নিয়ানডার্থাল

হোমো গণের একটি বিলুপ্ত প্রজাতি

নিয়ানডার্থাল (ইংরেজি ভাষায়: Neanderthal) একটি জীবাশ্ম-নৃতাত্ত্বিক প্রজাতির নাম যারা প্লাইস্টোসিন যুগে বাস করতো। এরা হোমো গণের অন্তর্ভুক্ত। এজন্যই তাদের দ্বিপদী নাম Homo neanderthalensis বা Homo sapiens neanderthalensis। তাদের আবাসস্থল ছিল ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্য ও পশ্চিম অঞ্চল। ৬০০,০০০ - ৩৫০,০০০ বছর আগে ইউরোপে প্রথম প্রাক-নিয়ানডার্থাল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটে। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে অনেক সময় Homo heidelbergensis নামক অন্য একটি ক্ল্যাডিস্টিক প্রজাতির বৈশিষ্ট্য শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হাইডেলবার্গেনসিসের আরেকটি অভিবাসিত রূপ হচ্ছে Homo rhodesiensis। ১৩০,০০০ বছর আগে প্রথম পরিপূর্ণ নিয়ানডার্থাল বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু ৫০,০০০ বছর আগে এশিয়াতে এবং ৩০,০০০ বছর আগে ইউরোপে এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে নবীন নিয়ানডার্থাল হচ্ছে Hyaena Den (যুক্তরাজ্য) যা ৩০,০০০ বছর আগে অস্তিত্বশীল ছিল। Vindija (ক্রোয়েশিয়া) নামে আরেক নিয়ানডার্থাল পাওয়া গেছে যার বয়স ৩২,০০০ থেকে ৩৩,০০০ বছরের মধ্যে। এমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ানডার্থাল পাওয়া যায়নি যার বয়স ৩০,০০০ বছরের কম। নিয়ানডার্থাল বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ আধনিক মানুষও পাওয়া গেছে যার নাম Lagar Velho (পর্তুগাল)। ২৪,৫০০ বছর বয়স্ক এই আধুনিক মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের চূড়ান্ত সমন্বয় দেখা যায়।

নিয়ানডার্থাল
সময়গত পরিসীমা: মধ্য থেকে শেষ প্লাইস্টোসিন ০.২৫–০.০২৮কোটি
জাদুঘরে নিয়ানডার্থাল খুলি।
90px
আমেরিকান প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে নিয়ানডার্থালের কঙ্কাল।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Primates
পরিবার: Hominidae
গণ: Homo
প্রজাতি: H. neanderthalensis
দ্বিপদী নাম
Homo neanderthalensis
কিং, ১৮৬৪
Range of Homo neanderthalensis. Eastern and northern ranges may extend to include Okladnikov in Altai and Mamotnaia in Ural
প্রতিশব্দ

Homo mousteriensis[]
Homo sapiens neanderthalensis
Palaeoanthropus neanderthalensis[]

ইতালির প্রত্নতত্ত্ববিদরা নিয়ানডার্থাল মানবের নয়টি জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথার খুলি, ভেঙ্গে যাওয়া চোয়াল প্রভৃতি। উপকূলীয় শহর স্যান ফেলিস সিরসেও’র গুয়াত্তারি গুহায় এগুলো পাওয়া গেছে। নয়টি জীবাশ্মের মধ্যে আটটি ৫০ হাজার থেকে ৬৮ হাজার বছরের পুরনো। আর একটি ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ বছরের পুরনো। প্রাপ্ত নমুনার সাতটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, একটি নারী এবং একটি কিশোর।[]

যেখানে জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া কঙ্কালের অবশেষ পাওয়া যায়নি সেখানেও ব্যবহৃত পাথরের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে নিয়ানডার্থালদের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। নিয়নডার্থালদের সাথে সম্পর্কিত বিশেষ ধরনের পাথরের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সংস্কৃতিকে Mousterian সংস্কৃতি নামে অভিহিত করা হয়। এই সংস্কৃতির শেষ চিহ্ন পাওয়া গেছে জিব্রাল্টার এর দক্ষিণমুখী উপকূলে অবস্থিত Gorham গুহায়। এছাড়া নিয়ানডার্থালদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য পাথর সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে Châtelperronian, Aurignacian এবং Gravettian। এর মধ্যে Gravettian ২২,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত টিকে ছিল। এটাই তাই নিয়ানডার্থাল উপস্থিতির সর্বশেষ প্রমাণ।

দৈহিক গঠনতন্ত্র

সম্পাদনা

নিয়ানডার্থালদের করোটির ক্ষমতা আধুনিক মানুষের চেয়ে বেশি। এটা নির্দেশ করে, সম্ভবত তাদের মস্তিষ্কের আকারও মানুষের চেয়ে বড় ছিল। তারা মূলত মাংসাষী ছিল, এ কারণে শিকারেও তাদের দক্ষতা ছিল অতুলনীয়। গড়পরতায় তাদের উচ্চতা তখনকার হোমো স্যাপিয়েন্সদের সাথে তুলনীয় ছিল। পুরুষদের উচ্চতা ছিল ১৬৫-১৬৮ সেমি (৫'৫), হাড়ের শক্তিশালী গড়নের কারণে তারা বেশ ভারী ছিল। তাদের হাত ও বাহুতে অনেক শক্তি ছিল। নারীদের উচ্চতা ছিল ১৫২-১৫৬ সেমি (৫'১)। তাদের স্তনের আকৃতি খুব বড় ছিল। কারণ খুব দ্রুত মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধির জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন ছিল। আর নিয়ানডার্থাল শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে এই শক্তির একমাত্র উৎস ছিল মায়ের স্তন্য।

পুরস্কার

সম্পাদনা

নিয়ান্ডারথাল মানুষের জিন বিন্যাস নতুন করে তৈরি করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ২০২২ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ বিজ্ঞানী ড. সেভান্তে পেবো।এই গবেষণার মাধ্যমে তিনি নিয়ান্ডারথালের ডিএনএ-র বিন্যাস আবিষ্কারের সাথে একই সঙ্গে এর জিনোম এবং আধুনিক মানুষের মধ্যে সংযোগও খুঁজে পান। এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে হোমো স্যাপিয়েন্সের সাথে নিয়ান্ডারথালদের যৌন সম্পর্ক ছিল এবং নিয়ান্ডারথালদের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটেছিল। একই সঙ্গে গবেষকরা হোমিনিডের আরেকটি প্রজাতি আবিষ্কার করেন, যার নাম ডেনিসোভান,যারা মূলত এশিয়ায় বাস করত। []

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
  • BBC.co.uk - 'Neanderthals "had hands like ours": The popular image of Neanderthals as clumsy, backward creatures has been dealt another blow', Helen Briggs, BBC (March 27, 2003)