জাফরাবাদ রাজ্য[তথ্যসূত্র প্রয়োজন], ছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অবস্থিত একটি করদ দেশীয় রাজ্য, যা বর্তমানে ভারতের অন্তর্গত৷ ব্রিটিশ ভারতে এটি বোম্বে প্রেসিডেন্সির পশ্চিম ভারত রাজ্য এজেন্সির কাথিয়াবাড় এজেন্সিতে অবস্থিত রাজ্যগুলির মধ্যে একটি ছিলো। এটি কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের গুজরাত উপকূল বরাবর অবস্থিত ছিলো৷

জাফরাবাদ রাজ্য
જાફરાબાદ
দেশীয় রাজ্য
(জাঞ্জিরা রাজ্যের সঙ্গে ১৭৫৯ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত)
আ. ১৬৫০–১৯৪৮
পতাকা

সৌরাষ্ট্রে জাফরাবাদ রাজ্যের অবস্থান
আয়তন 
• ১৯০১
৬৮ বর্গকিলোমিটার (২৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা 
• ১৯০১
১২,০৯৭
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠিত
আ. ১৬৫০
১৯৪৮
উত্তরসূরী
ভারত
বর্তমানে যার অংশগুজরাত, ভারত

জাফরাবাদ ছিলো জাঞ্জিরার নবাবের অধীন,[] যা কোঙ্কণ উপকূলের ৩২০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত৷ নিজস্ব পারিবারিক কারণে জাফরাবাদ ও জাঞ্জিরা রাজ্যদুটি একত্রিত করা হয়েছিলো৷

আমেদাবাদ শহর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও বরোদা শহর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত জাফরাবাদ শহরটিই এই রাজ্যের রাজধানী ছিলো৷ রাজ্যটিতে ছিলো একটি শহর ও রাজাবাস এবং ১১ টি গ্রাম৷ পরবর্তীকালে রণাই নদীর দুই দিকে দুটি জেলাও গঠন করা হয়৷ রাজ্যটি ৬৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ছিলো এবং ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এটির জনসংখ্যা ছিলো ৪৭৪৬ জন, ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে যা বেড়ে ৬০৩৮ জন হয়৷ রাজ্যের অধিকাংশ প্রায় ৮০ শতাংশই ছিলেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী ও বাকীরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন৷ রাজ্য ও রাজধানীর নামটি এসেছে গুজরাতের সুলতান মজঃফর জাফরের নামানুসারে৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে জাফরাবাদ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর তারিখে ব্রিটিশ কোম্পানির সাথে আত্মরক্ষামূলক ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে সম্প্রীতি চুক্তি সম্পন্ন হয়৷ ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে জাঞ্জিরা রাজ্যের সঙ্গে জাফরাবাদ প্রশাসনিকভাবে একীভূত হয়৷ ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে জাফরাবাদরাজ্য ব্রিটিশ করদ রাজ্যে পরিণত হয়৷[]

১৭৩১ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে গুজরাতে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারিত হয়ে এলে স্থানীয় থানেদাররা মুঘলদের সাথে সন্ধি করে শর্তাধীন স্বাধীনতা পায়৷ এরপরে থানেদাররা স্থানীয় কোলী অধিবাসী ও ক্রমাগত সুরাট থেকে আসা কোলীরা জলদস্যুদের ন্যায় আক্রমণ করা শুরু করে৷ জাঞ্জিরার রাজকুমার সিদি হিলাল ও তৎকালীন সুরাটের শাসক কোলীদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন ও তাদের নৌসেনাকে দমন করেন ও আটক করেন৷ রাজকুমার তাদের ওপর ভারী করের বোঝা চাপান৷[] জাফরাবাদের থানেদার সিদি হিলালের চাপানো এই কর দিতে অপারক হলে তিনি ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে তার কাছে জাফরাবাদ শহরটি বিক্রয় করে দেন৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সিদি হিলাল বুঝতে পারেন যে তার পক্ষে কাথিয়াবাড়ের জাফরাবাদ শহর টিকিয়ে রাখা সম্ভব না৷ এই লক্ষ্যে ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিকটবর্তী জাঞ্জিরা রাজ্যের শাসককে শহর হস্তান্তরিত করেন৷ জাফরাবাদের বলতে তিনি সুরাটের রাজকুমারকে বার্ষিক কর দিতেন৷

