নিরুপমা রাও

ভারতীয় কূটনীতিক

নিরুপমা রাও (জন্ম:৬ ডিসেম্বর, ১৯৫০) হলেন ১৯৭৩ ব্যাচের একজন ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস অফিসার, যিনি ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ভারতের বিদেশ সচিব হিসেবে কাজ করেছেন, সেই সঙ্গে তিনি তার কর্মজীবনে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের রাষ্ট্রদূত এবং শ্রীলঙ্কার হাই কমিশনার ছিলেন।

নিরুপমা রাও
২০১০ খ্রিস্টাব্দে নিরুপমা রাও
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত
কাজের মেয়াদ
১ অগস্ট ২০১১ – ৫ নভেম্বর ২০১৩
পূর্বসূরীমীনা শঙ্কর
উত্তরসূরীএস জয়শঙ্কর
২৮তম ভারতের বিদেশ সচিব
কাজের মেয়াদ
১ অগস্ট ২০০৯ – ৩১ জুলাই ২০১১
পূর্বসূরীশিবশঙ্কর মেনন
উত্তরসূরীরঞ্জন মাথাই
চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূত
কাজের মেয়াদ
১ নভেম্বর ২০০৬ – ৩১ জুলাই ২০০৯
পূর্বসূরীনলিন সুরি
উত্তরসূরীএস জয়শঙ্কর
শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় হাই কমিশনার
কাজের মেয়াদ
১ অগস্ট ২০০৪ – ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৬
পূর্বসূরীনিরুপম সেন
উত্তরসূরীঅলোক প্রসাদ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1950-12-06) ৬ ডিসেম্বর ১৯৫০ (বয়স ৭৩)
মালাপ্পুরম, কেরালা, ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাকূটনীতিক
ওয়েবসাইটwww.nirupamamenonrao.net

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে তিনি ভারতীয় বিদেশ সেবাকার্যের প্রধান, ভারতীয় বিদেশ সচিব পদে দ্বিতীয় মহিলা হিসেবে (চোকিলা আইয়ারের পর) যোগদান করেন। তিনি তার কর্মজীবনে বিভিন্ন পদ অলংকৃত করেছেন; তার মধ্যে আছে: তথ্য ও সংস্কৃতির মিনিস্টার অফ প্রেস, ওয়াশিংটন ডিসি, মস্কোয় ডপুটি চিফ অফ মিশন, বিদেশ দপ্তরের যুগ্ম সচিব, ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড এক্সটার্নাল পাবলিসিটি, পরবর্তীতে বিদেশ মন্ত্রণালয়ে প্রথম মহিলা মুখপাত্র হন, চিফ অফ পার্সোনেল, পেরু ও চিনে রাষ্ট্রদূত এবং শ্রীলঙ্কায় হাই কমিশনার।[১][২]

প্রথম জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

নিরুপমা রাওয়ের জন্ম কেরালার মালাপ্পুরমে। তার পিতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিভিএস মেনন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তার মা মীম্পত নারায়নীকুট্টি তাদের পরিবারের মধ্যে প্রথম মহিলা কলেজ স্নাতক ছিলেন, যিনি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাড্রাস ইউনিভার্সিটি থেকে গণিতে (সাম্মানিক) স্নাতক স্তরের ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তার ভগিনীদ্বয় নির্মলা এবং আশা পেশায় মেডিক্যাল ডাক্তার ছিলেন। নির্মলা ভারতীয় নৌবাহিনীর কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে সার্জেন রেয়ার অ্যাডমিরাল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

পিতার পেশাগত কাজের জন্যে নিরুপমা রাও বেঙ্গালুরু, পুনে, লখনৌ এবং কুন্নুর ইত্যাদি বিভিন্ন শহরে শিক্ষালাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেঙ্গালুরুর মাউন্ট কারমেল কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক হন,[৩] যেখানে তিনি ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটিতে সর্বোচ্চ স্থান দখল করেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে সেই সময়ের জাপানে 'এক্সপো ৭০'-এ মহীশুর সরকারের যুব প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন। তারপর তিনি তখনকার মহারাষ্ট্রের মারাঠাওয়াড়া ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি ভাষার মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করার জন্যে যান।[৪]

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে নিরুপমা রাও ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস এবং ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এই দুটোর জন্যেই অল ইন্ডিয়া সিভিল সার্ভিসেস এগজামিনেশন-এ সর্বোচ্চ স্থানে ছিলেন, এবং শেষে তিনি ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে যোগ দিতে মনস্থ করন।[২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

প্রাথমিক কর্মজীবন সম্পাদনা

মুসৌরি লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনএ তার ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতাবাসে কাজে যোগ দিয়েছিলেন, যেখানে ভিয়েনা ইউনিভার্সিটিতে জার্মান ভাষা শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে নিরুপমা রাও নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রণালয়ের (এমইএ) যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নেপাল দপ্তরে আন্ডার সেক্রেটারি পদে কাজ করেন।[৫]

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে নিরুপমা রাও শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় হাই কমিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি নিযুক্ত হন।[৬] এখানে তিনি বিধ্বংসী ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের জাতিগত দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেন, যেটা শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ-এর সূচনা হিসেবে চিহ্নিত ছিল।

দিল্লিতে ফেরার পর নিরুপমা রাও চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিশেষায়িত করেন। তিনি ১৯৮৪ থেকে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত একাদিক্রমে ৮ বছর অভূতপূর্বভাবে বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া বিভাগে কাজ করেছেন; অবশেষে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের দশকে ওই বিভাগের জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়েছিলেন। নিরুপমাদেবী এই সময়কালে চিন-ভারত সীমান্ত বিতর্কের বিষয়ে বিশেষজ্ঞে পরিণত হন এবং তাকে চিন-ভারত বন্ধন পুনরুজ্জীবনের মূল স্থপতি হিসেবে দেখা যায়।[৭] ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে যখন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি ঐতিহাসিক বেইজিং সফর করেন, তখন তার নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য ছিলেন নিরুপমাদেবী।[৮] তিব্বতীয় ব্যাপারে তার আগ্রহ ছিল দৃঢ়, ফলে তিব্বতের স্বশাসিত অঞ্চল একাধিকবার সফর করেন, যেমন ভারতীয় তীর্থযাত্রী একটা দলের নেতৃত্বে তিনি পবিত্র কৈলাশ পর্বত এবং মানস সরোবর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের অগস্টে যাত্রা করেন[৯] এবং ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মে তিনি লাসা এবং জিগেজ সফর করেন।

নিরুপমা রাও ১৯৯২-৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ওয়েদারহেড সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সএ একজন ফেলো ছিলেন।[১০][১১] সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার নিবন্ধ ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে কোনো ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস আধিকারিক দ্বারা লিখিত শ্রেষ্ঠ তত্ত্বালোচনার জন্যে বিমল সান্যাল পুরস্কার জিতেছিল।

হার্ভার্ডে তার কার্যকালে নিরুপমাদেবী ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াশিংটন ডিসিতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতাবাসের তথ্য ও সংস্কৃতির মিনিস্টার ফর প্রেস হিসেবে কাজ করেন।

পেরু এবং বলিভিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত সম্পাদনা

নিরুপমা রাওয়ের প্রথম রাষ্ট্রদৌত্য বলিভিয়াতে সহবর্তমান মান্যতার সঙ্গে পেরুতে ছিল, যেখানে তিনি ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কাজ করেন। তার কার্যকালেই স্বপদে থাকা কোনো ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রথম পেরু সফর করেন, যখন কে আর নারায়ণন ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল-মে মাসে পেরু সফর করেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে পেরুদেশীয় রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফুজিমরির ভারত সফরের অনুসরণে এটা হয়েছিল, যা পেরুদেশীয় একজন রাষ্ট্রপ্রধানের শেষ সফর ছিল। ওই সফরের ফলস্বরূপ সহযোগিতাপূর্ণ বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কয়েকটা চুক্তি এবং দুটো ব্যবসায়িক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছিল।[১২]

নিরুপমা রাও লিমায় জাপানি সম্রাটের জন্মদিন উদযাপনে অভ্যর্থনা চলাকালে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৬ জাপানি দূতাবাসে হাজির ছিলেন। তার দূতাবাস ছাড়ার কয়েক মিনিট আগে টুপ্যাক আমারু একদল যুদ্ধবাজ দ্বারা ঝটিতি আক্রমণ হয়েছিল, যারা পরবর্তী চার মাস দূতাবাস দখল করে রেখেছিল, একাধিক উচ্চস্তরীয় প্রতিভূকে আটকে রেখেছিল।[১৩][১৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Nirupama Rao takes over as Foreign Secy Press Trust of India / New Delhi, Business Standard, 1 August 2009.
  2. Nirupama Rao is India's new foreign secretary The Times of India, 1 August 2009."Chokila Iyer was first woman, Indian Foreign Secretary in 2001."
  3. "Nirupama Rao To Replace Menon As Foreign Secretary"The Economic Times। ET Bureau। জুলাই ১, ২০০৯। 
  4. "Ex-Foreign Secretary Visits Bamu"The Times of India। Times News Network। জুন ২৪, ২০১৬। 
  5. Matt Bewig (নভেম্বর ২, ২০১১)। "Ambassador From India: Who Is Nirupama Rao"All Gov 
  6. V.S. Sambandan (সেপ্টেম্বর ১৮, ২০০৪)। "Nirupama Rao presents credentials to Chandrika"The Hindu। জানুয়ারি ১৮, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯ 
  7. C. Raja Mohan (জুন ১৩, ২০০১)। "Nirupama Rao Takes Over"The Hindu 
  8. "Nirupama Rao awarded Jawaharlal Nehru Fellowship"The Economic Times। PTI। নভেম্বর ১২, ২০১৪। 
  9. Ilica Malkanthi Karunaratnetne। "Personality of the Week: Nirupama Menon Rao"The Island। ৭ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  10. "Fellows Program"Weather Center for International Affairs Harvard University 
  11. "USINPAC congratulates Nirupama Rao on becoming the new Indian Ambassador to the US"USINPAC। আগস্ট ২, ২০১১। অক্টোবর ৫, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯ 
  12. "India – Peru Bilateral Relations"Embassy of Peru in India। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  13. K.P. Nayar (আগস্ট ২, ২০০৯)। "New Foreign Secretary Only Woman to Tour Entire Border with China"The Telegraph (India) 
  14. Matt Bewig (নভেম্বর ২, ২০১১)। "Ambassador From India: Who Is Nirupama Rao"All Gov