী
নামBluebeard
উপনামBarbebleue
আর্ন–থম্পসন শ্রেণিবিন্যাসATU 312 (The Bluebeard, The Maiden-Killer)
অঞ্চলFrance
প্রকাশিতHistoires ou contes du temps passé, by Charles Perrault
সম্পর্কিতThe Robber Bridegroom; How the Devil Married Three Sisters; Fitcher's Bird

কাহিনী সম্পাদনা

নীল দাঁড়িওয়ালা প্রভূত সম্পদ আর ক্ষমতার অধিকারী একজন সম্ভ্রান্ত পুরুষ। কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে, তিনি যে তরুণীকেই বিয়ে করেন, সেই রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায়। এভাবে তিনি বেশ কয়েকজন সুন্দরী তরুণীকে বিয়ে করেছেন। নীল দাঁড়িওয়ালা যখনই প্রতিবেশীদের বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিতেন, তাদের মেয়েরা আতঙ্কে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়তো। তার আয়োজিত এক চমৎকার ভোজসভায় তিনি বিয়ের জন্য দুই বোনকে পছন্দ করেন; কিন্তু তাদের কেউই এতে রাজি ছিলোনা। তিনি তাদের তার সাথে দূরবর্তী অঞ্চলে এক বিলাসবহুল জীবনের স্বপ্ন দেখান। অবশেষে ছোটবোন তাকে বিয়ে করতে সম্মত হয়।

বিয়ের পর নীল দাঁড়িওয়ালা বসবাসের জন্য সস্ত্রীক গ্রামাঞ্চলে চলে যান। তিনি স্যাতাও এর চাবি ছড়া স্ত্রীর হাতে তোলে দিয়ে একটি গোপন কামরা ব্যতীত বাড়ির সবকিছু ইচ্ছেমাফিক ঘোরে দেখার অনুমতি দেন। তার আদেশের ব্যতিক্রম হলে এর পরিণতি সুখকর হবেনা বলে স্ত্রীকে পুনরায় সতর্ক করেন। তিনি স্ত্রীর হাতে চাবি অর্পণ করে চলে যান। মেয়েটি তার বোন অ্যানা, বন্ধুবান্ধব আর কাজিনদের আমন্ত্রন জানিয়ে এক মিলনসভার আয়োজন করে। এদিকে গোপন কামরায় কী থাকতে পারে, এই ভাবনা মেয়েটিকে কুঁরে কুঁরে খাচ্ছিলো। অবশেষে সে নিজের কৌতূহলের কাছে হার মানলো; মিলনসভার সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে গোপন কামরায় প্রবেশ করলো।

কামরায় প্রবেশ করতেই সে আতঙ্কে জমে গেলো। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর, দেয়াল থেকে হুকের সাথে সাথে ঝুলছে সারি সারি লাশ। লাশগুলো যে কার বুঝতে বাকি রইলোনা তার। নীল দাঁড়িওয়ালার প্রাক্তন স্ত্রীদের নির্মম পরিণতি দেখে কখন যে রক্তমাখা মেঝেতে চাবিছড়া পড়ে গিয়েছিলো বুঝতেই পারলোনা সে। যখন বোধ ফিরে এলো চাবিছড়া নিয়ে দ্রুত ঘর ত্যাগ করলো সে। চাবি থেকে রক্ত মোছার জন্য সে পাগলের মতো ধৌত করতে লাগলো। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন এই চাবি থেকে রক্তের দাগ মুছতে ব্যর্থ হল সে। নিজের আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরে নিজের বোনকে সব ঘটনা খুলে বললো। তারা কাল সকালেই এ জায়গা থেকে পালানোর জন্য একটা পরিকল্পনা করলো।

পরদিন সকালে অপ্রত্যাশিতভাবে দৃশ্যপটে নীল দাঁড়িওয়ালার আবির্ভাব ঘটলো। রক্তমাখা চাবিছড়া দেখে বুঝতে বাকি রইলোনা কী ঘটেছে। অন্ধ ক্রোধে স্ত্রীর দিকে তেড়ে গেলে সে, মেয়েটি রাগে উন্মত্ত স্বামীর কাছে বড় বোনের সাথে শেষবারের মতো দেখা করতে চাইলো । কিন্তু সে কোনো কথাই শোনতে রাজি নয়, যেন এক খুনে নেশা পেয়ে বসেছে তাকে। মেয়েটিকে আঘাত করতে উদ্যোত হতেই মেয়েটির বড় বোন এবং ভাই উপস্থিত হলো। বোনকে বাঁচাতে তারা নীল দাঁড়িওয়ালাকে হত্যা করলো।

নীল দাঁড়িওয়ালার সমস্ত সম্পদের উত্তরাধিকার হলো মেয়েটি। তার ভাই বোনদের বিয়ে দিতে এই সম্পদের খানিক খরচ করলো সে। অবশেষে নিজেও বিয়ে করলো। নীল দাঁড়িওয়ালা নামক অভিশপ্ত অতীত ভুলে নতুন জীবন শুরু করলে সে।


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Bluebeard"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। 
  2. "Charles Perrault (1628–1703)"। CLPAV।