দাখিল মাদ্রাসা (আরবি:مدرسةالداخل) হলো এমন পর্যায়ের মাদ্রাসা যেখানে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় এবং দশম শ্রেণি শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে দাখিল পাসের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় যা সেকেণ্ডারী স্কুল সার্টিফিকেটের (এস.এস.সি.) সমকক্ষ। মূলত এই শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু হয় মুসলিম সন্তানদের জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি দ্বীনি শিক্ষাপ্রদানের লক্ষ্যে। অর্থাৎ এটি জেনারেল শিক্ষা (স্কুল-কলেজ) এবং দ্বীনি শিক্ষার (কওমি মাদ্রাসা) আংশিককে সমন্বয় করে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা/সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। এবং দাখিল মাদ্রাসাগুলো সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে এবং এর অর্থায়ন সরকার করে থাকে।

ইতিহাস সম্পাদনা

বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ তবে এতে মুসলমান জনসংখ্যাধিক্য রয়েছে এবং মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিরাট একটি অংশ ধর্মপ্রাণ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ মাদরাসা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই এদেশে প্রচলিত বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।[১] দেশে সরকারিভাবে স্বীকৃত মাদরাসার সংখ্যা ১৫ হাজারের অধিক, মাদরাসা শিক্ষকের সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। এক সময় কেবল কুরআন ও হাদিস শিক্ষার জন্য প্রচলিত থাকলেও ক্রমান্বয়ে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন চলছে।[২] এজন্য রয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসা বোর্ড।[৩] প্রায়শঃ দাখিল মাদরাসাকে পর্যায়ক্রমে আলিম মাদরাসা উন্নীত করা হয়ে থাকে।

পাঠ্যসূচি সম্পাদনা

দাখিল মাদ্রাসায় বিভিন্ন পর্যায়ে এবং বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষা প্রদান করা হয়। যেমন:

  • দাখিল ৬ষ্ঠ—৮ম
  • দাখিল জেনারেল
  • দাখিল মুজাব্বিদ
  • দাখিল বিজ্ঞান
  • দাখিল হিফযুল কুরআন
  • দাখিল বিজনেস স্টাডিস

সম্প্রতিকালে দাখিল মাদরাসায় ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ে শিক্ষাদানের বিষয়ে অনুমোদন প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। [৪]

পরীক্ষা ব্যবস্থা সম্পাদনা

দাখিল পরীক্ষার পদ্ধতি এস.এস.সি পরীক্ষার মতই। প্রতি বিষয়ে ৩ ঘণ্টার পরীক্ষা দিতে হয় যার পূর্ণমান ১০০ নম্বর। পরীক্ষায় ‘বহুনির্বাচনী’ এবং ‘সৃজনশীল’ উভয়প্রকার প্রশ্ন থাকে। ‘বহুনির্বাচনী’ এবং ‘সৃজনশীল’ পরীক্ষার মধ্যে কোন বিরতি থাকে না। ‘বহুনির্বাচনী’ প্রশ্নের সর্বমোট মান ৩০ নম্বর হলে বরাদ্দ সময়ের পরিমাণ ৩০ মিনিট। অন্যদিকে ‘বহুনির্বাচনী’ প্রশ্নের সর্বমোট মান ২৫ নম্বর হলে বরাদ্দ সময়ের পরিমাণ ৩০ মিনিট।[৫]

মাদ্রাসা বোর্ড সম্পাদনা

দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ এই বোর্ড স্থাপিত হয়। এই বোর্ড কর্তৃক দাখিল পরীক্ষা পরিচালিত হয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ফলাফলের ভিত্তিতে বোর্ড কর্তৃক দাখিল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এই বোর্ডের অনুমতিক্রমে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ইত্যাদি বিভাগ খোলা যায়। বোর্ড-এর কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে দাখিল মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষাপ্রদান কার্যক্রম মূল্যায়ন করেন। বেসরকারি মাদরাসার সরকারের এমপিও ভুক্তির জন্য বোর্ডের সুপারিশ প্রয়োজন হয়।[৬]

সরকারি অনুমোদন সম্পাদনা

সমালোচনা সম্পাদনা

সচরাচর এরকম সমালোচনা রয়েছে যে মাদ্রাসার শিক্ষাক্রম আধুনিক নয় এবং দাখিল পাস করে শিক্ষার্থীরা চাকুরীর বাজারে সুবিধা করতে পারে না। কিংবা দাখিল পাসকারী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত। আরো সমালোচনা রয়েছে যে, মাদরাসার শিক্ষাক্রম দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নে বাধা স্বরূপ।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Welle (www.dw.com), Deutsche। "'আলিয়ার সাথে কওমিকে গুলিয়ে ফেলা ভুল' | DW | 22.01.2021"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৩ 
  2. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মাদ্রাসাশিক্ষার ধারা ও উপধারা"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৩ 
  3. মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর
  4. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা বিষয়ক তথ্য
  5. পরীক্ষাবিষয়ক তথ্যাদি
  6. মাদ্রাসা বোর্ড-এর তথ্যতীর্থ

বহি:সংযোগ সম্পাদনা