ব্রিটিশ শাসনকালে ব্রিটিশ করদ জাঞ্জিরা ও জাফরাবাদকে দ্বিতীয় শ্রেণীর দেশীয় রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয় তবে পরবর্তীকালে এটিকে কাথিয়াবাড়ের প্রথম শ্রেণীর রাজ্যের সারিতে উত্তীর্ণ করা হয়৷ ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে রাজ্যের শাসকগণ ১২৩ জনবল সংবলিত সেনা ধারণের অনুমতি পায়৷

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর জাফরাবাদ রাজ্যের শেষ শাসক ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে একীভূতকরণের দলিল স্বাক্ষর করলে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ই মার্চ তারিখে রাজ্যটিকে ভারতের বম্বে রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷[] ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বোম্বে রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হয়ে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত প্রদেশ গঠন করলে পূর্বতন এই দেশীয় রাজ্যটি গুজরাত প্রদেশের অংশীভূত হয়।

শাসকবর্গ

সম্পাদনা

জাফরাবাদ দেশীয় রাজ্যের শাসকগণ প্রাথমিকভাবে উজির ও ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে নবাব উপাধিতে ভূষিত হন৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

থানাদার

সম্পাদনা
  • আ.১৬৫৮ – ১৬..: ফাথ খান
  • ১৬.. – ১৬৭৮: সম্ভোল ইয়াকুত খান
  • ১৬৭৮ – ১৭৩৪: কাশিম ইয়াকুত খান
  • ১৭৩৪ – ১৭৫৯: সুরুর খান
  • ১৬৭৬ – ১৭০৩: দ্বিতীয় কাশিম ইয়াকুত খান
  • ১৭০৩ – ১৭০৭: দ্বিতীয় আমাবত ইয়াকুত খান
  • ১৭০৭ – ১৭৩২: দ্বিতীয় সুরুর ইয়াকুত খান
  • ১৭৩২ – ১৭৩৪: হাসান খান (প্রথমবার)
  • ১৭৩৪ – ১৭৩৭: সুম্বুল খান
  • ১৭৩৭ – ১৭৪০: আব্দাল রহমান খান
  • ১৭৪০ – ১৭৪৫: হাসান খান (দ্বিতীয়বার)
  • ১৭৪৫ – ১৭৫৭: প্রথম ইব্রাহিম খিন (প্রথমবার)
  • ১৭৫৭: প্রথম মহম্মদ খান
  • ১৭৫৭ – ১৭৫৯: প্রথম ইব্রাহিম খান (দ্বিতীয়বার)

জাফরাবাদের থানাদার ও জাঞ্জিরার উজির

সম্পাদনা
  • ১৭৫৯ – ১৭৬১: প্রথম ইব্রাহিম খান
  • ১৭৬১ – ১৭৭২: ইয়াকুত খান
  • ১৭৭২ – ১৭৮৪: আব্দাল রহিম খান
  • ১৭৮৪ – ১৭৮৯: জওহার খান
    • – বিতর্কিত –
      • ১৭৮৪ – ১৭৮৯: আব্দাল করিম ইয়াকুত খান
  • ১৭৮৯ – ১৭৯৪: দ্বিতীয় ইব্রাহিম খান
  • ১৭৯৪ – ১৮০৩: জামরুদ খান
  • ১৮০৩ – ১৮২৬: দ্বিতীয় ইব্রাহিম খান
  • ১৮২৬ – ৩১ আগস্ট ১৮৪৮: প্রথম মহম্মদ খান
  • ৩১ আগস্ট ১৮৪৮ – ২৮ জানুয়ারি ১৮৭৯: তৃতীয় ইব্রাহিম খান
  • ২৮ জানুয়ারি ১৮৭৯ – ২ মে ১৯২২: আহমদ খান (১ জানুয়ারি ১৮৯৫ থেকে স্যার আহমদ খান)
  • ২৮ জানুয়ারি ১৮৭৯ – ১১ অক্টোবর ১৮৮৩: .... – রাজ প্রতিনিধি
  • ২ মে ১৯২২ – ১৫ আগস্ট ১৯৪৭: দ্বিতীয় মহম্মদ খান
  • ২ মে ১৯২২ – ৯ নভেম্বর ১৯৩৩: কুলসুম বেগম (স্ত্রী) – রাজ প্রতিনিধি

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Jafarabad"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ15 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 125। 
  2. Princely States of India
  3. Robbins, Kenneth X.; McLeod, John (২০০৬)। African elites in India: Habshi Amarat। Mapin। পৃষ্ঠা 272 Pages। আইএসবিএন 1890206970 
  4. Great Britain India Office. The Imperial Gazetteer of India. Oxford: Clarendon Press, 1908