জুলিয়াস শ্রেক (১৩ জুলাই ১৮৯৮ – ১৬ মে ১৯৩৬) একজন প্রবীণ নাৎসি কর্মকর্তা এবং আডলফ হিটলার ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন।

জুলিয়াস শ্রেক
প্রতিকৃতি ১৯৩৬
১তম রাইচফুর্টার-এসএস
কাজের মেয়াদ
৪ এপ্রিল ১৯২৫ – ১৫ এপ্রিল ১৯২৬
নেতাএডলফ হিটলার
পূর্বসূরীঅফিস প্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীজোসেফ বার্চটোল্ড
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৩ জুলাই ১৮৯৮
মিউনিখ, বাভারিয়ার রাজ্য, জার্মান সাম্রাজ্য
মৃত্যু১৬ মে ১৯৩৬(1936-05-16) (বয়স ৩৭)
মিউনিখ, বাভারিয়া, জার্মানি
রাজনৈতিক দলনাৎসি পার্টি
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য জার্মান সাম্রাজ্য
শাখা জার্মানি সেনাবাহিনী
যুদ্ধপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ

তিনি মিউনিখে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রেক প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অংশ নিয়েছিলেন অতঃপর জার্মানির ডানপন্থী আধাসামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯২০ সালে নাৎসি পার্টি যোগ দেন ও আডলফ হিটলার সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। শ্রেক নাৎসি পার্টির মূল আধা-সামরিক দলস্টারম্যাবটেলুং (জার্মান: Sturmabteilung)-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ও এটির উন্নয়নে সক্রিয় ছিলেন। তিনি পরে ১৯২৫ সালে নাৎসি পার্টির প্রধান আধাসামরিক সংস্থা শুটজস্টাফেলের প্রথম নেতা হন। এরপর তিনি হিটলারের গাড়ির ব্যক্তিগত চালক হিসেবে কিছু সময়ের জন্য কাজ করেন। শ্রেকের ১৯৩৬ সালে মেনিনজাইটিস হয় এবং তিনি সেই বছরের ১৬ মে মৃত্যু বরণ করেন। হিটলার তার শেষকৃত্যে অনুষ্ঠাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছিলেন।

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

জুলিয়াস শ্রেক ১৮৯৮ সালের ১৩ জুলাই বাভারিয়ার মিউনিখ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সময় জার্মান সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শ্রেক ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির (নাৎসি পার্টি-এনএসডিএপি) প্রাথমিক সদস্য হন। যিনি ১৯২০ সালে যোগদান করেন এবং সদস্য হিসাবে নথিভুক্ত হন। যোগদানের প্রাথমিক বছরগুলোতে দলের নেতা আডলফ হিটলার সাথে বন্ধুত্ব তার গড়ে ওঠে।[১]

স্টারম্যাবটেলুং-এ কর্মজীবন সম্পাদনা

শ্রেক স্টারম্যাবটেলুং-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং এটির সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে জড়িত ছিলেন।[২] এটি ছিল দলের একটি আধা-সামরিক শাখা যা রাজনৈতিক বিরোধীদের কর্মকান্ডে বিপর্যস্ত করতে ও নিরাপত্তাr জন্য শক্তি সরবরাহের জন্য গঠিত হয়েছিল। হিটলার ১৯২৩ সালের গোড়ার দিকে এসএ-এর মতো দলের অনিয়ন্ত্রিত আধাসামরিক দলের পরিবর্তে তাকে সেবা ও সুরক্ষার জন্য নিবেদিত একট পৃথক দেহরক্ষী দলগঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৩] মূলতস্ট্যাবসওয়াচ নামে নবগঠিত দেহরক্ষী দলে মাত্র আটজন পুরুষ ছিল; যার নেতৃত্বে ছিলেন শ্রেক এবং জোসেফ বার্চটোল্ড[৪][৫] স্ট্যাবসওয়াচদের অনন্য ব্যাজ জারি কস্ট্যাবসওয়াচস্ট্যাবসওয়াচ তখনও এসএ-এর সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণে ছিল যার সদস্যপদ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। শ্রেক ইউনিটের প্রতীক চিহ্ন হিসাবে টোটেনকোফ (মৃত্যুর মাথা) ব্যবহারকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন এটি একটি প্রতীক যা অতীতে বিভিন্ন অভিজাত বাহিনী ব্যবহার করেছিল যার মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইম্পেরিয়াল জার্মানি বিশেষ আক্রমণকারী সৈন্যরা হুটিয়ার অনুপ্রবেশ কৌশল ব্যবহার করেছিল।[৬]

১৯২৩ সালের মে মাসে, ইউনিটটির নতুন নামকরণ করা হয় স্টোস্ট্রুপ-হিটলার ("শক ট্রুপ-হিটলার")।[৪] [৬] ইউনিটটি হিটলারের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী ছিল। [২] ১৯২৩ সালের ৯ নভেম্বর এসএ এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি আধা-সামরিক ইউনিটের সাথে স্টোসট্রাপ মিউনিখ বিয়ার হল পুটশে অংশ নেয়।[২] পরিকল্পনাটি ছিল একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শহরের নিয়ন্ত্রণ দখল করা এবং তারপরে বার্লিনে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা। পুটস্ক দ্রুত স্থানীয় পুলিশ দ্বারা চূর্ণ করা হয়. ব্যর্থতার পর হিটলার, শ্রেক এবং অন্যান্য নাৎসি নেতা উভয়কেই ল্যান্ডসবার্গ কারাগারে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে বন্দী করা হয়েছিল।[২] নাৎসি পার্টি এবং স্টোস্ট্রুপ সহ সমস্ত সংশ্লিষ্ট গঠন আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।[৭]

