ধানি তুলিকা

পাখির প্রজাতি

ধানি তুলিকা (বৈজ্ঞানিক নাম: আন্থুস রুফুলুস) হল তুলিকা ও খঞ্জন গোত্রের একটি ছোট প্যাসারিফর্মিস পাখি। এরা আবাসিক (অ-পরিযায়ী) জাতের পাখি যারা দক্ষিণ এশিয়া থেকে ফিলিপাইন্স পর্যন্ত খোলা তৃণভূমি এবং চাষাবাদ ক্ষেত্রে বিচরণ করে। এশীয় অঞ্চলে কয়েকটি তুলিকার প্রজনন হলেও, শীতকালে দূরদুরান্ত থেকে অন্য বেশ কয়েকটি প্রজাতি এই অঞ্চলে স্থানান্তরিত হলে, দেখতে প্রায় একই ধরনের হওয়ায় অন্য গোষ্ঠীভুক্ত তুলিকাদের থেকে এদের আলাদা করা বেশ কঠিন হয়। প্রজাতিটির শ্রেণিবিন্যাস বেশ জটিল এবং এরা যথেষ্ট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে।

বিবরণ সম্পাদনা

ধানি তুলিকা ১৫ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের উপরের অংশে ধূসর-বাদামী এবং বুকের দিকে হাল্কা ডোরাকাটা দাগ থাকে। এদের লম্বা পা, লম্বা লেজ এবং দীর্ঘ কালছে ঠোঁট রয়েছে। পুরুষ-স্ত্রী তুলিকা দেখতে অনুরূপ। গ্রীষ্ম ও শীতকালে পালকে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তরুণ পাখিদের প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে নিচের দিকে রঙ বেশি উজ্জ্বল থাকে এবং পালকের উপরের অংশের প্রান্তভাগ ফ্যাকাশে হয়। বুকের ওপরের দাগ তুলনামূলকভাবে প্রকট থাকে। উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং পাকিস্তানের ওয়াইতেই পাখিগুলির রঙ ফ্যাকাশে থাকে, অন্যদিকে পশ্চিম ঘাটের মালায়েনসিস পাখিগুলির রঙ গাঢ় থাকে ও এরা আকারে বড় হয়।

দেখতে অনুরূপ হওয়ায় শীতকালে এদের অন্যদের থেকে আলাদা করে চেনাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, যেমন রিচার্ডের তুলিকা (আন্থুস রিচার্ডি) এবং ব্লিথের তুলিকা (আন্থুস গডলেওস্কিই)। ধানি তুলিকা ছোট এবং বেঁটে, এদের ছোট গড়নের লেজ রয়েছে। সাধারণত এদের চিপ-চিপ-চিপ ধ্বনি রিচার্ডের তুলিকা (বিস্ফোরিত শ্রীপ) এবং ব্লিথের তুলিকা (অনুনাসিক স্ক্রচরিন)-এর চেয়ে বেশ আলাদা। তামাটে তুলিকা গায়ে কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে ও এদের দীর্ঘ লেজ থাকে। পশ্চিম ঘাটের তুলিকাগুলি দেখতে নীলগিরি তুলিকাগুলির মতো হতে পারে।[১][২]

আচরণ ও বাস্তুসংস্থান সম্পাদনা

খোলা আবাসস্থল, বিশেষত সংক্ষিপ্ত তৃণভূমি এবং খোলা খালি জমিতে এদের পাওয়া যায়। এরা মাটিতে দ্রুত দৌড়াতে পারে, এবং ধাওয়া দিলে, খুব বেশি দূরে উড়ে যায় না।

ধানি তুলিকা সারা বছর ধরে বংশ বৃদ্ধি করে তবে মূলত শুকনো মৌসুমে বেশি দেখা যায়। এদের বছরে দুই বা আরও বেশি পাখিশাবক থাকতে পারে। প্রজনন মৌসুমে, মেয়ে পাখিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য, পুরুষ মাটি থেকে কয়েক ফুট ওপরে ঘনঘন ডাকতে থাকে। এরা স্বল্প গোছরে একঝাঁক ঘাসের মাঝে বা ঝোপের কিনারায় মাটিতে বাসা তৈরি করে। বাসাগুলি ঘাস এবং পাতা থেকে বোনা হয় এবং সাধারণত কাপ আকৃতির হয়। উন্মুক্ত বাসাগুলি কখনও কখনও গম্বুজ বা অর্ধ-গম্বুজ আকৃতির হয়, ও বাসার পিছনে এবং পাশের অংশের দীর্ঘ ঘাস বাসার শীর্ষ অংশ পর্যন্ত প্রসারিত করতে দেখা যায়। বাসাগুলি ঘাস বা শিকড় দিয়ে এবং কখনও কখনও সামান্য শুকনো শ্যাওলা, ফার্নবিশেষ বা অন্যান্য উপাদান দিয়ে ঘিরে রাখতে দেখা যায়। এরা একসাথে তিন বা চারটি ডিমে তা দিয়ে থাকে। ডিমগুলি সবুজাভ ও গায়ে অসংখ্য ছোট ছোট বাদামী চিহ্ন থাকে। এদেরকে এদের বাসায় কোন কারণে বিরক্ত করা হলে, এরা নিম্ন মাত্রার চিপ-চিপ-চিপ শব্দে ডাকে। অভিভাবক পাখি শিকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য আহত হওয়ার ভান করতে পারে।[৩] চেলোপোকা এদের পায়ে ক্ষতসৃষ্টি করে বলে পাওয়া গেছে।[৪] ছোট পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য। যদিও বড় বিটল, ছোট শামুক, কৃমি জাতীয় প্রাণী খেতেও দেখা যায়। উড়ন্ত অবস্থায় মশা বা উইপোকার মত পোকামাকড় ধরতেও দেখা যায়।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Rasmussen PC; JC Anderton (২০০৫)। Birds of South Asia: The Ripley Guide. Volume 2। Smithsonian Institution & Lynx Edicions। পৃষ্ঠা ৩১৮।  অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. বেকার, ইসিএস (১৯২৬)। Fauna of British India. Birds. Volume 3 (২য় সংস্করণ)। টেলর এন্ড ফ্রান্সিস, লন্ডন। পৃষ্ঠা ২৯০–২৯১। 
  3. Ali, S; Ripley, S.D. (১৯৯৮)। Handbook of the birds of India and Pakistan (২য় সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ২৫৫–২৬০।  অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. Sangvaranond, A; Sataporn Jittapalapong, Kaset Sutasha; Wissanuwat Chimnoi1 (২০০৭)। "Case Report: Cnemidocoptiasis (Scaly Leg) of Paddyfield Pipit Bird (Anthus rufulus) in Petchaburi Province of Thailand" (পিডিএফ)Kasetsart Veterinarians১৭ (২): ৯১–৯৬। ১৯ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২০  অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা