নির্মলচন্দ্র লাহিড়ী
নির্মলচন্দ্র লাহিড়ী (ইংরেজি: Nirmalchandra Lahiri) (৪ অক্টোবর, ১৯০৬ - ৩ জানুয়ারি, ১৯৮০) ছিলেন একজন খ্যাতনামা ভারতীয় বাঙালি জ্যোতির্বিদ, গণিতাচার্য, পঞ্জিকা-সংস্কারক। তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ছিলেন। [১]
নির্মলচন্দ্র লাহিড়ী | |
---|---|
জন্ম | ৪ অক্টোবর ১৯০৬ |
মৃত্যু | ৩ জানুয়ারি ১৯৮০ | (বয়স ৭৩)
পেশা | গণিতবিদ, পঞ্জিকা-সংস্কারক |
সন্তান | অরুণকুমার লাহিড়ী (পুত্র) |
পিতা-মাতা | হরিশ্চন্দ্র লাহিড়ী (পিতা) |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনানির্মলচন্দ্রের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের রংপুরে। পিতা হরিশ্চন্দ্র লাহিড়ী। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে বি.এ. পাশের পর ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিশ্র গণিতে এম.এ. পাশ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাএম. এ পাশের পর ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের বাণিজ্যিক সংবাদ ও সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগে কাজ পান এবং ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ওখানেই কর্মরত ছিলেন। এরপর প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সভাপতিত্বে ক্যালেন্ডার রিফর্মস কমিটি গঠিত হলে, নির্মলচন্দ্র সেই কমিটির সম্পাদক হন এবং আলিপুরের অ্যালম্যানাক ইউনিটে কর্মরত হন। রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গের সংস্কার ছাড়াও কমিটির একটি উদ্দেশ্য ছিল, সময় গণনার ক্ষেত্রে প্রাচীন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বদলে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রচলন ঘটানো। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই কমিটির কাজ শেষ হলে, ভারত সরকারের অন্য একটি পরিকল্পনায় 'ভারতীয় পঞ্জিকা ও নৌ-সারণি' প্রস্তুতির মতো মৌলিক গবেষণামূলক কাজের ও ভারতের বিভিন্ন ভাষায় জ্যোতিষভিত্তিক পঞ্জিকা প্রকাশনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্যারিসে আন্তর্জাতিক জ্যোতিবিদ্যা ইউনিয়নের পঞ্চাঙ্গ বা পঞ্জিকা কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম এই গৌরবের অধিকারী। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তবে অবসরের পরও তিনি জ্যোতিবিদ্যা চর্চাতেই ব্যাপৃত ছিলেন। বিভিন্ন ধরনের পঞ্জিকা ও গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার রচিত গ্রন্থগুলি হল-
- পঞ্চাঙ্গ দর্পণ
- Tables of Ascendants [২]
- Tables of the Sun
- Advance Ephermeris for 100 years (1951 - 2050) [৩]
- Tables of Sunrise, Sunset and Moonrise, Moonset
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এই যে, ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে প্রযুক্তিবিদ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রকাশিত বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে বাংলা পঞ্জিকার সাথে বিজ্ঞানসম্মত মিল পাওয়া যায়। কিন্তু তার প্রচলন ছিল না। মূলত তার উদ্যোগেই বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে বাংলা পঞ্জিকার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুত্র অরুণকুমার লাহিড়ীকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার ১৭ বৃন্দাবন মল্লিক ফার্স্ট লেনে ‘অ্যাস্ট্রো রিসার্চ ব্যুরো’ নামে এক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ষষ্ঠীচরণ জ্যোতির্ভূষণের সহায়তায় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রকশনার ভার গ্রহণ করেছিলেন। [৪]
জ্যোতির্বিদ্যায় তার অবদানের জন্য কাঞ্চীপুরমের শঙ্করাচার্য তাঁকে 'গণিতকলানিধি' উপাধি প্রদান করেন।
জীবনাবসান
সম্পাদনানির্মলচন্দ্র লাহিড়ী ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ৩রা জানুয়ারি ৭৪ বৎসর বয়সে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৩৬৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ "Lahiri Table of Ascendants on Nirayana Basis"। www.goodreads.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ OpenLibrary.org। "Nirmal Chandra Lahiri"। Open Library। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "বিশুদ্ধতা'র সংগ্রাম চলছে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৫।