নিভাননী দেবী (ইংরেজি: Nivanani Devi) (২ মার্চ , ১৮৯৫  – ২২ ডিসেম্বর , ১৯৭৮) বাংলা চলচ্চিত্রের নির্বাক ও সবাক - দুই যুগেরই স্বনামধন্য ও জনপ্রিয় নায়িকা। রঙ্গমঞ্চে অভিনয় শুরু করে চলচ্চিত্র জগতেও প্রবেশ করেন। নৃত্যে ও সঙ্গীতে সমান পারদর্শী ছিলেন। [১][২] 

নিভাননী দেবী
জন্ম২ মার্চ, ১৮৯৫
মৃত্যু২২ ডিসেম্বর ১৯৭৮(1978-12-22) (বয়স ৮৩)
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
পরিচিতির কারণঅভিনেত্রী
দাম্পত্য সঙ্গীহেমেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী
পিতা-মাতাযতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (পিতা)
ব্রজরানি দেবী (মাতা)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

নিভাননী দেবীর জন্ম ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২ রা মার্চ ( ১৩০৩ বঙ্গাব্দের ২০ শে ফাল্গুন) পিতা ছিলেন যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা অভিনেত্রী ব্রজরানি দেবী। মাত্র নয় বৎসর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন এবং ১৫ বৎসর বয়সে পিতাকেও হারান। এমতাবস্থায় নিভাননীকে ছয় ভাইবোনসহ মামার বাড়িতেই থাকতে হয়েছিল। সেখানে মায়ের বান্ধবী প্রখ্যাত অভিনেত্রী চুনিবালার কাছেই তারা লালিত পালিত হন এবং তার হাত ধরেই ৬ বৎসর বয়সে বাংলার রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করেন। অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি পরিচালিত "সমাজ" নাটকে এক ছোট্ট বালক চরিত্রে তার প্রথম অভিনয়। নাচ ও গানেও পারদর্শিনী ছিলেন তিনি। এগারো বৎসর বয়স থেকে ন্যাশনাল থিয়েটারে গুলজেররিনা, হীরের ফুল ও আরো অনেক নাটকে ব্যালে ট্রুপের মধ্যে নাচতেন। তার অভিনয়ের প্রথম শিক্ষা অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি,অভিনেত্রী তারাসুন্দরী এবং পরে নরেশ মিত্রের কাছে।

অভিনয় জীবন সম্পাদনা

'বলিদান' নাটকে অভিনয় করে প্রথমে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ন্যাশনাল থিয়েটারে থাকাকালীন প্রভূত অর্থের অধিকারী যশোরের এক জমিদার এবং নাট্যপ্রেমিক হেমেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরীর সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের পর মঞ্চ ছাড়লেও পরে অপরেশচন্দ্র মজুমদার ও প্রবোধ গুহের অনুরোধে স্টার থিয়েটারে 'অযোধ্যার বেগম' নাটকে প্রথমে গুজারী চরিত্রে এবং পরে তারাসুন্দরী অসুস্থ হলে মূখ্য রানি চরিত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ওই সময় আর্ট থিয়েটারের সঙ্গে বর্মার রেঙ্গুনেও অভিনয় করেন। মিনার্ভা থিয়েটারে থাকাকালীন সময়ে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আকাশবাণী কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত হন। প্রায় পঞ্চাশ বৎসরের অভিনেত্রী জীবনে মঞ্চ ছাড়া চলচ্চিত্রে ৩৫০ টি ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন। শঙ্করাচার্য, বিষবৃক্ষ, নিষিদ্ধ ফল, প্রহ্লাদ প্রভৃতি নির্বাক ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। নিভাননী অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল -

  • চিরকুমার সভা (১৯৩২) শৈলবালা চরিত্রে 
  • কপালকুণ্ডলা (১৯৩৩) মতিবিবির চরিত্রে 
  • মীরাবাঈ (১৯৩৩) লালাবাঈয়ের চরিত্রে
  • পরপারে (১৯৩৬) হিরণ্ময়ী চরিত্রে
  • ইম্পস্টার (১৯৩৭) ক্ষীরি চরিত্রে
  • প্রভাস মিলন (১৯৩৭) যশোদা চরিত্রে 
  • জীবন মরণ (১৯৩৯) গীতার মা চরিত্রে
  • বড়দিদি বিন্দু চরিত্রে 
  • বামনাবতার অদিতি চরিত্রে।

তার অভিনীত আরো ছায়াছবিগুলি হল -'যখের ধন', 'অমরগীতি', 'শাপমুক্তি', 'ব্যবধান', 'কবি জয়দেব', 'প্রতিশোধ', 'শ্রীরাধা',  'জননী', 'সহধর্মিণী', মানে না মানা', 'সাত নম্বর বাড়ি', 'দেশের দাবি' 'রামপ্রসাদ', স্বয়ংসিদ্ধা' প্রভৃতি। নিভাননী দেবী এক শৌখিন নাট্যদলের হয়ে 'বিপ্রদাস' নাটকে শেষ অভিনয় করেন এবং তার শেষ অভিনীত ছায়াছবি ছিল ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত "রাতের রজনীগন্ধা"। ওই ছবিতে তার সঙ্গে উত্তমকুমার, অপর্ণা সেন ,অজয় ব্যানার্জি, বঙ্কিম ঘোষ প্রমুখেরাও ছিলেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

বাংলা রঙ্গমঞ্চ ও চলচ্চিত্র জগতের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬,  পৃষ্ঠা ৩৬১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. ওয়েব উদ্ধৃতি | শিরোনাম = বাংলা ছায়াছবির নির্বাক নায়িকারা| ইউআরএল =  https://www.4numberplatform.com/?p=922%7C[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] সংগ্রহের-তারিখ =২০২১-০৩-০৩}}