হাফেজিয়া মাদ্রাসা

কুরআন মুখস্থ করার জন্য এক প্রকার ইসলামি শিক্ষা পদ্ধতি
(হাফেজীয়া মাদ্রাসা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হাফেজিয়া মাদ্রাসা কুরআন মুখস্থ করার জন্য এক প্রকার ইসলামি শিক্ষা পদ্ধতি, এই শিক্ষা পদ্ধতিতে কুরআন মুখস্থের পাশাপাশি ক্বারীয়ানা তেলওয়াত করা, সহিহভাবে কুরআন তেলওয়াত করার মত শিক্ষা প্রদান করা হয়।[][] স্বাভাবিক জীবনে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলার মত মৌলিক বিষয়াদি এই প্রতিষ্ঠানে প্রদান করা হয়।[] এছাড়া কুরআন মুখস্থের সাথে সাথে, এটাকে কীভাবে আরো সুন্দর মাখরাজতাজবিদের সাথে পড়তে হয় সেটাও সেখানো হয়। উপমহাদেশের প্রচলিত অর্থে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করলে তাকে হাফেজ উপাধি দিয়ে পাগড়ি প্রদান করা হয়।[] সাধারণত হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করলে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য কওমি বা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে থাকে।

ইতিহাস

সম্পাদনা

কুরআন মুখস্থ করার রীতি মুহাম্মাদের সময় থেকেই চালু হয়ে আছে। তখন কিছু সাহাবা নবীর উপর অর্পিত আয়াত সঙ্গে সঙ্গে মুখস্থ করে ফেলতেন, আবার কতক মুখস্থ করার পাশাপাশি লিখে রাখতেন, এভাবেই কুরআন মুখস্থ করার রীতি চালু হয়।

৬১৪ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদের জীবিত থাকা কালেই মক্কার সাফা নামক পাহাড়ের পাদদেশে দারুল আরকাম নামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর হিজরতের পর মুহাম্মাদ নিজেই মদিনায় মসজিদে নববীর উত্তর-পূর্ব দিকের একটি কোণে সুফফা আবাসিক মাদ্রাসা এবং দারুল কুররাহ মাদ্রাসা নামক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৬২২ সালে মদিনায় আরো ৯টি মসজিদ শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হতে শুরু করে। এসব মাদ্রাসা-মসজিদে কুরআন হেফজ করা প্রচলিত ছিলো।

এছাড়াও খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব সিরিয়ায় ও আলী ইবেন তালিব বসরা ও কুফায় বিশাল আয়তনের দুটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতের সময়েও বড় বড় মসজিদগুলো ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। এ সময় মসজিদে শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিলো। এসব মসজিদ-মাদ্রাসার অনন্য কিছুর সাথেও কুরআন মুখস্থ করার রেওয়াজও ছিলো।[] ১২০০ সালের পরে দিল্লী সালতানাত আমলে বাংলায় প্রচুর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়, এসব মাদ্রাসায়ও হেফজ বিভাগ চালু ছিলো।[] বর্তমানে বাংলাদেশের ১২ হাজারেরও বেশি হাফেজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে।[]

শিক্ষা পদ্ধতি

সম্পাদনা

হাজেফিয়া মাদ্রাসা অনেক ক্ষেত্রেই কওমি মাদ্রাসার প্রাক-প্রাথমিক ভার্সন বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।[] এসব মাদ্রাসার অধিকাংশই আবাসিক মাদ্রাসা। স্থানীয় একজন হাফেজ থাকেন শিক্ষার্থীদের তদারকি করার জন্য, তিনিই ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Riaz, Ali (২০০৮)। Faithful Education: Madrassahs in South Asia। Rutgers University Press। পৃষ্ঠা 220। আইএসবিএন 978-0-8135-4345-1 
  2. "মাদ্রাসা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৮ 
  3. Amr Abdalla, Ph.D, A. N. M. Raisuddin, Ph.D and Suleiman Hussein, M.A.। "BANGLADESH EDUCATIONAL ASSESSMENT: Pre-primary and Primary Madrasah Education in Bangladesh" (পিডিএফ)Basic Education and Policy Support (BEPS): 7 page। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২২ 
  4. "বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখায় যে মাদ্রাসা"Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৮ 
  5. "উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার সূচনা ও বিকাশ | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। ২০১৬-১১-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৮ 
  6. "'নিউ নরমাল' যুগে হেফজ শিক্ষা কার্যক্রম"Bangla Tribune। ২০২২-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৮ 
  7. Azad, Abul Kalam। "অনিশ্চিত, পরনির্ভর, স্বীকৃতিবিহীন বঞ্চিত জনপদ কওমি মাদ্রাসার সংস্কার প্রসংগ"Komashisha (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৮