নারিকুরাভা হল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি আদিবাসী গোষ্ঠী।

আদিবাসী উপজাতির মানুষদের প্রধান পেশা শিকার করা। কিন্তু আধুনিক আইন অনুযায়ী তাদের বনপ্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা তাদের পশু শিকারের জীবিকার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন ও বেঁচে থাকার জন্য পুঁতির গয়না বিক্রির মতো অন্যান্য বিকল্প পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তাই তারা তাদের পুঁতির খরিদ্দার খুঁজতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুড়ে বেড়ান। শিশুরাও প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে থাকে। তাই তারা স্কুলে যেতে পারে না ও প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় তাদের ফৌজদারি উপজাতি আইনের (১৮৭১ সালের) অধীনে রাখা হয়েছিল, এবং স্বাধীনতার পর্বরতীকালেও দীর্ঘ সময়ের জন্য এই জন সম্প্রদায় কলঙ্কিত ছিল। ১৯৫২ সালে তাদের বিমুক্ত জাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারপরেও তাদের জাতিগত কলঙ্ক অব্যাহত রয়েছে। [১]

নারিকুরাভাদের আসল নাম ওয়াগ্রিভালা বা কুরুভিক্কারন বা নাক্কালে বা আক্কিবিক্কি। কিন্তু তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম জি রামচন্দ্রনের শাসনকালে ভুলভাবে তাদের নারিকুরাভা নামকরণ করা হয়েছিল। সঙ্গম সাহিত্যে উল্লিখিত আছে যে কুরিঞ্জি থিনাই পাহাড়ের কুরভারা তামিল জনজাতির অন্তর্গত। কিন্তু এই নারিক্কাররা ছিলেন মারাঠি। তারা বন্দুক দিয়ে শিকার করে কিন্তু মূল তামিল কুরভাদের পেশা বাঁশের ঝুড়ি তৈরি করে মধু সংগ্রহ করা এবং তীর-ধনুক দিয়ে শিকার করা। তামিল কুরভা এবং মারাঠি আক্কিবিক্কি সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি উল্লেখনীয় পার্থক্য।

ভাষা সম্পাদনা

নারিকুরভারা সম্প্রদায়ের লোকেরা ভাগরী বুলি নামক অশ্রেণীবদ্ধ ইন্দো-আর্য ভাষায় কথা বলে। [২] [৩]

 
নারিকুরাভা রাস্তার ধারে পুঁতি বিক্রি করেছে

রীতিনীতি এবং অভ্যাস সম্পাদনা

প্রতিটি নারিকুরাভা গোষ্ঠীর কাছে একটি বস্ত্রের পুটলি থাকে যার নাম সামি-মুতাই। সামি-মুতাই কথার অর্থ ঈশ্বরের বান্ডিল[৪] প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই পুটলি নারিকুরাভাদের বলি দেওয়া পশুর রক্ত দ্বারা রঞ্জিত কাপড়ে পূর্ণ থাকে। নারিকুরাভাদের বিশিষ্ট পদাধিকারী ব্যাক্তি হল সামী-মুতাই। এক বংশের সামি-মুতাইকে অন্য বংশের সদস্যদের দ্বারা স্পর্শ করতে দেওয়া হয়না। পরিবারের প্রধানের মৃত্যুতে তার বড় ছেলে সামী-মুতাই পদবির উত্তরাধিকারী হয়। [৪] একজন গোষ্ঠী-নেতার প্রতিপত্তি নির্ভর করে তার সামী-মুতাই -এর প্রাচীনত্বের উপর।

সামাজিক সমস্যা সম্পাদনা

নারীকুরাভাদের প্রধান সমস্যাগুলি হল দারিদ্র্য, অশিক্ষা, রোগ এবং বৈষম্য

প্রাচীনকাল থেকেই নারীকুরাভাদের সাথে বৈষম্য চলে আসছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায় এবং অন্যান্য কিছু সম্প্রদায় দ্বারা নিষিদ্ধ ও অস্পৃশ্য বলে বিবেচিত হয়। উচ্চ বর্ণের অধ্যুষিত রাস্তায় তাদের হাটা নিষিদ্ধ। এতে তাদের সমাজের মধ্যে প্রতিবাদ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। [৫] যাইহোক, নারিকুরভারা এখনও তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি।

উচ্চ অপরাধের হার এবং বেকারত্ব হল নারিকুরাভা সম্প্রদায়ের অন্যান্য সমস্যা। শেয়াল শিকারের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বিপন্ন প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণী হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা নারিকুরভাদের তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবিকা পশু শিকার থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছে। ফলে বেকার নারীকুরাভা যুবকরা অপরাধ ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে যখন নারিকুরাভা ব্যাক্তিকে অনৈতিকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে যা ভারতীয় আইন অনুসারে নিষিদ্ধ। [৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Meena Radhakrishna (২০০৬-০৭-১৬)। "Dishonoured by history"folio: Special issue with the Sunday MagazineThe Hindu। Archived from the original on ২০১১-০৪-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-৩১ 
  2. S. Theodore Baskeran (১৯৮৯)। "Introduction to Narikorava Studies, from Gift Siromoney's website"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২৬ 
  3. Indira Viswanathan Peterson (২০০২)। "Peasants, nomadic hillwomen and birdcatchers: Landscape and environmental dialogues in early modern South Indian literature" (পিডিএফ)। Mount Holyoke College। ২০০৬-০৯-০১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২৬ , Pg 48
  4. J.P.Vijayathilakan (১৯৭৭)। "Some ceremonies of the Narikoravas"Studies on Vaagrivala। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২৬ 
  5. "Narikuravas running from pillar to post for ST status"The Hindu: Friday Review। ১৪ জানুয়ারি ২০০৫। Archived from the original on ১১ নভেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২৮ 
  6. "Narikoravas arrested"The Hindu। ২৬ জুলাই ২০০৮। ৩১ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২৮