ত্যাও খাম্‌টি ১৩৮০ সাল থেকে ১৩৮৭ সাল পর্যন্ত আহোম রাজ্যর রাজা ছিলেন। তাঁর সিংহারোহণে চুতুফার মৃত্যুর পরে ১৩৭৬ সাল থেকে ১৩৮০ চলতে থাকা অরাজক কালের অন্ত হয়। কিন্তু রাণীর প্রতি থাকা অত্যধিক মোহ এবং সাধারণ জনতার উপরে নিষ্ঠুরতাই তাঁর মৃত্যু ডেকে আনে।

চাওফা ত্যাও খাম্‌টি
চাওফা
আসামের রাজা
রাজত্ব১৩৮০ সাল থেকে ১৩৮৭ সাল পর্যন্ত
পূর্ণ নাম
চাওফা ত্যাও খাম্‌টি
রাজবংশছ্যু ফৈদ , আহোম রাজবংশ
ধর্মআহোম ধর্ম

পূর্বপুরুষ এবং সিংহারোহণ সম্পাদনা

ত্যাও খাম্‌টি আহোম রাজা চুখাংফার তৃতীয় পুত্র। চুখাংফার মৃত্যুর পরে তাঁর দুজন জ্যেষ্ঠ পুত্র চুখ্রাম্‌ফা ১৩৩২ সাল থেকে ১৩৬৪ সাল পর্যন্ত এবং চুতুফা ১৩৬৪ সাল থেকে ১৩৭৬ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ১৩৭৬ সালে চুতুফাকে চুতীয়ারা প্রতারণা করে হত্যা করে। বুঢ়াগোহাঁই এবং বরগোহাঁইকে মাথা করে আহোম প্রধানরা কোনো রাজকুমার সেই সময় রাজসিংহাসনের জন্য উপযুক্ত নয় বলে সিদ্ধান্ত নেয়। চার বছর কাল মন্ত্রীরাই রাজ্য পরিচালনা করে। অবশেষে রাজা ছাড়া রাজ্য চালানো কঠিন দেখে তাঁরা ত্যাও খাম্‌টিকে ১৩৮০ সালে স্বর্গদেউ করে।[১]

রাজত্বকাল সম্পাদনা

রাজপরিবারের ঘটনা সম্পাদনা

ত্যাও খাম্‌টির দুজন পত্নী ছিলেন। ছোটজনের (দ্বিতীয় পত্নী) প্রতি রাজার অনুরাগ বেশি ছিল। সিংহাসনে বসার পরে রাজা চুতুফার হত্যার প্রতিশোধ তুলতে চুতীয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান। নিজে না থাকা সময়পর্বে তিনি বড়রাণীকে রাজ্যভার দিয়ে যান। ছোট রাণীকে রাজা বেশি ভালবাসার জন্য বড় রাণী মনে ব্যথা পেয়েছিলেন। আবার ছোট রাণী সন্তানসম্ভবাও (রাজার প্রথম) ছিলেন। শাসনভারের সুযোগ নিয়ে বড় রাণী ছোট রাণীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনলেন। অভিযোগের অনুসন্ধান করে সত্যি বলে ঘোষণা করা হল। বড়রাণী ছোট রাণীর শিরশ্ছেদ করার আদেশ দিলেন। কিন্তু ছোট রাণী সন্তানসম্ভবা হওয়ার জন্য মন্ত্রীরা বুদ্ধি করে তাঁকে একটি ভেলায় ব্রহ্মপুত্রে ভাসিয়ে দিল। ভেলাটি গিয়ে হাবুং গাঁওয়ে ভিড়ল। একজন ব্রাহ্মণ সেখানে রাণীকে আশ্রয় দিলেন। একটি ছেলে জন্ম দিয়ে মৃত্যুর আগে রাণী ব্রাহ্মণকে ছেলের আসল পরিচয় জানান। ব্রাহ্মণজন ছেলেটিকে নিজের ছেলে-মেয়ের সাথে বড়ো করেন। পরে ১৩৯৭ সালে এই ছেলেটিই চুডাংফা নামে আহোম রাজা হয়।[১][২][৩]

হত্যা সম্পাদনা

যুদ্ধ থেকে এসে প্রিয় পত্নীর শিরশ্ছেদের কাহিনী শুনে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। অন্যদিকে নতুন করে অনুসন্ধানে ছোট রাণী নির্দোষ প্রমাণিত হয়। তথাপি বড়রাণীর প্রভাবে রাজা তাঁর কোনো শাস্তি দেন না। রাণী সাধারণ প্রজার উপরেও নানা অত্যাচার চালিয়েছিলেন। অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে প্রধানরা রাজা এবং রাণীর হত্যা করায়। তাঁদের একেসাথে সরাইদেউতে মৈদাম দেওয়া হয়।[৩][৪][৫]

চরিত্র ও উত্তরাধিকার সম্পাদনা

প্রাচীন আহোম ইতিহাসে ত্যাও খামটির চরিত্র সম্পর্কে তেমন কিছু লেখা নেই, তবে কেউ কেউ দেখতে পান যে তিনি সাহসী ও নির্ভীক ছিলেন, তিনি চুটিয়া রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তবে বড় রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তার অক্ষমতা তার চরিত্রের দুর্বলতাকেও প্রকাশ করে। তাঁর হত্যার ফলে যে বিরতির সৃষ্টি হয় তা ১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী দ্বারা তার পুত্র চুডাংফা সিংহাসনে আরোহণ করলে এই বিরতির শেষ হয়।

পাদটিকা সম্পাদনা

  1. Gait E.A. A History of Assam 1926 2nd edition Thacker, Spink & Co Calcutta page 82
  2. Barua Gunaviram Assam Buranji or A History of Assam Publication Board of Assam Guwahati 4th edition 2008 page 56-57
  3. Barbaruah Hiteswar Ahomar-Din or A History of Assam under the Ahoms 1st edition 1981 page 33
  4. Gait E.A. A History of Assam 1926 2nd edition Thacker, Spink & Co Calcutta page 297
  5. Barua Gunaviram Assam Buranji or A History of Assam Publication Board of Assam Guwahati 4th edition 2008 page 56

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  • বরবরুয়া হিতেশ্বর আহোমর-দিন or A History of Assam under the Ahoms first edition 1981 Publication Board of Assam Guwahati
  • বরুয়া গুণাভিরাম আসাম বুরঞ্জী or A History of Assam fourth edition 2008 Publication Board of Assam Guwahati
  • Gait E.A. A History of Assam second edition 1926 Thacker, Spink & Co Calcutta