দুষ্মন্ত

মহাভারতের চরিত্র

দুষ্মন্ত (সংস্কৃত: दुष्यन्त) প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের একটি চরিত্র, শকুন্তলার স্বামী, ভরতের পিতা। কালিদাসের শকুন্তলা নাটক ও মহাভারত মহাকাব্যে এই চরিত্রটি এসেছে। দুষ্মন্ত নামের অর্থ ”শত্রু বিনাশকারী”। মহাভারত অনুসারে, দুষ্মন্ত ইলিনা এবং রথনতারার সন্তান।[১] দুষ্মন্ত সুর, ভীম, প্রবসু এবং বসুর মধ্যে সবার চেয়ে বড় হওয়ায় তাকে হস্তিনাপুরের রাজা নির্বাচিত করা হয়েছিল। তিনি কুরু বংশের পূর্বপুরুষ। মৃগয়া যাবার পথে এক গভীর জঙ্গলে কণ্ব ঋষির আশ্রমে তার সাথে শকুন্তলার পরিচয় ও পরিণয় হয়েছিল। তাদের মিলনে ভরতের জন্ম হয়। ভরত পরবর্তিতে সমগ্র ভারতবর্ষের সম্রাট হয়েছিলেন।

দুষ্মন্ত
দুষ্মন্ত ও শকুন্তলা
দাম্পত্য সঙ্গীশকুন্তলা
সন্তানভরত
উদ্ভবহস্তিনাপুর

দুষ্মন্ত তখন রাজকুমার ছিলেন। মুনি আশ্রমে শকুন্তলার সাথে দেখা হবার পর তারা পরস্পরের প্রেমে পড়েন এবং গন্ধর্ব মতে বিবাহ বন্ধনের আবদ্ধ হন। কণ্ব তখন তীর্থে ছিলেন। কিছুকাল আশ্রমে বসবাস করার পরও কণ্ব ফিরে না আসায় দুষ্মন্ত রাজধানীতে ফিরে আসেন। আসার সময় শকুন্তলাকে একখানি রাজকীয় আংটি উপহার দিয়ে পুনরায় ফিরে আসবেন বলে কথা দেন। শকুন্তলা স্বামীর অপেক্ষায় থাকেন। একদিন দুর্বাসা মুনি আশ্রমে আসেন। শকুন্তলা স্বামীর চিন্তায় এত মগ্ন ছিলেন যে মুনিকে খাবার দিতে ভুলে যান। এতে দুর্বাসা রেগে যান এবং শকুন্তলাকে এই বলে অভিশাপ দেন যে, যার কথা চিন্তা করতে গিয়ে শকুন্তলা তার খাবার পরিবেশনের কথা ভুলে গেল, সেও শকুন্তলাকে এমনিভাবে ভুলে যাবে। রাজধানীতে ফিরে দুষ্মান্ত শকুন্তলার কথা ভুলে যান। শকুন্তলা কাতর হয়ে দূর্বাসার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করেন এবং শাপ ফিরিয়ে নিতে বলেন। দূর্বাসার রাগ কমে গেলে তিনি শকুন্তলাকে বলেন তাদের সম্পর্কের কোন প্রমাণ দেখাতে পারলে দুষ্মন্ত তাকে পুনরায় চিনতে পারবেন।

শকুন্তলা হস্তিনাপুর গমন করেন। দুর্ঘটনা বশতঃ একটি মাছ দুষ্মন্তের দেয়া আংটিটি খেয়ে ফেলে। শকুন্তলার কাছে দুষ্মন্তের সাথে পরিচয় হবার কোন প্রমাণ আর রইল না। তখন দুষ্মন্ত তাকে ফিরিয়ে দেন। ঘটনাক্রমে অন্য একজন জেলে শকুন্তলার সেই আংটি মাছের পেট থেকে উদ্ধার করে রাজদরবারে নিয়ে আসলে দুষ্মান্ত শকুন্তলাকে চিনতে পারেন ও তাকে বিয়ে করে তার রানি রূপে বরণ করেন। তাদের ভরত নামে একটি পুত্র সন্তান হয়।

রাজা রবি ভার্মার আঁকা, দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার শিশুপুত্র ভরত।

অন্য একটি গল্পে জানা যায় যে, শকুন্তলার পিতা ছিলেন ঋষি বিশ্বামিত্র। কথিত ছিল তিনি কখনও কারও সামনে তার মাথা নত করেননি। তাই বশিষ্ঠ মুনি ও অন্যান্য ঋষিরা ষড়যন্ত্র করে দুষ্মন্তের মন থেকে শকুন্তলার সব স্মৃতি মুছে দেন। কন্যার দুঃখ দূর করতে ঋষি বিশ্বামিত্র মহারাজ দুষ্মন্তের সামনে মাথা নত করার পর দুষ্মন্তের সব স্মৃতি মনে পড়ে যায়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা