জব্বারের বলীখেলা
জব্বারের বলীখেলা এক বিশেষ ধরনের কুস্তি খেলা, যা চট্টগ্রামের এর লালদিঘী ময়দানে প্রতিবছরের ১২ই বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয়।[১] এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদেরকে বলা হয় বলী। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তি বলীখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন।[২] তার মৃত্যুর পর এই প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। জব্বারের বলীখেলা একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যমন্ডিত প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘী ময়দানের আশে পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। এটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে বৃহৎ বৈশাখী মেলা।
লক্ষ্য | প্রতিপক্ষকে আঘাত |
---|---|
কঠোরতা | পূর্ণ সংস্পর্শ |
উৎপত্তির দেশ | বাংলাদেশ |
বিখ্যাত অনুশীলনকারী | দিদারুল আলম, মর্মর সিং |
মূল | ঐতিহাসিক |
অলিম্পিক খেলা | না |
ইতিহাস
সম্পাদনাবাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এই দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়।[৩] বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামী-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।
মল্ল পরিবার ও বলীখেলা
সম্পাদনাচট্টগ্রাম বলির দেশ। কর্ণফুলী ও শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী স্থানের উনিশটি গ্রামে মল্ল উপাধিধারী মানুষের বসবাস ছিল। প্রচণ্ড দৈহিক শক্তির অধিকারী মল্লরা সুঠামদেহী সাহসী পুরুষ এবং তাদের বংশানুক্রমিক পেশা হচ্ছে শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন। এই মল্লবীরেরাই ছিলেন বলিখেলার প্রধান আকর্ষণ ও বলিখেলা আয়োজনের মূল প্রেরণা।[৪] চট্টগ্রামের বাইশটি মল্ল পরিবার ইতিহাস প্রসিদ্ধ। আশিয়া গ্রামের আমান শাহ মল্ল, চাতরি গ্রামের চিকন মল্ল, কাতারিয়া গ্রামের চান্দ মল্ল, জিরি গ্রামের ঈদ মল্ল ও নওয়াব মল্ল, পারি গ্রামের হরি মল্ল, পেরলা গ্রামের নানু মল্ল, পটিয়ার হিলাল মল্ল ও গোরাহিত মল্ল, হাইদগাঁওর অলি মল্ল ও মোজাহিদ মল্ল, শোভনদন্ডীর তোরপাচ মল্ল, কাঞ্চননগরের আদম মল্ল, ঈশ্বরখাইনের গনি মল্ল, সৈয়দপুরের কাসিম মল্ল, পোপাদিয়ার যুগী মল্ল, খিতাপচরের খিতাপ মল্ল, ইমামচরের ইমাম মল্ল, নাইখাইনের বোতাত মল্ল, মাহাতার এয়াছিন মল্ল, হুলাইনের হিম মল্ল, গৈরলার চুয়ান মল্ল।[৫]
বর্তমানে
সম্পাদনাএখন পেশাদার বলির (কুস্তিগির) অভাবে বলিখেলার তেমন আকর্ষণ না থাকলেও জব্বারের বলীখেলার মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে মেলা। তাই অনেকে বলীখেলার পরিবর্তে একে বৈশাখী মেলা হিসেবেই চিনে। জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করা হয়। খেলাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের আনুষ্ঠানিক মেলা বসার কথা থাকলেও কার্যত পাঁচ-ছয় দিনের মেলা বসে লালদীঘির ময়দানের চারপাশের এলাকা ঘিরে।
জব্বারের বলী খেলার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থানে যেমন কক্সবাজারে ডিসি সাহেবের বলী খেলা, সাতকানিয়ায় মক্কার বলি খেলা, আনোয়ারায় সরকারের বলী খেলা, রাউজানে দোস্ত মোহাম্মদের বলী খেলা, হাটহাজারীতে চুরখাঁর বলী খেলা, চান্দগাঁওতে মৌলভীর বলী খেলা এখনও কোনরকমে বিদ্যমান।
সম্প্রচার
সম্পাদনাবর্তমানে জব্বারের বলী খেলা বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল "চ্যানেল আই"তে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।
চ্যাম্পিয়ন
সম্পাদনা- ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ১২ ই বৈশাখ(২০২২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল) জব্বারের বলী খেলার ১১৩ তম আসর ঐতিহাসিক লালদিঘীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এবং এ আসরের চ্যাম্পিয়ন হয় চকরিয়া উপজেলার তরিকুল ইসলাম জীবন।[৬]
- ১১৪তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা শাহজালাল বলী।[৭]
- ১১৫তম আসরে সমঝোতার ভিত্তিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাঘা শরীফ বলী। তিনি মো. রাশেদ বলিকে পরাজিত করেন। বাঘা শরীফের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার জেলা হোমনা থানা মনিপুর গ্রাম। ১১৪তম আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলী এবারের খেলায় অংশ নেননি।[৮]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলাদেশের খেলাধুলা, রশীদ হায়দার, বাংলা একাডেমী
- ↑ জব্বারের বলীতে নতুন চ্যাম্পিয়ন অলি [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ বিডি প্রতিদিন
- ↑ বন্দর শহর চট্টগ্রাম, আবদুল হক চৌধুরী পৃঃ ২৪৪
- ↑ "জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন জীবন"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০২২।
- ↑ চট্টগ্রাম, নিজস্ব প্রতিবেদক। "জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শাহজালাল বলী"। www.prothomalo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-২৫।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২৪-০৪-২৫)। "জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ"। দ্য ডেইলি স্টার Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৫।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |