নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা সংক্ষেপে জেএসসি, বাংলাদেশের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য একটি গণপরীক্ষা। মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য প্রদানকৃত সমমানের সনদকে বলা হয় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট বা জেডিসি। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় এবং তাদের নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া এ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জুনিয়র বৃত্তি প্রদান করা হবে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সাধারণ স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের পরবর্তী সকল জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।[]

পরীক্ষা পরিচালনা

সম্পাদনা

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বাংলাদেশের সমগ্র দেশব্যাপী নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশপত্র নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট থেকে পরীক্ষা আরম্ভের কমপক্ষে তিন দিন পূর্বে সংগ্রহ করতে হয়। প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনী পরীক্ষায় একই উত্তরপত্র ব্যবহার করতে হয়। পরীক্ষার্থীদেরকে তাদের নিজ নিজ উত্তরপত্রের ওএমআর ফরমে তার পরীক্ষার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি যথাযথভাবে লিখে বৃত্ত ভরাট করতে হয়। যেহেতু ওএমআর ফরম ওএমআর মেশিন দিয়ে যাচাই করা হয় তাই উত্তরপত্র ভাঁজ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। পরীক্ষার্থীকে প্রত্যেক বিষয়ে স্বাক্ষরলিপিতে অবশ্যই স্বাক্ষর করতে হয় কেননা এর দ্বারা নিশ্চিত হওয়া যায় পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন কিনা। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী কেবল নিবন্ধনপত্রে বর্ণিত বিষয় বা বিষয়সমূহের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। কোনো অবস্থায়ই ভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায় না, কিংবা করলে তা বাতিল বলে গণ্য হয়। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার অধিকার পেয়ে থাকেন। পরীক্ষায় নকল ঠেকাতে পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ব্যতীত অন্য কারোই পরীক্ষা-কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারে অনুমতি থাকে না। পরীক্ষার ফল প্রকাশের ১০ দিনের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য এসএমএস-এর মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ থাকে।

পরীক্ষার কাঠামো

সম্পাদনা

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ৭টি বিষয়ে গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে ৭টি বিষয়ে ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। ইংরেজি, বাংলা , সাধারণ বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে রচনামূলক অংশ ও বহুনির্বাচনী অংশ হিসেবে প্রশ্ন থাকবে।

এ পরীক্ষার মোট ৬৫০ নম্বরের মধ্যে ১৭৫ নম্বরই রয়েছে বহুনির্বাচনী অংশে। বাংলা , সাধারণ বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, —এ ছয়টি বিষয়ে বহুনির্বাচনী অংশ থাকে। শিক্ষার্থীদের বহুনির্বাচনী ও রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর একই খাতায় দিতে হয়। কোনো বিষয়ে কত নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন রয়েছে তা সাধারণত এরকম:[]

  • বাংলা (মোট নম্বর ১০০) — ৩০ নম্বর
  • ইংরেজি (মোট নম্বর ১০০) — বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকে না
  • গণিত (মোট নম্বর ১০০) — ৩০নম্বর
  • সাধারণ বিজ্ঞান (মোট নম্বর ১০০) — ৩০ নম্বর
  • সামাজিক বিজ্ঞান (মোট নম্বর ১০০) — ৩০ নম্বর
  • ধর্মশিক্ষা (মোট নম্বর ১০০) — ৩০ নম্বর

জেএসসি ২০১১

সম্পাদনা

২০১১ খ্রিস্টাব্দের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে এবং উত্তীর্ণ হয়ে ১২ লাখ ৩১ হাজার ৮৮০ জন। ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট ও দিনাজপুর—এ আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের পরিচালনায় জেএসসি পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হয়।[] ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা সোয়া লাখ বেশি ছিল।[]

জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট

সম্পাদনা

জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট বা জে.ডি.সি বা জেডিসি হল জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট সমমানের একটি সরকারি পরীক্ষা যা মাধ্যমিক বোর্ড বাংলাদেশের অধীনে নেওয়া হয়। এই পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে ৮ম শ্রেণীতে বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোন মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীদেরকে টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে মূল পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদেরকে বসতে হয়। জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ২০১০ সাল হতে চালু হয় । জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বাংলাদেশের সমগ্র দেশব্যাপী আটটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়[]

স্থগিত পরীক্ষাসমূহ

সম্পাদনা

২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে ৯, ১১ ও ১২ নভেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিতব্য সকল জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল এবং পরীক্ষাগুলো ঘূর্ণিঝড়ের পরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[]

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সালের নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা আয়োজিত হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেছিল।

২০২০ সালের মতই বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২১ সালের নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা আয়োজিত হয়নি। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশ মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক মূল্যায়ন এবং ৫০ নম্বরের তিন বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজি, গণিত) উপর ভিত্তি করে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেছিল।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. প্রতিবেদক, বিশেষ (২০২৩-০১-১৬)। "জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাদ হয়ে গেল"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-০৭ 
  2. "অংশে পুরো নম্বর পাওয়ার কৌশল"। ২০২০-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৫ 
  3. "শোর তুলেছে কৈশোর"। ২০২০-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২ 
  4. "ছাত্রীরা অংশগ্রহণে এগিয়ে, ফলাফলে ছাত্ররা"। ২০২০-০৬-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২ 
  5. "এ হাসি ছড়িয়ে গেল সবখানে"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  6. Correspondent, Staff; bdnews24.com। "Cyclone Bulbul forces rescheduling of Saturday's JSC, JDC, National University exams"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৯ 

আরোও দেখুন

সম্পাদনা