জীববিজ্ঞানে মেন্ডেলীয় বংশগতি অনুসারে, টেস্ট ক্রস (ইংরেজি: Test cross) হল একটি সংকরায়ন পদ্ধতি যার সাহায্যে একই ফিনোটাইপ বিশিষ্ট জীবের আলাদা জিনোটাইপ যুক্ত হওয়ার অবস্থাকে প্রদর্শনে সাহায্য করে।[১]

টেস্ট ক্রসে সংকর অপত্যের সঙ্গে হোমোজাইগাস প্রকৃতির প্রচ্ছন্ন গুণাবলীর একজন জনিতৃ জনুর জীবের সংকরায়ন করা হয়।

সাধারণত, কোনো জীবের জিনোটাইপ সংক্রান্ত সমস্যাকে দূর করতে এই টেস্ট ক্রস পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

ইতিহাস

সম্পাদনা

গ্রেগর জোহান মেন্ডেল কর্তৃক করা উদ্ভিদ সংকরায়ন পরীক্ষার সময় মেন্ডেল নিজে টেস্ট ক্রসের প্রয়োগ ঘটান। তিনি প্রকটতা সম্পর্কিত পরীক্ষা করার সময়, সংকর উদ্ভিদের জিনোটাইপ নির্ধারিত করতে টেস্ট ক্রস করেন।[২]

১৯০০-এর দশকের গোড়ার দিকে মেন্ডেলের কাজের পুনঃআবিষ্কারের ফলে টেস্ট ক্রসের নীতিগুলিকে কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিস্ফোরণ ঘটে। ১৯০৮-১১ সাল থেকে, থমাস হান্ট মরগান ড্রোসোফিলায় একটি সাদা চোখের রঙের মিউটেশনের উত্তরাধিকার প্যাটার্ন নির্ধারণ করার সময় টেস্ট ক্রস পরিচালনা করেছিলেন। এই টেস্ট ক্রস এক্সপেরিমেন্টগুলি লিঙ্গ-সংযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির আবিষ্কারের ক্ষেত্রে হলমার্ক হয়ে উঠেছে।[৩]

পরীক্ষা

সম্পাদনা

একসংকর জনন পদ্ধতি

সম্পাদনা

জনিতৃ জনুর সংকরায়ন ঘটানোর পর ১ম অপত্য জনুতে সবকটি জীব ই সংকর সৃষ্টি হয়। সেই ১ম অপত্য জনুর দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো হলে, ২য় অপত্য জনুতে সংকর অপত্য (হেটেরোজাইগাস) ও হোমোজাইগাস প্রকৃতির প্রকট বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবের জিনোটাইপ আলাদা হলেও ফিনোটাইপ একই হয়। তাই তাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে টেস্ট ক্রসের প্রয়োগ ঘটানো হয়।

 
মটরের ফলের রঙের সাহায্যে টেস্ট ক্রস
প্রথম ক্ষেত্রে হলুদ ৫০%, সবুজ ৫০%
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হলুদ ১০০%, সবুজ ০%

ধরা যাক, মটরের ফলের হলুদ রঙের জন্য দায়ী জিনের প্রকট অ্যালিল Y ও প্রচ্ছন্ন অ্যালিল y (সবুজ রঙ)।

এখন চিত্রে, Yy হল হেটেরোজাইগাস এবং YY হল হোমোজাইগাস, কিন্তু উভয়ই হলুদ রঙ প্রদর্শন করে প্রকটতার জন্য। তাই পৃথকীকরণের জন্য yy জিনোটাইপ সম্পন্ন জীবের সাথে সংকরায়ন ঘটানো হলে অনুপাতের পার্থক্য তৈরী হয়। ফলে সহজেই নির্ধারণ সম্ভব।

দ্বিসংকর জনন পদ্ধতি

সম্পাদনা

একসংকরের মতোই দ্বিসংকরেও একই রকম ভাবে টেস্ট ক্রস সম্পন্ন করা যায়, তবে সেক্ষেত্রে অনুপাত আসে ১:১:১:১।

সীমাবদ্ধতা

সম্পাদনা
  • সময়সাপেক্ষ হতে পারে।[৪]
  • পরিসংখ্যানগত ত্রুটি এড়ানোর জন্য বহুসংখ্যক অপত্যের চাহিদা।[৫]
  • পূর্ণ প্রকটতা ব্যতীত এই পরীক্ষার ফলাফল মেলেনা। (যেমন এপিস্ট্যাসিস)।[৬]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Gai, J.; He, J. (২০১৩), "Test Cross", Brenner's Encyclopedia of Genetics, Elsevier, পৃষ্ঠা 49–50, আইএসবিএন 978-0-08-096156-9, ডিওআই:10.1016/b978-0-12-374984-0.01529-1, সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৫ 
  2. Mendel, Gregor; Bateson, William (১৯২৫)। Experiments in plant-hybridisation। Cambridge, Mass.: Harvard University Press। পৃষ্ঠা 323–325। 
  3. "Thomas Hunt Morgan and the Discovery of Sex Linkage | Learn Science at Scitable"www.nature.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৫ 
  4. Orias, Eduardo (২০১২)। "Chapter 10 - Tetrahymena thermophila Genetics: Concepts and Applications"। Methods in Cell Biology109। Elsevier। পৃষ্ঠা 301–325। আইএসবিএন 978-0-12-385967-9ডিওআই:10.1016/B978-0-12-385967-9.00010-4পিএমআইডি 22444149 
  5. Lobo, I। "Genetics and Statistical Analysis | Learn Science at Scitable"www.nature.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৫ 
  6. "Epistasis"www.genome.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