তাহারুশ
তাহরুশ একটি আরবি শব্দ । যার অর্থ মানে নিপীড়ন। খেলার ছলে প্রকাশ্যে লোকের সামনে গণধর্ষণের রীতিকে "তাহরুশ জামাই" বলা হয়।[১] আধুনিক সময়ে এই ধরনের অপরাধ প্রথম মিশরে ২০০৫ সালে লিপিবদ্ধ হয়। যখন ২৫ মে কায়রোর তাহরির স্কয়ারে একটি রাজনৈতিক বিক্ষোভ চলাকালীন মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং তাদের এজেন্টরা এটিকে নারী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।[২] এটি খুব ছড়িয়ে পড়ে এবং ২০১২ সালের মধ্যে মিশরের বিক্ষোভ ও উৎসবে তরুণদের ভিড়ে এই তাহারুশ করতে দেখা যায়।[৩] আরব দেশগুলিতে এই বর্বর সংস্কৃতি দেখা যায়। রাস্তাঘাটে বা জনবহুল স্থানে এটি ঘটে থাকে। এটি ঘটতে দেখেও কেউ এর প্রতিবাদ করে না। কারণ পুরুষতান্ত্রিক আরবে তাহারুশকে যুবসমাজের হইহুল্লোড়ের অংশ মনে করা হয়।
পটভূমি
সম্পাদনাতাহারুশের উৎপত্তি হয়েছিল মিশরে । আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত হলেও মিশরের সাথে আরবের বেশি রয়েছে। মিশর থেকে তাহারুশ বিভিন্ন আরবীয় দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এটি আরবীয় যুবকদের সংসস্কৃতিতে ঢুকে পরে। ১০০০ এরও বেশি মহিলা এতে শারীরিক নির্যাতন, শারীরিক হেনস্থা এবং ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে। [৪]
মিসরে ২০০৬ সালের আগে তাহারুশ খুব কমই আলোচিত হয়েছিল। ২০০৫ সালের ২৫ মে মিশরের সাংবিধানিক গণভোটের সময় গণকেন্দ্রিক নির্যাতনে তাহারুশ প্রথম নথিভুক্ত করা হয়। এই দিনটি "কালো বুধবার" নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। যখন নারী বিক্ষোভকারীরা তাহারুশের শিকার হয় বাসে আসা একদল উস্কানিমূলক এজেন্ট পুরুষদের দল দ্বারা। পুলিশ যা দেখে কিন্তু কোন হস্তক্ষেপ করে নি।[৫][৬][৭]
২০০৬ সালে ইদ-উল-ফিতরের ছুটির পর বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে। যখন ২৪ অক্টোবর কায়রোর একটি সিনেমায় প্রবেশ নিষিদ্ধ যুবকদের একটি ভিড় তালাত হার্ব রাস্তায় মহিলাদের উপর পাঁচ ঘণ্টা তাহরুশ জামাই চালায়।[৮]পুলিশ এটা বন্ধ করার জন্য কিছুই করেনি । [৯]
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিশরের বাইরে মানুষ এর ব্যাপারে জানতে পারে যখন ১৫ ফেব্রুয়ারি আমেরিকান নেটওয়ার্ক সিবিএস -এর প্রতিবেদক লারা লোগান কায়রোর তাহরির স্কোয়্যারে হোসনী মুবারকের পতন উদযাপনের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণকালে শত শত পুরুষের দ্বারা প্রহার ও তাহারুশের শিকার হন। তারা লারার ছবি সেলফোনে তোলে[১০]।
আন্দোলনের সময় ২২ বছর বয়সী একজন নারী ডাচ সাংবাদিক তাহরির স্কোয়্যারে ৫ জন আন্দোলনকারীর দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন[১১]।
২০১৩ সালের ৩ জুলাই জানা যায় যে তাহরির স্কোয়্যারে ৪ দিনে ৯১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন[১২]।
মিশরীয় সালাফি নেতা আহমদ মাহমুদ আব্দুল্লাহ এ বিষয়ে বলে যে, তাহরির স্কোয়্যারে আন্দোলনকারী নারীদের কোনো লজ্জা নেই এবং তারা ধর্ষিত হতে ইচ্ছুক[১৩]।
২০১১ সালের বিপ্লবের পর দেশটিতে যৌন হয়রানির হার বেড়ে গেছে[১৪]।
২০১২ সালের মধ্যে এই ধরনের হামলা মিশরে ধর্মীয় উৎসবের একটি "বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য" হয়ে উঠে।[১৫]
বর্ণনা
সম্পাদনাতাহারুশে রাস্তাঘাটে কোনো সুন্দরী তরুণীকে বাছাই করে হঠাৎ কয়েক জন যুবক তাকে ঘিরে ধরে । তাহারুশের আয়োজন দেখে পথের অনেক পুরুষ এতে যোগ দেয় । তারপর সেই তরুণীর উপর সবাই প্রকাশ্যে যৌন নির্যাতন করতে থাকে । মেয়েটির জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে তার শরীর নিয়ে ধর্ষকরা খেলা শুরু করে । এতে তরুণীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। যা আসলে অভিনয় ও তাহারুশের একটি অংশ। বাকি ধর্ষকরা রক্ষাকারীদের সরিয়ে দিয়ে তরুণীর শ্লীলতাহানি করে। রক্ষাকারীরা মেয়েটিকে বাঁচানোর অজুহাতে স্পর্শ করে।[১৬]
ইউরোপে
সম্পাদনাসিরিয়া ও বিভিন্ন আরবীয় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের শরণার্থীদের সাথে ইউরোপে ঢুকে পড়ে এই খেলাটি। কিছু আরবীয় যুবক জার্মানির বার্লিন, হামবুর্গ, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, ডুসেলডর্ফ, সুস্টগার্ট ও বিভিন্ন শহরে তাহারুশ ঘটায়। এছাড়া অস্ট্রিয়া এবং সুইৎজারল্যান্ডেও তাহারুশ ঘটেছে ।[১৭]
ভারতে
সম্পাদনাভারতের হায়দ্রাবাদে তাহারুশের একটি ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। যা ২০১৯-এর হায়দরাবাদ গণধর্ষণ ও হত্যা বলে পরিচিত। এতে মহিলা পশুচিকিৎসক ড প্রিয়াঙ্কা রেড্ডিকে শামশাবাদ অঞ্চলে নির্মমভাবে গণধর্ষণ করে ও হত্যা করে চালক মহম্মদ আরিফ, জোল্লু শিবা, জোল্লু নবীন ও চিন্নাকেশাভুলুকে গ্রেপ্তার করে এবং সন্দেহভাজন ব্যাক্তিরা ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে।[১৮][১৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "যেখানে প্রকাশ্যে ধর্ষণ একটা সামাজিক প্রথা!"। Zee24Ghanta.com। ২০১৬-০৬-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫।
- ↑ Magda Adly, "Sexual Assault and Rape in Tahrir Square and its Vicinity: A Compendium of Sources 2011–2013", El-Nadeem Center for Rehabilitation of Victims of Violence and Torture, with the Nazra for Feminist Studies, and the New Woman Foundation, February 2013.
- ↑ Emily Dugan, "Revealed: Egypt is the worst Arab country for women", The Independent, 11 November 2013.
- ↑ সংস্থা, সংবাদ। "আরব থেকে ভয়ঙ্কর ধর্ষণ-খেলা 'তাহারুশ' ঢুকে পড়েছে ইউরোপে!"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫।
- ↑ Slackman, Michael (10 June 2005). "Assault on Women at Protest Stirs Anger, Not Fear, in Egypt", The New York Times.
- ↑ Kirollos, Mariam (১৬ জুলাই ২০১৩)। "Sexual Violence in Egypt: Myths and Realities"। Jadaliyya। Arab Studies Institute।
- ↑ Paul Amar, "Turning the Gendered Politics of the Security State Inside Out" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, International Feminist Journal of Politics, 13(3), 2011, 13:3, pp. 299–328. ডিওআই:10.1080/14616742.2011.587364
- ↑ Sherifa Zuhur, "Women's Quest for Equality in Post-Revolutionary Egypt," in Claudia Derichs, Dana Fennert (eds.), Women's Movements and Countermovements, Cambridge Scholars Publishing, 2014, p. 36.Magdi Abdelhadi, "Cairo street crowds target women", BBC News, 1 November 2006. Mona el Naggar, Michael Slackman, "Silence and Fury in Cairo After Sexual Attacks on Women", The New York Times, 15 November 2006.
- ↑ Rizzo, Helen; Price, Anne M.; Meyer, Katherine (2008). "Targeting Cultural Change in Repressive Environments: The Campaign against Sexual Harassment in Egypt" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে, The Egyptian Center for Women's Rights.
- ↑ "Lara Logan Assaulted During Egypt Protests"। CBS News। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;NY post
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "NINETY-ONE women protesters raped and sexually abused in Tahrir Square in just four days"। Daily Mail। ৩ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-১২।
- ↑ "Gang rape, the dark side of Egypt's protests"। CNN। ৩ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-১৩।
- ↑ "Women in Egypt suffer more sexual violence under Islamist rule"। Alarabiya। ২ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-১৩।
- ↑ Kassab, Bisan; Mamdouh; Rana (20 September 2012). "The Widespread Plague of Sexual Harassment in Egypt", Al Akhbar.
- ↑ সংস্থা, সংবাদ। "আরব থেকে ভয়ঙ্কর ধর্ষণ-খেলা 'তাহারুশ' ঢুকে পড়েছে ইউরোপে!"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫।
- ↑ "ইউরোপে ছড়াচ্ছে আরবের ভয়ংকর 'ধর্ষণ-খেলা' তাহারুশ"। NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০১-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫।
- ↑ Singh, Shivam (২০১৯-১২-০৬)। "Taharrush Gemia - Islamic game of gang rape" (ইংরেজি ভাষায়)। Archived from the original on ২০১৯-১২-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫।
- ↑ amartya.lahiri। "চরম পরিণতি হায়দরাবাদ গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযুক্তদের, পুলিশি এনকাউন্টারে নিহত ৪"। Asianet News Network Pvt Ltd। ২০২১-০৯-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৫।