দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল
দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত পার্বত্য অঞ্চল। এটি পূর্ব হিমালয়ের একটি অংশ। দার্জিলিং অঞ্চলের পরস্পর সংলগ্ন পাহাড়-পর্বত, খাড়া ঢাল, গভীর গিরিখাত, উঁচু-নিচু প্রস্তরময় ভূখণ্ড নিয়ে এই অঞ্চলটি গড়ে ওঠেছিল। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের উত্তরে সিকিম, পূর্বে ভুটান, দক্ষিণে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভুক্ত তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল এবং পশ্চিমে নেপাল।[১]
অবস্থান
সম্পাদনাদার্জিলিং জেলার তিনটি মহকুমার মধ্যে দার্জিলিং সদর ও কার্শিয়াং মহকুমা এবং কালিম্পং ও জলপাইগুড়ি জেলার উত্তরাংশে কুমারগ্রাম ও কালচিনি থানা নিয়ে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল গঠিত।
ভূপ্রকৃতি
সম্পাদনাএই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি পর্বতসঙ্কুল ও অত্যন্ত বন্ধুর তিস্তা নদী দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রায় উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে সমগ্র অঞ্চলকে দুটি অংশে ভাগ করেছে:
- তিস্তা খাতের পশ্চিম ভাগ, যা দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত।
- তিস্তা খাতের পূর্ব ভাগ, যা কালিম্পং জেলার অন্তর্গত।
তিস্তা খাতের পশ্চিম ভাগ
সম্পাদনাএই অংশে সিংগালিলা পর্বতশ্রেণী ও দার্জিলিং পর্বতশ্রেণী উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। সিংগালিলা পর্বতশ্রেণী দার্জিলিং ও নেপাল সীমান্তে অবস্থিত। এতে ফালুট (৩,৫৯৬ মিটার), সন্দকফু (৩,৬৩০ মিটার), টাংলু (৩,৬০৮ মিটার) ও সবরগ্রাম (৩,৫৪৩ মিটার) নামে চারটি পর্বতশৃঙ্গ আছে। ফালুট শৃঙ্গটি নেপাল, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এদের মধ্যে সন্দকফু, দার্জিলিং তথা পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।
দার্জিলিং পর্বতশ্রেণী দক্ষিণের তরাই অঞ্চল থেকে খাড়াভাবে উপরে উঠে উত্তরে বিস্তৃত হয়েছে। এর দক্ষিণে টাইগার হিল (২,৬১৫ মিটার), ডাউহিল ও পূর্বে তাকদা-পেশক পাহাড়। ঘুম (২,৩৯৮ মিটার) পর্বতশৃঙ্গের উত্তর ঢালে দার্জিলিং শহরটি অবস্থিত।
তিস্তা খাতের পূর্ব ভাগ
সম্পাদনাএই অংশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল ঋষিলা (৩,১৩০ মিটার) এটি কালিম্পং শহরের কাছে অবস্থিত।
জলপাইগুড়ি জেলার উত্তরাংশে রেনিগাঙ্গো (১,৮৮৫ মিটার) ও ছোট সিঞ্চুলা (১,৭২৬ মিটার) উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ। বক্সা-দুয়ার নামে এখানে একটি গিরিপথ আছে।[২]
নদনদী
সম্পাদনাএই অঞ্চলের নদীগুলি হিমালয়ের বরফগলা জলে পুষ্ট বলে নদীতে সারাবছর জল থাকে। প্রধান নদীগুলি হল তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, মহানন্দা, কালজানি, বালাসন প্রভৃতি। রঙ্গিত তিস্তার প্রধান উপনদী।
মৃত্তিকা
সম্পাদনাপার্বত্য স্থান হওয়ায় অনুর্বর কাঁকড় ও নুড়িপূর্ণ মাটি বিদ্যমান। তবে কোনও কোনও স্থানে বাদামী রঙের পডসল মৃত্তিকা দেখা যায়। পটাশ, ফসফেট ও গাছের পাতা-পচা সার থাকায় এই মাটিতে চা, সিঙ্কোনা, কমলালেবু প্রভৃতির চাষ হয়।
অর্থনীতি
সম্পাদনাচা, কাঠ, পর্যটন ও হোটেল ব্যবসা হল এখানকার প্রধান অর্থনৈতিক মাধ্যম।এখানকার বেশির ভাগ মানুষ এই সমস্ত ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনাএই অঞ্চলে বহু দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে।এই পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে প্রতি বছর বহু দেশ-বিদেশের পর্যটক আসে।প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি হল-
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- এস আর বসু; ডি মৌলিক। ২০০২। মাধ্যমিক ভূগোল। প্রান্তিক, কলকাতা।
- বরুণ রায়, "Rediscovering Shangri La - The Story of the Himalayas", Mandalay Book (2006) আইএসবিএন ০-১২-৮৩৩২৬৩-৮
- ভি খাওয়াস, "Environment and rural development in Darjeeling Himalaya: Issues and
concerns", http://www.mtnforum.org/oldocs/189.pdf[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]