চীন–ভানুয়াটু সম্পর্ক

চীন–ভানুয়াটু সম্পর্ক হল গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (পিআরসি) এবং প্রজাতন্ত্রী ভানুয়াটু রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। ১৯৮২ সালের ২৬শে মার্চ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৮৯ সালে ভানুয়াটুতে চীন দূতাবাস স্থাপন করে, আর ভানুয়াটু চীনে একটু অনারারি কনস্যুলেট অফিস চালু করে ১৯৯৯ সালে। কনস্যুলেটটি ২০০৫ সালে দূতাবাসে উন্নীত করা হয়।[১] ভানুয়াটুতে নিয়োজিত চীনের রাষ্ট্রদূত হলেন চেং সুপিং[২] চীনে নিয়োজিত ভানুয়াটুর বর্তমান রাষ্ট্রদূত হলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী উইলি জিমি[৩]

সাইনো—ভানুয়াটু সম্পর্ক
মানচিত্র China এবং Vanuatu অবস্থান নির্দেশ করছে

চীন

ভানুয়াতু

চীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মনে করে যে ভানুয়াটু এবং চীন "[দুই দেশের] মানুষ এবং জাতির বৃহত্তর কল্যাণের জন্য, এবং বন্ধুত্ব দৃঢ় করার জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতামূলক উদ্যম" চালু আছে। এবং চীন এবং ভানুয়াটু "অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, পর্যটন, খেলাধুলা ও অন্যান্য খাতে স্নিগ্ধ সম্পর্ক বিরাজ করছে।"[১]

ভানুয়াটু সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মনে করে যে "পারস্পরিক বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং অকৃত্রিম সহযোগিতার ভিত্তিতে চীন এবং ভানুয়াটু স্পন্দনশীল এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক" চালু রেখেছে, সেইসাথে "চীনের সাথে ভানুয়াটুর সম্পর্ক এবং ওয়ান চায়না পলিসির প্রতি অটুট বিশ্বাস হল ভানুয়াটুর বৈদেশিক নীতির মৌলিক ভিত্তি।[৪]

২০০৯ সালের চীনে নিয়োজিত ভানুয়াটুর রাষ্ট্রদূত উইলি জিমি বলেন, "পোর্ট ভিলার মাধ্যমে আটলান্টিকে সুদৃঢ় পদক্ষেপ স্থাপন করতে যাচ্ছে চীন", যাকে ভানুয়াটু ডেইলি পোস্ট নিঃসন্দেহে "অন্যান্য বৈদেশিক কূটনৈতিক-সহযোগীদের মধ্যে চীনের এ পদক্ষেপ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।"[৫]

সম্পর্ক সম্পাদনা

প্রজাতন্ত্রী চীন তথা তাইওয়ান এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জন্য ওশেনিয়া সর্বদাই একটি কূটনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্র। ওশেনিয়ার আটটি রাষ্ট্র পিআরসিকে, আর ছয়টি রাষ্ট্র আরওসিকে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। আটলান্টিক তীরবর্তী রাষ্ট্রসমূহ তাদের বৈদেশিক নীতিতে পরিবর্তন আনা মাত্র এই নম্বরে কিছুটা তারতম্য আসে, এবং কূটনৈতিক স্বীকৃতি বেইজিং থেকে তাইপেইতে চলে আসে। ওয়ান চায়না পলিসি অনুযায়ী কোনো রাষ্ট্রই দুই চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে না। আর এর ফলে আটলান্টিকের ছোট রাষ্ট্রসমূহও পিআরসি এবং আরওসি উভয় রাষ্ট্রের জন্য কূটনৈতিক প্রতিযোগিতার ময়দান।[৬][৭] ২০০৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ফোরামের সাথে কূটনৈতিক বন্ধন সুদৃঢ় করার ঘোষণা দেয়। একই সাথে সংস্থাটিকে দেওয়া অর্থনৈতিক সহায়তামূলক কার্যক্রম জোরালো করার কথাও বলেন। একই সাথে পিআরসির প্রতিনিধি ঝউ হোয়েনঝং বলেন, "পিআইএফের উচিত তাইওয়ানের সাথে যেকোনো প্রকার চুক্তি থেকে বিরত থাকে, তা হতে পারে আনুষ্ঠানিক চুক্তি বা মৌখিক।"[৮] ২০০৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবো ঘোষণা করেন, যে পিয়ারসি আটলান্টিক দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের সাথে তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে। পিআরসি আরো অর্থনৈতিক সাহায্য দেবে, আটলান্টিকের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের জন্য শুল্প প্রত্যাহার করে নেবে, ঐ সকল রাষ্ট্রসমূহের বার্ষিক ঋণ দেবে, বিনামূল্যে ম্যালেরিয়া-বিরোধী ঔষধ দেবে এবং দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের দুই হাজার সরকারি কর্মকর্তা এবং প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।[৯] ২০০৬ সালে ওয়েনের মাধ্যমে প্রথমবারের মত কোনো চীনের প্রধানমন্ত্রী আটলান্টিক দ্বীপসমূহে সফরে যায়, যাকে তাইপেই টাইমস "চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক যুদ্ধ-ময়দান" হিসেবে অভিহিত করে। একইভাবে সাউথ প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রন ক্রোকম্বে বলেন, "আটলান্টিকে চীনের সফরসংখ্যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি"।[১০]

অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্পাদনা

২০০৬ সালে ভানুয়াটু পিআরসির সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে কৃত চুক্তিগুলো ছিল মূলত ভানুয়াটুর অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য, এবং একই সাথে ভানুয়াটির রপ্তানির উপর শুল্ক প্রত্যাহার করা। পিআরসি ভানুয়াটুকে চীনা পর্যটকদের ভ্রমণস্থল হিসেবে অনুমোদন দেয়। ভানুয়াটুর বাণিজ্যমন্ত্রী জেমস বুল বলেন যে তাঁর রাষ্ট্র "জৈব জ্বালানি উৎপাদনের জন্য কারখানা উৎপাদনের মেশিন সরবরাহের" জন্য চীনের সাহায্যের প্রয়োজন হবে।[১১]

২০০২ সালে রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.২৯৪ মিলিয়ন ইউরো, যার এক মিলিয়নেরও বেশি মূল্যের পণ্য চীন থেকে ভানুয়াটু আমদানি করে। সেইসাথে ২০০,০০০ ইউরোরও বেশি অর্থের পরিমাণ পণ্য ভানুয়াটু থেকে চীন আমদানি করে। ভানুয়াটু মূলত চীনা কাপড়, জুতা, টেক্সটাইল, ঔষধ, খাদ্যসামগ্রী এবং হালকা ধরনের শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে, পক্ষান্তরে চীন আমদানি করে বাটন ও বপন কাঠজাতীয় পণ্য, যা কীটপতঙ্গ ও ব্যাকটেরিয়া নিধনের জন্য ব্যবহৃত হয়।[১২]

ভানুয়াটু সরকার জানায় যে, "চীন ভানুয়াটুর অন্যতম প্রধান উন্নয়নমূলক সহযোগী হিসেবে স্বীকৃত।"[৪]

সংস্কৃতি ও শিক্ষাখাতে সম্পর্ক সম্পাদনা

২০১২ সালের জুলাই মাসে হেবেই অ্যাক্রোব্যাটিক ট্রুপ ভানুয়াটুতে অনুষ্ঠান করে। এর পূর্বে চীনা অ্যাক্রোব্যাটিক এবং ফোক অর্কেস্ট্রা দল আগের বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠান করেছিল।

২০০৫ সাল থেকে চাইনিজ সেন্ট্রাল টেলিভিশন ভানুয়াটুতে সম্প্রচারিত হচ্ছে। ২০০৭ সাল থেকে চাইনিজ রেডিও ইন্টারন্যাশনাল ভানিয়াটুর শ্রোতাদের জন্যও প্রাপ্য।[১৩]

১৯৯৫ সাল থেকে শিক্ষাখাতে চীন, ভানুয়াটুর শিক্ষার্থী, যারা চীনে পড়তে যেতে ইচ্ছুক, তাদেরকে বিশেষে কোটায় বৃত্তি দিয়ে থাকে। ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে নয়জন ভানুয়াটুর শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে দুইজন চীনাভাষী শিক্ষককে চীন থেকে ভানুয়াটুতে পাঠানো হয়।

তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক সম্পাদনা

১৯৮২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভানুয়াটু শুধুমাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকেই স্বীকৃতি দিত। ২০০৪ সালের নভেম্বরে ভানুয়াটুর প্রধানমন্ত্রী সার্জ ভোহর প্রজাতন্ত্রী চীনের (তাইওয়ান) সাথে সংক্ষিপ্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, এবং একই বছরে নো কনফিডেন্স ভোট পেয়ে তিনি ক্ষমতা থেকে বহিষ্কৃত হন।[১৪][১৫] ভানুয়াটু শুরু থেকেই পিআরসিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। তবে ভোহর ভানুয়াটু সরকারের উপর চীনের অতিরিক্ত প্রভাবের সমালোচক হিসেবেই পরিচিত।[১৪]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "China-Vanuatu Relations"PRC embassy in Vanuatu। ২০ জুন ২০০৮। 
  2. "PRC Ministry of Foreign Affairs" 
  3. "Minister confirms appointment"ডেইলি পোস্ট। ২২ মে ২০০৯। ২৩ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৬ 
  4. "Message from Minister for Foreign Affairs"। ৭ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৬ 
  5. "Chinese Club donate Vt1.4m supplies to landslide victims"ভানুয়াটু ডেইলি পোস্ট। ২৩ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "The Pacific Proxy: China vs Taiwan"এবিসি রেডিও অস্ট্রেলিয়া। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭। ৪ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৬ 
  7. Young, Audrey (অক্টোবর ১৯, ২০০৭)। "Chequebooks brought out at Pacific forum"দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২, ২০১১ 
  8. "China announces initiatives to expand ties with PIF member countries", PRC embassy in Papua New Guinea, November 24, 2003
  9. "China offers aid package to Pacific Islands", China Daily, April 5, 2006
  10. "Chinese Premier Wen to visit the Pacific Islands"তাইপেই টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ এপ্রিল ২০০৬। 
  11. "Vanuatu looks to China for markets"ভানুয়াটু ডেইলি। ১১ এপ্রিল ২০০৬। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৬ 
  12. "Vanuatu-China Relations"। ৭ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৬ 
  13. "Briefing of Relations between China and Vanuatu"। ২৫ জুলাই ২০০৮। newspaper=PRC Ministry of Foreign Affairs। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৬  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)[ ""], PRC Ministry of Foreign Affairs, July 25, 2008
  14. "Chinese influence corrupting government: opposition leader" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে, Vanuatu Daily, March 12, 2006
  15. "Vanuatu scraps deal with Taiwan", BBC, December 16, 2004

টেমপ্লেট:চীনের বৈদেশিক সম্পর্ক টেমপ্লেট:ভানুয়াটুর বৈদেশিক সম্পর্ক