এসএস-এ কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর হিটলারের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নাৎসি পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯২৫ সালে হিটলার শ্রেককে একটি নতুন দেহরক্ষী ইউনিটশুটজকোমান্ডো (সুরক্ষা কমান্ড) গঠনের নির্দেশ দেন।[৮] হিটলার শ্রেকের মতো কঠোর প্রাক্তন সৈন্যদের একটি ছোট দল চেয়েছিলেনবযারা তাঁর প্রতি অনুগত থাকবে। এই ইউনিটে এমিল মরিস এবং এরহার্ড হেইডেন মতো পুরানো স্টোসট্রাপ সদস্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৯][১০] ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসে এই ইউনিটটি প্রথম জনসমক্ষে আসে। একই বছর শুটজকোমান্ডো জাতীয় পর্যায়ে প্রসারিত হয়েছিল। এটি ধারাবাহিকভাবে স্টর্মস্টাফেল (স্টর্ম স্কোয়াড্রন) এবং তারপরে অবশেষে ১৯২৫ সালের ৯ নভেম্বর শুটজস্টাফেল সুরক্ষা স্কোয়াড্রনের নামকরণ করা হয়।[১১] শ্রেক এসএস সদস্য হন #৫।[১২] হিটলার তাঁকে দেহরক্ষী সংস্থাটির নেতৃত্ব দিতে বলেছিলেন। শ্রেক কখনও নিজেকে রেইচসফুহরার-এসএস হিসাবে উল্লেখ করেননি তবে পরবর্তী বছরগুলিতে এই উপাধিটি পূর্ববর্তীভাবে তাঁর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছিল।[১৩]

১৯২৬ সালে শ্রেক এসএস-এর কমান্ডার পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং বার্চটোল্ড নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।[১৪] বার্চটোল্ড অফিসের অবস্থানের শিরোনাম পরিবর্তন করেন, যা রেইচসফুহরার-এসএস নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।[১৫] শ্রেক এসএস-ফুহরার হিসাবে এসএস রোলগুলিতে থেকে যান এবং ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত মরিসের পরে হিটলারের ব্যক্তিগত শোফার হিসাবে কাজ করেন।[১৬] ১৯৩০ সালে হেইনরিচ হিমলারের অধীনে এসএস-এর সম্প্রসারণ শুরু হওয়ার পর, শ্রেককে এসএস-স্ট্যান্ডার্টেনফুহরার নিযুক্ত করা হয়, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা খুব কম ছিল। তিনি হিটলারের পক্ষে কাজ চালিয়ে যান এবং তাদের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল।[১৬]

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৩৬ সাল পর্যন্ত হিটলারের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক হিসেবে শ্রেক দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।[১৪] সেই বছর বসন্তকালে শ্রেকের মেনিনজাইটিস হয় এবং ১৬ই মে মিউনিখে তিনি মারা যান।[১৬] তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন এবং শ্রেকের মৃত্যুর সময় হিটলার বিচলিত হয়েছিলেন।[১৬] তাঁর চূড়ান্ত পদমর্যাদা ছিল এসএস-ব্রিগেডফুহরার যা ওয়েহরমাচ একজন জেনারেল মেজর সমতুল্য পদমর্যাদা।[১৭] শ্রেককে নাৎসি রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেওয়া হয়েছিল। হিমলার তাকে "অ্যাডলফ হিটলারের প্রথম এসএস ম্যান" হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।[১৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

  1. Hamilton 1984, পৃ. 172, 173।
  2. Hamilton 1984, পৃ. 172।
  3. McNab 2009, পৃ. 14, 16।
  4. Weale 2010, পৃ. 16।
  5. McNab 2009, পৃ. 14।
  6. McNab 2009, পৃ. 16।
  7. Wegner 1990, পৃ. 62।
  8. Weale 2010, পৃ. 26।
  9. Weale 2010, পৃ. 16, 26।
  10. McNab 2009, পৃ. 10, 11।
  11. Weale 2010, পৃ. 26, 27, 29।
  12. Hoffmann 2000, পৃ. 8।
  13. McNab 2009, পৃ. 16, 17।
  14. Felton 2014, পৃ. 8।
  15. Weale 2010, পৃ. 30।
  16. Hamilton 1984, পৃ. 173।
  17. Hoffmann 2000, পৃ. 330।
  18. Hoffmann 2000, পৃ. 16।

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  • জুলিয়াস শ্রেক সম্পর্কে সংবাদপত্রের ক্লিপিংএর মধ্যে বিংশ শতাব্দীর প্রেস আর্কাইভসএর মধ্যেজেডবিডব্লিউ