তাজিকিস্তানে পারিবারিক সহিংসতা

তাজিকিস্তানে পারিবারিক সহিংসতা অনেক বেশি, এর কারণ ঐতিহ্যগত তাজিক মুসলিমদের পারিবারিক মূল্যবোধ,[১][২][৩] এর পাশাপাশি এই বিষয়গুলিকে "ব্যক্তিগত পারিবারিক বিষয়" হিসেবে দেখে তাজিকিস্তান কর্তৃপক্ষের তাতে হস্তক্ষেপ করতে অনীহা।[৪]

বিস্তৃতি সম্পাদনা

প্রায় অর্ধেক তাজিক মহিলা তাঁদের স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির দ্বারা শারীরিক, মানসিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এক মহিলা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তাঁর বিয়ের পর পাঁচ বছর ধরে তাঁকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি, অন্য একজন মহিলা বিবৃতি দিয়েছিলেন যে তাঁকে তাঁর প্রেমিক ধর্ষণ করেছে, কাউকে ঘটনাটা জানালে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে এবং চার মাস ধরে তাঁকে যৌনতায় বাধ্য করেছিল।[৫] আইন করে এখানে ধর্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ধর্ষণ প্রমানিত হলে ২০ বছর কারাদণ্ডের শাস্তি হতে পারে। কিন্তু বৈবাহিক সম্বন্ধে, স্বামী -স্ত্রীর ধর্ষণের জন্য আলাদা কোন আইন নেই।[৬]

অনেক নারী বিবাহের পর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির দ্বারা কঠোর আচরণের শিকার হন। বেশিরভাগ তাজিক মহিলাকে বিবাহের জন্য তাড়াতাড়ি বিদ্যালয় ছেড়ে দিতে হয়, তাঁদের পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাব থাকে, এবং সেই কারণে প্রায়শই তাঁদের সর্বনিম্ন বেতনের চাকরিতে ঠেলে দেওয়া হয়, যা অর্থনৈতিকভাবে তাঁদের স্বামীর উপর নির্ভরশীল করে তোলে।

২০১৩ সালে, তাজিকিস্তান গার্হস্থ্য সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছিল, এটি গার্হস্থ্য সহিংসতার বিরুদ্ধে তাদের প্রথম আইন।[৭]

তাজিক সামাজিক মনোভাব সম্পাদনা

গার্হস্থ্য সহিংসতাকে প্রায়ই সমাজ ন্যায্য হিসেবে দেখে: ইউনিসেফের একটি জরিপে দেখা গেছে যে, তাজিকিস্তানে স্ত্রীকে মারধর সমর্থন করে- ৬২.৪% নারী, যদি স্ত্রী স্বামীকে না জানিয়ে বাইরে যায়; ৬৮% নারী, যদি সে তার সাথে তর্ক করে; ৪৭.৯% যদি সে তার সাথে যৌন সম্পর্ক করতে অস্বীকার করে।[৮] আরও একটি জরিপে দেখা গেছে যে নারী এবং পুরুষরা মূলত সম্মত হয় যে একজন স্বামী বা শাশুড়ির জন্য এমন স্ত্রী/পুত্রবধূকে মারধর করা যুক্তিযুক্ত, যে "মুখে মুখে জবাব দেয়", অবাধ্যতা করে, অনুমতি ছাড়াই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, সময়মতো খাবার তৈরি করেনা, বা শিশুদের জন্য সঠিকভাবে যত্ন নেয়না।[৯]

পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ প্রায়ই হস্তক্ষেপ করতে চায় না। কর্তৃপক্ষের বাস্তবিক নীতি হচ্ছে মিটমাট করে নেওয়াকে প্রচার করা। প্রায়ই লাঞ্ছনার জন্য পুলিশ মহিলাদের নিজেদেরই দায়ী করে, এবং কখনও কখনও লাঞ্ছনার অভিযোগ করার চেষ্টা করা মহিলাদের অপমান করে। যেসব মহিলারা পুলিশে অপব্যবহারের অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করেন তাঁদের প্রায়ই অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়, অথবা ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পারিবারিক সহিংসতার মামলা সামলানোর জন্য বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং চিকিৎসা কর্মীরা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত নয়। অবমাননাকর স্বামীদের খুব কমই গ্রেপ্তার বা বিচার করা হয়।[৫]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  2. (পিডিএফ) http://www.theadvocatesforhumanrights.org/uploads/tajikistan_3_6_07_layout_-_final_mc.pdf  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  3. http://www.abc.net.au/news/2017-04-24/confronting-domestic-violence-in-islam/8458116  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  4. "Amnesty: Nearly half of Tajik women 'regularly abused'"BBC News। ২০০৯-১১-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-০২ 
  5. "Document | Amnesty International"Amnesty.org। ২০০৯-১১-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-০২ 
  6. "Country Reports on Human Rights Practices for 2014"State.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-০২ 
  7. "Archived copy" (পিডিএফ)। ডিসেম্বর ৮, ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৭, ২০১৫ 
  8. "Tajikistan : Monitoring the situation of children and women" (পিডিএফ)Childinfo.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-০২ 
  9. "DOMESTIC VIOLENCE IN TAJIKISTAN" (পিডিএফ)Stopvaw.org। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-০২ 

টেমপ্লেট:Domestic violence