চাঁদ মিয়া

বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা

চাঁদ মিয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২৯ অক্টোবর, ১৯৭৭) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

চাঁদ মিয়া
মৃত্যু২৯ অক্টোবর, ১৯৭০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

চাঁদ মিয়ার জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম ফজর আলী বেপারি এবং মায়ের নাম হাসেবান বিবি । তার স্ত্রীর নাম কাছমেরি খানম। তার পাঁচ ছেলে। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘বি’ (ব্রাভো) কোম্পানির সিনিয়র জেসিও (সুবেদার) ছিলেন চাঁদ মিয়া। ১৯৭১ সালের মার্চে তার কোম্পানির অবস্থান ছিল গাজীপুর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে। অধিনায়ক ছিলেন পাকিস্তানি (পাঞ্জাবি) এবং এখানে বাঙালি কোনো সেনা কর্মকর্তা কোম্পানিতে ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি সাহসী এক ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে ব্রাভো কোম্পানির বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। তাঁদের বিদ্রোহের খবরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য কোম্পানির সদস্যরাও অনুপ্রাণিত হন। চাঁদ মিয়া সমরাস্ত্র কারখানার অস্ত্রাগারের প্রধান দরজা বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে সেখানে রক্ষিত অস্ত্রশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ছাত্র-জনতার মধ্যে বিতরণ করেন। স্বাধীনতার পর চাঁদ মিয়া ১৯৭৭ সালে ২২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার মেজর হিসেবে বগুড়া সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর আখাউড়ায় সারা দিন ধরে তুমুল যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে চাঁদ মিয়ার কোম্পানির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। চাঁদ মিয়া তখন তার একদম কাছেই ছিলেন। এরপর যুদ্ধের নেতৃত্ব এসে পড়ে তার ওপর। কিছুক্ষণ পর চাঁদ মিয়াও গোলার স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন। তুমুল গোলাগুলিতে গোটা এলাকা তখন প্রকম্পিত। সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ মোকাবিলা করছেন চাঁদ মিয়া। এমন সময় তার চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হলেন তাঁদের অধিনায়ক। যুদ্ধে নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব তখন তার ওপর। সাহসিকতার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করতে থাকলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি নিজেও আহত হলেন। জ্ঞান থাকা অবধি নেতৃত্ব দিয়ে গেলেন।

পরে চাঁদ মিয়া তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ময়মনসিংহ হয়ে সমবেত হন তেলিয়াপাড়ায়। সেখান থেকে তাঁদের পাঠানো হয় রামগড়ে। সেখানে তিনি তার দল নিয়ে হাটহাজারী-নাজিরহাট-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধে অংশ নেন। পরে কিছুদিন ৩ নম্বর সেক্টরে এবং এরপর ‘এস’ ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৩-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩২৯। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ২৩০। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা সম্পাদনা

বহি:সংযোগ সম্পাদনা