টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশের সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধিভূক্ত একটি স্নাতক পর্যায়ের সরকারি প্রকৌশল কলেজ। ২০১৪ সাল থেকে কলেজটি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে তার শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।[] কলেজটিতে ৪ টি বিভাগে ১২০ টি আসন রয়েছে। বর্তমানে অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম
অন্যান্য নাম
সিটেক
প্রাক্তন নাম
-পেরি প্যাটেটিক বুনন স্কুল (১৯১১-১৯৮০)
-চট্টগ্রাম বিভাগীয় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট (১৯৮০-২০০৬)
-টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম (২০০৬-বর্তমান)
ধরনসরকারি প্রকৌশল কলেজ
স্থাপিত১৯১১ (কলেজে রূপান্তর: ২০০৬)
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যক্ষমোঃ ছোলাইমান
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ
২৮
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ
১২
শিক্ষার্থী৪৮০+
স্নাতক৪৮০+
অবস্থান
জোরারগঞ্জ, মিরসরাই, চট্টগ্রাম
,
শিক্ষাঙ্গন১৮ একর (৭.৩ হেক্টর)
ওয়েবসাইটctec.chittagong.gov.bd
মানচিত্র

ইতিহাস

সম্পাদনা

চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি জোরাগঞ্জ বাজারের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারী পুরাতন ঢাকা ট্র্যাঙ্ক রোড এর পাশে অবস্থিত। এটি প্রথমে ১৯১১ সালে পেরি প্যাটেটিক বুনন স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যা ব্রিটিশ রাজত্বকালে স্বদেশী আন্দোলনের ফসল ছিল। একে তারপর ১৯৬০ সালে দেওয়ানপুরের নিকটে অবস্থিত মহুরী প্রোজেক্ট রোডে স্থানান্তরিত করা হয়।

১৯৮০ সালে পেরি প্যাটেটিক বুনন স্কুলে টেক্সটাইল প্রযুক্তিতে ২ বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা হয়। তখন একে চট্টগ্রাম বিভাগীয় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট বলা হত। সময়ের চাহিদা মেটানোর তাগিদে ১৯৯৩ সালে এই ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়। ২০০১ সাল থেকে একে চার বছর মেয়াদী করা হয়।

টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের উচ্চ চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০০৬-২০০৭ সেশনে টেক্সটাইল ডিপ্লোমা কোর্স বাতিল করে সরকার একে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর আওতায় নিয়ে স্নাতক পর্যায়ে টেক্সটাইল প্রকৌশলে চার বছর মেয়াদী বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করে। ১ম ব্যাচ থেকে ৬ষ্ঠ ব্যাচ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল।[]

৭ম ব্যাচ (২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ) থেকে কলেজটি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে তার শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।[]

প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গন

সম্পাদনা

আবাসিক সুবিধা ও হল

সম্পাদনা

চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নতমানের আবাসিক সুবিধা রয়েছে। কলেজ সংলগ্ন মেস ছাড়াও, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে।[][]

হোস্টেল ব্যবস্থা:
সম্পাদনা

বর্তমানে বি.এসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল চালু রয়েছে।[]

বর্তমানে এই কলেজটিতে ছেলেদের জন্য ৬০ সীটের একটি হল রয়েছে। ১৮০ জন ছাত্রের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন একটি ভবন জুন ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছে।

হোস্টেলগুলোতে সুবিধাসম্পন্ন কক্ষ, বিদ্যুৎ, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ২৪/৭ সিকিউরিটি ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক তদারকি রয়েছে।ক্যাম্পাসে উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুতগতিতে চলছে, যার মধ্যে আবাসন ব্যবস্থার আরও সম্প্রসারণ অন্তর্ভুক্ত।শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য হোস্টেলগুলোতে বিনোদন কক্ষ,নামাজ কক্ষ ও সাধারণ অধ্যয়ন কক্ষ রয়েছে, যা তাদের শিক্ষা ও ক্যাম্পাস জীবনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষা কার্যক্রম

সম্পাদনা

এই কলেজটি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছর মেয়াদী বি.এসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং[] কোর্স পরিচালনা করে। বর্তমানে নিম্নলিখিত বিভাগসমূহে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়:

  1. ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং (Yarn Engineering)
  2. ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Fabric Engineering)
  3. ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (Wet Process Engineering)
  4. অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং (Apparel Engineering)

কোর্সের মেয়াদ ও কাঠামো:

সম্পাদনা

কোর্সের মেয়াদ: ৪ বছর।প্রতিটি বছর লেভেল হিসেবে গণ্য।প্রতিটি লেভেল ২টি টার্মে বিভক্ত।মোট টার্ম ৮ টি।প্রতি টার্মে নির্দিষ্ট সংখ্যক তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক কোর্স অন্তর্ভুক্ত থাকে।এই কোর্সগুলো টেক্সটাইল শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোর্সের ভাষা: ইংরেজি

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম এর আসন সংখ্যা
বিভাগের নাম শিক্ষার্থী সংখ্যা
১.ওয়েট প্রোসেস ইঞ্জিনিয়ারিং ৩০ জন
২.অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ৩০ জন
৩.ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ৩০ জন
৪.ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ৩০ জন

শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন

সম্পাদনা

শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক। কোন ছাত্র ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিত না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত ফলপ্রসূ পাঠদান, পড়া আদায় এবং নিয়মিত শ্রেণীকুইজ পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারাই এই কলেজের মূল লক্ষ্য। ছাত্র ছাত্রী শিক্ষাবোর্ডের বিধি মোতাবেক শ্রেণী কার্যক্রমে শতকরা ৮০ ভাগের বেশি উপস্থিত না হলে তাকে ডিসকলেজিয়েট ঘোষণা করা হয় এবং পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া হয়।আদর্শ পাঠদানে ব্যবহার করা হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম।বর্তমান অধ্যক্ষ দক্ষতার সাথে কলেজটি পরিচালনা করছেন

প্রতি পর্ব এবং বর্ষোন্নয়ন পরীক্ষাতে ৪০ শতাংশ নম্বর পেলে ছাত্রছাত্রীরা পরবর্তী পর্বে বা বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারে। সকল পর্বে শ্রেণিকুইজ এবং বোর্ড নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তী পর্বে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়।

শিক্ষার্থী

সম্পাদনা

অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম

সম্পাদনা

পাঠ্য বিষয়ের ক্ষেত্রে বোর্ড এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের মতামত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। এক্ষেত্রে সকলের মেধার যোগ্যতাকেই বিবেচনা করা হয়।কলেজটিতে বর্তমানে এখানে ৫ টি ব্যাচ(১৪তম,১৫তম,১৬তম,১৭তম ও ১৮তম)অধ্যয়নরত রয়েছে এবং ১৩টি ব্যাচ(১ম,২য়,৩য়,৪র্থ,৫ম,৬ষ্ঠ,৭ম,৮ম,৯ম,১০ম,১১তম,১২তম,১৩তম) তাদের অধ্যয়ন সম্পন্ন করেছে।কলেজটিতে মোট ব্যাচ সংখ্যা ১৮।[]

ওয়ার্কশপ ও ল্যাবরেটরি

সম্পাদনা

বর্তমানে কলেজটি ৪ (চার) বিভাগ চালু রয়েছে যেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে ১২টি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

ল্যাব পরিচিতি:

  1. ইয়ার্ন ম্যানুফেকচারিং ল্যাব  (কটন স্পিনিং)
  2. ইয়ার্ন ম্যানুফেকচারিং ল্যাব  (জুট স্পিনিং)
  3. ফেব্রিক ম্যানুফেকচারিং ল্যাব  (উইভিং)
  4. ফেব্রিক ম্যানুফেকচারিং ল্যাব  (নিটিং)
  5. ওয়েট প্রসিসিং ল্যাব
  6. এ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং ল্যাব (গার্মেন্টস)
  7. এ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং ল্যাব (ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন)
  8. ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং ল্যাব (ওয়ার্কশপ)
  9. কম্পিউটার ল্যাব
  10. টেষ্টিং ল্যাব
  11. ফিজিক্স ল্যাব
  12. কেমিষ্ট্রি ল্যাব

ক্যাম্পাসটিতে আরও রয়েছে সুবিশাল একটি লাইব্রেরি ।এখানে স্থান পেয়েছে দেশি ও বিদেশী সহস্রাধিক টেক্সটাইল ও সাহিত্য বিষয়ক বই। রয়েছে ধর্মীয়, সায়েন্স ফিকশন ও অন্যান্য জ্ঞান মূলক বই। লাইব্রেরী কার্ড জমাদান সাপেক্ষে যে কেউ প্রয়োজনীয় বই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইস্যু করে নিতে পারে। লাইব্রেরিতে দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকার ব্যবস্থা রয়েছে। লাইব্রেরিতে পৃথক পৃথক টেবিলে বসে পুস্তক এবং পত্র পত্রিকা পাঠ করা যায়।

ক্যাম্পাস জীবন

সম্পাদনা

ক্যাম্পাসে একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনতা ও সামাজিক সহয়তামূলক সংগঠন রয়েছে ।

→সংগঠনগুলো হলোঃ

  1. অনিবার্ন (আর্ত-মানবতার সেবায় নিয়োজিত একটি অরাজনৈতিক  সংগঠন যা শিক্ষার্থীদের এবং ক্যাম্পাস থেকে অনুদানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। এই সংগঠনটি বিনামূল্যে রক্তদান,শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা কর্মসূচী পালন করে থাকে।)
  2. ঘাসফড়িং
  3. ঐকতান (কালচারাল ক্লাব)
  4. সিটেক ক্যারিয়ার ক্লাব
  5. সিটেক ডিবেটিং ক্লাব
  6. সিটেক ইংলিশ ক্লাব
  7. সিটেক স্পোর্টস ক্লাব

সিটেকে আপনি অনেক কিছু পাবেন আবার কিছু কিছু না ও পেতে পারেন।হ্যাঁ আপনি যদি রাজনীতি প্রেমী হন ,তাহলে আপনি সত্যি সত্যিই এর অভাব অনুভব করবেন।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Affiliated Colleges of Bangladesh University of Textiles - BUTEX"www.butex.edu.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৫-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৬ 
  2. "টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জোরারগঞ্জ, চট্টগ্রাম"ctec.chittagong.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৬ 
  3. "বস্ত্র অধিদপ্তর-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার"dot.portal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৬ 
  4. "The Daily Ittefaq | দৈনিক ইত্তেফাক | ittefaq.com.bd"The Daily Ittefaq। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৬ 
  5. "Jagonews24: News, Sports, Entertainment, Opinion & More"www.jagonews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৫-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৬ 
  6. "CHITTAGONG"file-chittagong.portal.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৬ 
  7. "বস্ত্র অধিদপ্তর-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার"dot.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৫-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৬ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা