নীরজা ভানোট (হিন্দি: नीरजा भनोत; ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ – ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬)[১] ১৯৮৬ সালে প্যান এম ফ্লাইট ৭৩ বিমানটি ছিনতাই হওয়া বিমানের যাত্রীদের বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই নীরজা ৩৬০ জন মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। নীরজা ভানোট কে ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে।

নীরজা ভানোট

নীরজা ভানোট
জন্ম(১৯৬৩-০৯-০৭)৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩
মৃত্যু৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬(1986-09-05) (বয়স ২২)
করাচি, সিন্ধ, পাকিস্তান
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাপার্সার, মডেল
পরিচিতির কারণপ্যান এম ফ্লাইট ৭৩
পিতা-মাতারমা ভানোট
হারিশ ভানোট
পুরস্কারসম্পূর্ণ তালিকা

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

১৯৬৩ সালে ভারতের চন্ডীগড়ে জন্ম নীরজা ভানোটের। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে পরিবারের সঙ্গে মুম্বাইয়ে চলে আসেন তিনি।[২] মুম্বাইয়ের সেইন্ট জেভিয়ার্স থেকেই গ্র্যাজুয়েশন করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৮৫ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মা-বাবার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে করে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান নীরজা। কিন্তু বিয়ের পর থেকে ক্রমাগত পণের জন্য চাপ দেওয়ায় এক সময় স্বামীকে ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন নীরজা। এরপর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে 'প্যান অ্যাম' সংস্থায় এয়ার হোস্টেস বা বিমানবালা হওয়ার জন্য আবেদন করেন। কাজটি পেয়েও যান তিনি।

ছিনতাই সম্পাদনা

১৯৮৬ সালের মুম্বাই থেকে করাচি হয়ে নিউ ইয়র্কের পথে যাত্রা করা প্যান অ্যাম সেভেনটি থ্রি বিমানটি জিম্মি করে সন্ত্রাসীরা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বিমানটি সাইপ্রাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, আর সেখানে যাত্রীদের অপহরণ করে নিজেদের দলীয় কিছু সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্ত করাবে।[৩] নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশে চার জঙ্গি করাচি থেকে বিমানে ওঠে। হাইজ্যাকের ঘটনায় ৩৮০ জন যাত্রীর মধ্যে নীরজাসহ নিহত হয়েছিলেন মোট ২০ জন। বাকি যাত্রীদের রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিলেন নীরজা, যিনি খুলে দিয়েছিলেন বিমানের জরুরি নির্গমনের পথটি। এর ফলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালানো শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত যাত্রীরাই হামলে পড়ে এই চার জঙ্গিদের ওপর। তার আগেই নীরজাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে তার মাথায় গুলি করে জঙ্গিদের প্রধান।

এই ভয়ঙ্কর সময়ের পুরোটা জুড়েই তিনি শান্ত আর কর্মক্ষম ছিলেন। তিনিই সবার আগে হাইজ্যাকের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন বিমান চালক এবং নির্বাহী কর্মকর্তাদের। এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই ককপিট থেকে বেরিয়ে যান যেন বিমানটি উড়তে না পারে।

সম্মাননা সম্পাদনা

সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে সবচেয়ে কম বয়সে ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন 'অশোক চক্র' পুরস্কার, আমেরিকার সরকার দিয়েছে ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশন 'হিরোইজম অ্যাওয়ার্ড'।[৪] পুরস্কার এসেছে পাকিস্তান ও কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও।[৫] ২০০৪ সালে অসম সাহসী এই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের নামে একটি স্ট্যাম্পও বের করে ভারতীয় ডাকবিভাগ।[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Vij, Illa (১৩ নভেম্বর ১৯৯৯)। "Brave in life, brave in death"The Tribune। Tribune Trust। 
  2. "The glamorous lives of '80s air hostesses in India"Quartz 
  3. The Story of Neerja Bhanot – India’s Flight Attendant – CN Traveller. Cntraveller.in (18 January 2016). Retrieved on 2018-11-14.
  4. "FSF Heroism Award"Flight Safety Foundation। ২০১১। ২০১৪-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-১০ 
  5. Sengupta, Durga M (২০১৬-০২-১১)। "Pakistan bans Neerja now. But why then did they award the Pan Am hero?"। ২০১৬-০৪-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-১০ 
  6. "Civil Aviation Ministry honours air hostess Neerja Bhanot who was killed by terrorists"Journalism of Courage Archive। The Indian EXPRESS। ২০১১-০২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-১০